নিউজ ডেস্ক, ০২ অক্টোবর : শুক্রবার যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হল জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর ১৫২ তম জন্মজয়ন্তী। সারা দেশের সঙ্গে এদিন রায়গঞ্জের বিদ্রোহী মোড়ে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তিতে মাল্যদান মরে শ্রদ্ধা জানান রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাস সহ অন্যান্য কাউন্সিলররা।
মহাত্মা গান্ধীর আসল নাম মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী। গুজরাটের পোরবন্দরে ২ রা অক্টোবর ১৮৬৯ সালের তাঁর জন্ম। মহাত্মা গান্ধী বরাবরই ছিলেন অহিংসার পূজারি। ভারত মাতার সন্তান হলেও তাঁর অহিংসা, সত্যাগ্রহ এবং স্বরাজ দর্শনের জন্য গোটা বিশ্বের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে রয়েছেন এই মহান পুরুষ৷ ভারত সরকার তাঁকে ‘জাতির জনক’ খেতাব প্রদান করলেও বিশ্বের মানুষের কাছে তিনি পরিচিত ‘মহাত্মা’ এবং ‘বাপু’ এই দুই নামে। এদিন দেশজুড়ে গান্ধী জয়ন্তী পালন হলেও বিশ্বজুড়ে দিনটি পালিত হয় আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসেবে৷ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা গান্ধী অহিংসা, সত্যাগ্রহ এবং স্বরাজ – এই তিন নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর মহান দর্শন ও কর্মময় জীবন স্থান ও কালের সীমানা ছাড়িয়ে গোটা বিশ্বের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে অনবরত৷
জুনিয়র মার্টিন লুথার কিং, নেলসন ম্যান্ডেলা, দলাইলামা থেকে শুরু করে অং সান সু চি’র মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জাতির গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও অধিকার কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেছে গান্ধীর মহান দর্শন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ডিগ্রি লাভ করার পর তিনি ১৮৯১ সালের বম্বে অধুনা মুম্বাইয়ে ফিরে আসেন৷ সেখানে কিছুদিন ওকালতির কাজে যুক্ত ছিলেন গান্ধী৷ এর দু’বছর পর তিনি পাড়ি দেন দক্ষিণ আফ্রিকা যান৷ সেখানে অবস্থানকালে বর্ণবাদী আচরণ ও বৈষম্যের শিকার হন গান্ধী৷ এ ঘটনা তাঁকে সমাজ সচেতন, প্রতিবাদী এবং বর্ণবাদ বিরোধী কাজে সক্রিয় করে তোলে৷ দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসকারী ভারতীয়দের অধিকার আদায়ে নানা উদ্যোগ নেন এই মহান নেতা৷ সেখানে বসবাসরত প্রায় ৬০ হাজার ভারতীয়র জন্য প্রকাশ করেন ‘ইন্ডিয়ান ওপিনিওন’ নামের একটি পত্রিকা৷ ১৯১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারত ফিরে আসেন মহাত্মা গান্ধী৷ এরপর থেকে ভারতের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে নেতৃত্ব দেন এই সংগ্রামী নেতা ও গুরু৷ ১৯২১ সালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতৃত্ব গান্ধীর কাঁধে অর্পিত হয়৷ তিনি দলকে ঢেলে সাজান৷ এর কার্যক্রমকে গতিময় করে তোলেন৷ প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ জনতার নানা অধিকার ও স্বার্থ নিয়ে তাঁর অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে মানুষকে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে নেয়৷
১৯৩০ সালে গান্ধী ভারতীয়দের লবণ করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ৪০০ কিলোমিটার (২৪৮ মাইল) দীর্ঘ ডান্ডি লবণ কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দেন, যা ১৯৪২ সালে ইংরেজ শাসকদের প্রতি সরাসরি ভারত ছাড় আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে বেশ কয়েকবার দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতে কারাবরণ করেন। মহাদেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে৷ আর এই সবক্ষেত্রেই মহান নেতা গান্ধীর দূরদর্শী ও বিচক্ষণ কৌশল, নির্দেশনা ও সক্রিয় ভূমিকার মাধ্যমে ভারতবাসীর জীবনে যুক্ত হয় বিজয় আর মুক্তির স্বাদ৷ ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রার্থনা সভায় যোগ দেওয়ার জন্য হেঁটে যাওয়ার সময় নাথুরাম গডসের গুলিতে প্রাণ হারান মহাত্মা গান্ধী৷ তাঁর শেষ উক্তি ছিল ‘হে রাম’।