কৃত্তিকা, এইবারে তোমাকে কেউ কলেজে পতাকা তুলতে ডাকছে না| এই ১৫ অগস্ট তাই তোমার কোন কাজ নেই| কিন্তু সবচেয়ে বড় কাজটা তুমি সেরে ফেলেছো| অন্তত আমি বিশ্বাস করি এই স্বাধীনতা দিবসে সবচেয়ে ভাল কাজ ওটাই| গুঞ্জন সাক্সেনা…কার্গিল গার্ল দেখে ফেলা| এবং তুমি নিশ্চয়ই মন দিয়ে সিনেমাটা দেখতে দেখতে গুঞ্জন সাক্সেনার বাবা, কর্নেল সাহেবের ওই সংলাপটা খেয়াল করেছো| গদ্দার এর উল্টো শব্দ টা যদি ইমানদার হয়, তাহলে নিজের কাজটা সবচেয়ে ভাল ভাবে করাটাই দেশপ্রেম| তার জন্য কোনো স্লোগান দিতে হবে না, কোনও বাড়তি হইচই এর দরকার নেই| শুধু নিজের কাজ টা মন দিয়ে, আন্তরিকতার সঙ্গে ভাল ভাবে করো|
তুমি তো আর পাইলট হতে চাও না, তুমি তো মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পড়ছো| ভবিষ্যতে হয়তো ভাইরোলজি বা ইমিউনোলজি নিয়ে পড়বে| তুমি যদি শুধু নিজের পড়াশোনায়, নিজের মাইক্রোবায়োলজির চর্চায় আন্তরিক হও, তাহলে তুমি কতটা দেশের কাজে আসতে পারো,সেটা হয়তো গত পাঁচ মাসের জীবন, পৃথিবী তোমায় শিখিয়ে দিয়ে গেছে| আর এই ১৫ অগস্ট, এই স্বাধীনতা দিবসে তো আমরা আসলে আজাদি চাইছি লকডাউন থেকে, এক অজানা শত্রুর বিষাক্ত আক্রমণ থেকে| তার জন্য নিজের কাজে যে নিষ্ঠা, আন্তরিকতা দরকার, সেটাই গুঞ্জন সাক্সেনার বায়োপিক আমাদের শেখায়|
ধন্যবাদ কৃত্তিকা, আমাকেও সিনেমা টা দেখতে বলার জন্য| সিনেমাটা দেখে আজ দুপুরে অনেকক্ষণ কাঁদলাম| তুমি নিশ্চয়ই এখনও এতটা সরল নেই যে ভাবছো, আমি কার্গিল যুদ্ধ সাংবাদিক হিসেবে কভার করেছিলাম বলে কেঁদেছি| না, কেঁদেছি কারণ আমি গুঞ্জন সাক্সেনার বাবার মতো ভাল বাবা হতে পারিনি বলে| পঙ্কজ ত্রিপাঠি যে চরিত্রটায় অভিনয় করেছেন, সেই কর্নেল সাহেবের মতো ভাল বাবা যদি আমি
হতে পারতাম গো!!! যদি নিজের জীবন থেকে যাবতীয় বাহুল্যকে ছেঁটে ফেলে, উচ্চকিত না হয়ে ওইরকম ভাল বাবা হতে পারতাম!! ইসস| অনেকদিন বাদে কাঁদলাম খুব, বুঝলে| তারপরে ভাবলাম নিশ্চয়ই কোনো একটা স্বাধীনতা দিবসে অত ভাল বাবা হতে পারব, মেয়ের পাশে দাঁড়াতে শিখব, মেয়ের উড়ানে ডানা জুড়ে দিতে শিখব|
কে গুঞ্জন সাক্সেনার বায়োপিক নিয়ে কি প্রতিবাদ করছে, ভেবো না কৃত্তিকা| মা দেশে থাকলে তোমায় একেবারে বুঝিয়ে দিত এটাই জেন্ডার পলিটিক্স, বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেয়েদের কিরকম প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়, সেটাকে আড়াল করে রাখার মরিয়া চেষ্টা| এটাই পুরুষতন্ত্র| যার থেকেও স্বাধীনতা চায় মেয়েরা| তুমি চোখ কান রাখা মেয়ে, তুমি নিশ্চয়ই জান মার্কিন মুলুকের নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কমলা হ্যারিসের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে কিরকম হইচই হচ্ছে| কমলা হ্যারিস কে যেসব কারণে সমালোচনা সহ্য করতে হচ্ছে, তারও কারণ আসলে গুঞ্জনের দিকে ধেয়ে আসা কটাক্ষগুলোর মতোই| একজন মহিলা বলে|
কমলা হ্যারিস হোন কিংবা গুঞ্জন সাক্সেনা, সাফল্যের পথটা কখনই কুসুমাস্তীর্ণ নয় মেয়েদের জন্য| সেটা নিশ্চয়ই তুমি এতদিনে বুঝে গেছ কৃত্তিকা| মা তোমাকে বারবার বুঝিয়েছে| কিন্তু গুঞ্জন সাক্সেনা বা কমলা হ্যারিস রা আমাদের নিজের জীবন দিয়ে শেখান, ময়দান ছাড়া যাবে না| আমি হয়তো তেমন ভাল বাবা হতে পারলাম না, কিন্তু তুমি কেন ভাল কন্যা হতে পারবে না, কৃত্তিকা??? শুধু গুঞ্জনের শেখানো পথে মনে রেখো পতাকা টা বুকে রাখলেও চলবে।
লিখেছেন : সুমন ভট্টাচার্য, (বিশিষ্ট সাংবাদিক,কলকাতা,)