আধার-ভোটার কার্ড এই দুই পরিচয়পত্র কি আদৌ ভারতীয় নাগরিক হওয়ার প্রমাণ?প্রশ্ন তুলে দিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ।
১৩ মাস ধরে পুলিশের জালে বর্ধমানের এক দম্পতি! জাল পাসপোর্ট থাকার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল ওই দম্পতিকে।
নকল পাসপোর্ট থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের ২ বাসিন্দা। তাদের নাম দুলাল শীল ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না শীলকে জাল পাসপোর্ট করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। জানা গিয়েছে, দুলাল বাবু পেশায় নাপিত। গত ১৩ মাস ধরে জেল বন্দি রয়েছেন দুজনে।
এরপর জামিনের আবেদন করেন দুলাল শীল এবং স্বপ্না শীল কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সোমবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ সব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে।
আরও পড়ুন – সানাইয়ের সুর বদলে গেল বিষাদে, বৌভাতের রাতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী যুবক
তাঁদের আইনজীবীর দাবি, ২০১০ সালে ওই দম্পতি বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে পূর্ব বর্ধমানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁদের ভারত সরকার প্রদত্ত আসল আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও রেশন কার্ড রয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়িও পেয়েছেন তারা। তারপরেও পুলিশ বিনা কারণে তাঁদের গত এক বছর এক মাস ধরে নকল পাসপোর্ট থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করে রেখেছে বলে অভিযোগ।
এরপর বিচারপতি দেবাংশু বসাক মামলাকারীর আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, ভারতে আসা সব বাংলাদেশীদের কাছেই ভারতীয় আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড আছে। আপনি ইনকাম ট্যাক্স দেন কিনা জানা নেই, কিন্তু ওই সমস্ত বাংলাদেশিরা সকলেই ইনকাম ট্যাক্স দেয়।
জাল পাসপোর্ট বানিয়ে ভারতে আসা বাংলাদেশীদের অনেকের কাছেই এইরকম আধার কার্ড, ভোটার কার্ড রয়েছে। দেখছেন না, আমেরিকাও তো অবৈধভাবে থাকার অভিযোগে আমাদের দেশের কতজনকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে! তাই, এতে কিছু প্রমাণ হয় না। বিচারপতি আরও বলেন, তাঁরা যে ভারতের প্রকৃত নাগরিক সেই প্রমাণপত্র বা সরকারি নথি নিয়ে আসুন, আমি জামিন দিয়ে দেব।
যদিও মামলাকারী দুলাল শীল ও স্বপ্না শীলের আইনজীবীদের দাবি, বৈধ নথি বা সরকারি নথি তাঁদের দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর মক্কেলরা বৈধভাবেই ভারতে রয়েছেন এবং ভারতের প্রকৃত নাগরিক তারা। কোনও জাল পাসপোর্ট তৈরি করেননি। তাঁদের মক্কেলরা কোনও ফরেন সিটিজেনশিপ অ্যাক্টের আওতায় পড়েন না।
আরও পড়ুন – জমির মালিককে না জানিয়েই জোর করে জমি থেকে বালি চুরি বালি মাফিয়াদের
২০১৯ সালে ভারত সরকারের জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ফরেন সিটিজেনশিপ রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের সেকশন-২ অনুযায়ী ৩১.১২.২০১৪ সালের আগে যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁরা কেউ ফরেন সিটিজেনশিপ অ্যাক্টের আওতায় পড়বে না। যুক্তি দেখিয়ে জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন অভিযুক্তদের আইনজীবী।বিচারপতি দেবাংশু বসাক তাঁদের কোনও যুক্তি শুনতে রাজি হননি।বর্ধমানের ওই দম্পতির জামিন খারিজ করে দেয় আদালত।