রায়গঞ্জ শহরের তুলসীতলা এলাকার পার্বতোদেবী ফ্রি প্রাইমারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্রী প্রিয়াংশী দাস। গত সপ্তাহেই দিদিমনি স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষার ক্লাসপ ‘ ভালো স্পর্শ ও খারাপ স্পর্শ’ চ্যাপ্টারটি পড়িয়েছে। আর পাঁচটা বিষয়ের ক্লাসের মতোই সে মনযোগ দিয়ে পড়া শুনেছিলো।কিন্তু কিছু বিষয়ে তার খটকা থেকে যায়।বাড়িতে ফিরে মায়ের কাছে ওই চ্যাপ্টার কেন ওই বিষয়ের বইতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার কারন সে জানতে চায়।
রোগী কল্যান সমিতির নতুন দায়িত্বে কৃষ্ণ কল্যাণী
তার মা ওই চ্যাপ্টারের গুরুত্ব বিশদে বোঝানোর পরই সে সিদ্ধান্ত নেয় তার ক্লাসের সহপাঠীদেরকেও সে বিষয়টির গুরুত্ব অভিনয় করে বোঝাবে। মায়ের কাছে তালিম নিয়ে সে ক্লাসের সহপাঠীদের অভিনয় করে বিষয়টি বোঝায়।শিশুনিগ্রহ রুখতে খুদে পড়ুয়ার এই উদ্যোগকে কাজে লাগিয়ে স্কুল কতৃপক্ষও তাকে দিয়ে স্কুলের অন্যান্য ক্লাসগুলিতেও সচেতনতার কাজ শুরু করেছে।জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুদে পড়ুয়ার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তাকে এই ধরনের সচেতনতার প্রসারে রোল মডেল করার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে।
টোটো চালিয়ে ছকভাঙ্গা রুপকথা রচনা অষ্টাদশীর
এদিন রায়গঞ্জ শহরের পার্বতীদেবী ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে দেখা গেলো, দ্বিতীয় শ্রেনীর ওই ছাত্রী তার এক বান্ধবীকে সাথে নিয়ে চতুর্থ শ্রেণীর ঘরে পারফর্ম করার জন্য রেডি হচ্ছে।একটু পরেই তা শুরু হয়।ক্লাসে টিচারদের জন্য রাখা চেয়ার, টেবিল সরিয়ে ফাকা করে অস্থায়ী একটা স্টেজের মতো জায়গা করে দেওয়া হয়। সেখানেই দুই খুদে এসে দাঁড়ায়।প্রিয়াংশী দ্বিতীয় শ্রেনীর একটি মেয়ের ভূমিকা নেয়।তার বান্ধবী একজন পুরুষের ভূমিকা নেয়। ওই পুরুষ চরিত্র প্রথমে প্রিয়াংশীর মাথায় হাত দিয়ে আর্শীবাদের ভান করে।
ক্ষতির মুখে বিঘোরের বেগুনের ফলন
প্রিয়াংশী ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের উদ্দ্যেশ্যে বলে ‘ গুড টাচ’। এরপর সে গাল টিপে আদর করে।সেটাও ‘ গুড টাচ’ বলে অনুমোদন পায়।এরপর গলা থেকে শরীরের বুক,পেট, কোমড় – ইত্যাদি স্থানে আদর করার ভান হলে প্রিয়াংশী সেইগুলিকে ‘ ব্যাড টাচ’ বলে তৎক্ষনাৎ খারিজ করে দেয়।
প্রিয়াংশী জানায়, তারা আবার প্রথম থেকে পরপর অভিনয় করে দেখাবে।ক্লাসের বাকি ছাত্রছাত্রীদেরকে এবার বলতে হবে কোনটা ভালো আর কোনটাই বা খারাপ স্পর্শ। এভাবেই চলতে থাকে সচেতনতার বার্তা। এই ভাবেই প্রিয়াংশী এখন রোল মডেল হয়ে উঠেছে।
বিএসএফের রেইজিং ডে।নানা পরিকল্পনার কথা ঘোষণা
প্রিয়াংশীর মা গায়েত্রী মন্ডল বলেন, সাম্প্রতিককালে শিশু নির্যাতন নিয়ে চারদিকে যা শুনছি, সন্তান বিশেষ করে কন্যা সন্তানের জন্য চিন্তা আরও বেড়েছে।সেদিন মেয়ে স্কুল থেকে ফিরে ওই চ্যাপ্টার নিয়ে প্রশ্ন করে। তখন তাকে তার সাধ্যমতো অভিনয় করে বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন।তারপর সে বায়না করে যে বন্ধুদেরকেও সে শেখাবে।
স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী রীতি চৌহান বলে, প্রিয়াংশী তাদের গুড টাচ, ব্যাড টাচ নিয়ে অবগত করছে। তারা এখন বিষয়টা বুঝতে পেরেছে। এটা তাদের সিলেবাসেও রয়েছে।স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুপকান্তি ঘোষ বলেন, ১৪ই নভেম্বর শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে স্কুলে ওই ছাত্রী ও তার মা এই ব্যাপারে স্টেজে তাদের এই প্রোগ্রাম করে দেখায়।সেটা দেখেই তারা সিদ্ধান্ত নেই ওই ছাত্রীকে দিয়েই স্কুলের অন্যান্য ক্লাশের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও তারা এই সচেতনতার কাজ শুরু করবেন।
আদালত রায়ে জমি পেলেও বাধাদান মাফিয়াদের
সমাজকর্মী রিমা মুখার্জি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে গুড টাচ, ব্যাগ টাচ বিষয়টি শেখানো অত্যন্ত জরুরী। এটা সোশ্যাল স্কিল ডেভেলপমেন্টেট জায়গা। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয় বিভিন্ন সময়। সেক্ষেত্রে তাদের গুড টাচ, ব্যাড টাচ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিলে অনেকটা সুরক্ষা মিলবে।