fbpx

করোনা মুক্তিতে জেলায় দরকার প্লাজমা ব্যাঙ্ক । তবে সচেতনতাটাও জরুরী

ডাঃ দেবব্রত রায় : সত্যি কথা বলতে কি করোণা সংক্রমণ বা কোভিড পরিস্থিতি এখন প্রায় সবারই গা সওয়া হয়ে গেছে। সেই কারণে নিয়ম-নীতির কঠোরতাও শিকেয় উঠেছে। আসলে কি প্রশাসন, কি সাধারণ মানুষ সবাই ক্লান্ত। এবং তার ছাপ পড়তে শুরু করেছে মানুষের শরীরের সঙ্গে মনেও।

অতিমারির এই পর্যায়ে টেস্ট, চিকিৎসা, কোভিড হাসপাতাল, অক্সিজেন, আইসিইউ, ভেন্টিলেশন, হোম আইসোলেশন, সেফ হোম – ইত্যাদি প্রসঙ্গ ছাড়িয়ে আরও একটি প্রসঙ্গ সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে । তা হ’ল সংকটজনক রোগীদের জন্য চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ‘প্লাজমা থেরাপি’ এর ব্যবহার। কিছুদিন আগে পর্যন্তও গবেষণার পর্যায়েই ছিল এই পদ্ধতি। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে
চিকিৎসার পদ্ধতি হিসেবে কিঞ্চিত সাফল্য মেলাতে এই নিয়ে ব্যাপক গবেষণা এবং ব্যবহারিক প্রয়োগের আশান্বিত হচ্ছেন চিকিৎসকরা। আমাদের রাজ্যেও মে মাসের শেষ দিকে এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে।

যা নিয়ে এত আলোচনা, গবেষনা, উত্তেজনা বোঝা দরকার যে সেই ‘প্লাজমা থেরাপি’ ব্যাপারটা ঠিক কি? মানুষের রক্তের দুটো অংশ । একটি এর ভেতরকার রক্তকণিকা ( লোহিত রক্ত কণিকা বা RBC, শ্বেত রক্ত কণিকা বা WBC, অনুচক্রিকা বা Platelets) ইত্যাদি । অন্য জলীয় অংশের মধ্যে এই কনিকা অংশগুলো ভেসে থাকে যাকে বলে প্লাজমা বা রক্ত রস। কোন মানুষ কোনো সংক্রমণ জনিত রোগে আক্রান্ত হলে তার শরীরে এমন রোগ সংক্রমণের কারণে কিছু অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। যা তাকে সেই রোগ সংক্রমনের হাত থেকে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা দেয়। কত দিন এবং কি পর্যায়ে এই নিরাপত্তা থাকবে সেটা অনেক আনুষঙ্গিক ফ্যাক্টর এর উপর নির্ভর করে। করোনা সংক্রমনের ক্ষেত্রেও এই পরম্পরা সত্যি। যদিও একবার জীবাণু মুক্ত হবার পর একাধিকবার সংক্রমনের ইতিহাস পাওয়া যাচ্ছে তবুও চিকিৎসকরা আশার আলো দেখাচ্ছেন নেই প্লাজমা থেরাপির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে।

এই অ্যান্টিবডিগুলো রক্তের এই জলীয় অংশ বা প্লাজমা বা রক্ত রসের মধ্যে ভেসে বেড়ায় এবং রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রত্যেকটি সংক্রমনের জন্য আলাদা আলাদা অ্যান্টিবডি তৈরি হয় আবার এক একটি সংক্রামক ভাইরাস জীবাণুর ভিন্ন ভিন্ন স্ট্রেইনের জন্য আলাদা আলাদা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। যেসব মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হয়েছেন তাঁদের প্লাজমায় করোনা প্রতিষেধক এন্টিবডি থাকে। প্লাজমা থেরাপিতে যেটা করা হয় তা হলো এই সুস্থ হয়ে যাওয়া রোগীদের রক্তের প্লাজমা অংশ আলাদা করে সেটিকে মরণাপন্ন কোভিদ 19 এর রোগীদের শরীরে শিরার মাধ্যমে ঢুকিয়ে দেয়া হয় যেমন ভাবে মানুষকে বাইরে থেকে রক্ত বা স্যালাইন দেওয়া হয়। ফলে যে মানুষটিকে প্লাজমা দেওয়া গেল তার রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করার শক্তি বাড়ে ফলে তারা সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়তে থাকে। তবে এই পদ্ধতিতে প্লাজমা দেবার আগে নানা রকমের পরীক্ষা করে নেওয়া হয় যাতে দাতা থেকে গ্রহীতার অন্য কোনো সংক্রমণ বা অন্য কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। তবে প্রাথমিকভাবে গ্রহীতা রক্তের গ্রুপ মেলা আবশ্যক এবং তাঁকে অবশ্যই নিশ্চিত রূপে করোনার সংক্রমণ মুক্ত হতে হবে এবং সুস্থ হওয়ার চার মাসের মধ্যে পাওয়া প্লাজমা সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হয়।

দেশ-বিদেশের নানা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্লাজমা থেরাপি একটি অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি হতে পারে । সেই কারণে এই অতিমারির সময় পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সংস্থা তে প্লাজমা থেরাপির ছাড়পত্র দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মে মাস থেকে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজে চালু হয়েছে এই পদ্ধতিতে রোগীর চিকিৎসা। পদ্ধতিটি জটিল এবং ব্যয়বহুল এবং স্বতন্ত্র পরিকাঠামো প্রয়োজন এবং সর্বোপরি এখনো অনেকটাই গবেষণার পর্যায় রয়েছে সেই কারণে ব্যাপক হারে এখনো চালু করা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে সঠিক সময়ে প্লাজমা
না পাওয়ার সমস্যা তো রয়েইছে । এ ব্যাপারে এগিয়ে আসা প্রয়োজন যাঁরা করোনা মুক্ত হয়েছেন তাঁদের। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আমাদের জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩৫০০ জন যার মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রায় ৩০০০ জন এবং দুর্ভাগ্যজনক হলেও মারা গেছেন ৩১ জন। সুস্থতার হার প্রায় ৮৩% ।

লিখেছেন : ডাঃ দেবব্রত রায়, চিকিৎসক, রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।

আমাদের জেলাতে ব্লাড ব্যাংক থাকলেও এখনও প্লাজমা ব্যাংকের পরিকাঠামো নেই ।পরিকাঠামো তৈরিতে প্রাথমিকভাবে প্রয়োজন ব্লাড কম্পোনেন্ট জেনারেটর ইউনিট। আশা করা যাচ্ছে খুব শিগগিরই পরিকাঠামো জেলাতে পাওয়া যাবে। কিন্তু এই মুহূর্তে যেটা প্রয়োজন তা হলো কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা মানুষদের প্লাজমা দানে উৎসাহিত করা। সঙ্গে সঙ্গে সর্ব স্তরের সচেতনতা তৈরি করা।খবরে প্রকাশ শিলিগুড়ির এক করোনা জয়ী দন্ত চিকিৎসক ইতিমধ্যেই রক্ত দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন নর্থবেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে।
কারণ অদূর ভবিষ্যতে এই পদ্ধতিই হয়তো জিয়নকাঠি হয়ে উঠবে।

Next Post

উদ্ধারণপুরের শ্মশানে জ্বলন্ত চিতায় দাঁড়িয়ে উঠলো বামুন ঠাকমা। পড়ুন "অবেলা কালবেলা"

Sun Oct 4 , 2020
Share on Facebook Tweet it Share on Reddit Pin it Share it Email শান্তনু চট্টোপাধ্যায় : সাল ১৯৮৯। মাঘ মাস। শীতের হিম হিম দুপুর গড়িয়ে ঝুপ করে সন্ধ্যাবেলা ডুব দিল মজুমদারপকুরের পাকুড়তলায়। সেখানে জমা ছিল সামান্য পাতার মতো কালো মেশানো হলুদ আলো। চক্রবর্তীদের ঠাকমা ঠিক তখনই শেষতক ডুব দিল গাঢ়ঘুমে। […]

আপনার পছন্দের সংবাদ

RCTV Sangbad

24/7 TV Channel

RCTV Sangbad is a regional Bengali language television channel owned by Raiganj Cable TV Private, Limited. It was launched on August 20, 2003, as a privatecompany. The channel runs a daily live broadcast from Raiganj, West Bengal. The company also provides a set-top box.

error: Content is protected !!