নিজস্ব সংবাদদাতা , ইটাহার , ১১ অক্টোবর : ইটাহার ব্লকের অন্তর্গত চূড়ামন রাজবাড়ীর দুর্গাপূজা প্রাচীনত্বের আবহে আজও উজ্জ্বল। তবে আধুনিক প্রজন্মের কেউ যদি এখানকার পূজা দেখতে আসেন তাহলে একটু হতাশ হবেন বৈকী। কারন রাজবাড়ির সেই জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ আজ কালের গর্ভে বিলীন। শুধু ভাঙাচোরা কয়েকটি ধ্বংসস্তুপ দেখে স্মৃতির সরণী বেয়ে কিছুটা পেছনের দিকে হাঁটলে অনুভব করতে পারবেন রাজ-রাজরার চোখ ধঁধানো বৈভব।
ষোড়শ শতকে এই আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশেই দুর্গাপূজার প্রচলন করেছিলেন রাজা জগৎবল্লভ রায় চৌধুরী। সুসময়ের দিনগুলিতে পুজোতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হতো রাজবাড়ীর পুজোমন্ডপে। আনন্দ উৎসবে মেতে উঠতেন আবাল, বৃদ্ধ-বণিতা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজার পাশাপাশি রাজত্বও আর নেই। রাজবাড়ীর বংশধরেরা জীবিকার সন্ধানে ছড়িয়ে রয়েছেন বিভিন্ন প্রান্তে আর পাঁচটা সাধারন মানুষের মতোই। কিন্তু পারিবারিক ঐতিহ্যের কারনে রাজরক্ত তো আর পালটায় নি। ফলে আগেকার মতো সামর্থ্য না থাকলেও পুরানো রীতি মেনেই দেবীর আরাধনা করে চলেছেন রাজপরিবারের বংশধরেরা। দেবীর আসল মন্দিরটি মহানন্দা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর গ্রামবাসীদের সহায়তায় গড়ে উঠেছে নতুন মন্দির। এই রাজবংশের পূজাকে কেন্দ্র করে আগে মহিষ বলি, যাত্রা পালা, সহ বিশাল মেলা বসতো। কিন্তু বর্তমানে বলিপ্রথা উঠে গিয়েছে। রায় চৌধুরীর বংশধর কৌশিক রায় চৌধুরী বলেন, বর্তমানে জমিদারি নেই তবে নিয়ম নিষ্ঠার সাথে পূজার আয়োজন করা হয়। আগেে ধূমধাম করে পূজার আয়োজন করা হত। যাত্রা পালা,মহিষ বলি সহ বিরাট মেলা বসত তবে এখন আর সেসব না থাকলেও দশমীতে ছোট আকারে মেলা বসে।
শিব মন্দিরের পাশে মুসলিম সম্পদায়ের কোন ব্যাক্তিকে দিয়ে পির বাবার নিশানা এখনো লাগানো হয়। জমিদারের বংশধরদের আত্বীয় স্বজন কর্মসূত্রে বাইরে থাকলেও পূজার সময়ে সকলে বাড়িতে গ্রামের বাসিন্দারা সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় । এবারো সেই মতো পূজার আয়োজন চলছে, তবে করোনা মোকাবিলায় হয়তো মেলা হবে না, আমরা সরকারী নিয়ম অনুযায়ী পূজার আয়োজন করে চলেছি। এলাকার বাসিন্দা শুভাশীষ সরকার ও বলেন ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি জমিদারি পূজা, তবে এখনও নিয়ম নিষ্টার সাথে আয়োজন করা হয়। এই পূজার ঐতিহ্য হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন কেননা এখনো সেই মুসলিম সম্পদায়ের কোন ব্যাক্তিকে দিয়ে দশমী দিন দুর্গা মন্দিরের পাশে শিব মন্দিরের ধারে পির বাবার নিশানা লাগানো হয় যা পূর্ব পুরুষদের আমল থেকে হয়ে আসছে।” এখনকার পুজোতে রাজবাড়ির জৌলুস না থাকলেও মনের আবেগে গ্রামবাসীরা এখনো বিশ্বাস করেন এটি রাজবাড়িরই পূজা।