নিউজ ডেস্ক , রায়গঞ্জ ১৬ সেপ্টেম্বর : বছরের অন্যান্য সময় আলমারী কিম্বা ধুলোমাখা তাকেই রাখা থাকে, কিন্তু মহালয়া আসলেই জরাজীর্ণ সেই রেডিও ই হয়ে ওঠে আমবাঙালীর পরম প্রিয়। বিশেষ করে প্রবীনদের। মহালয়ার আগে তাই কেউ ছোটেন রেডিও র যন্ত্রাংশ মেরামত করতে কেউ বা নতুন ব্যাটারী কিনতে। মহালয়ার সকালে ঘুম ভাঙা চোখে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে”আশ্বিনের শারদপ্রাতে” না শুনলে তৃপ্ত হয় না বাঙালীর আবেগ।
বর্তমান প্রজন্মের কাছে রেডিও আজ বিলুপ্ত প্রায়। তার বদলে ডিজিটাল এফ এম, পেনড্রাইভ, সিডি আর টিভিতেই মহালয়া শুনতে অভ্যস্ত সকলে। কিন্তু ব্যতিক্রমও আছে। বছরের অন্যান্য সময় আলমারীর ভেতর অনাদরে পড়ে থাকে যে রেডিও মহালয়ার আগে তার কদর বেড়ে যায় বহুগুন। আলমারী থেকে বের করে পরিষ্কার করে, যন্ত্রাংশ মেরামত করে আর নতুন ব্যাটারী লাগিয়ে শোনার যোগ্য করে তোলা হয় রেডিওকে। মহালয়ার পূণ্যলগ্নে ঘুম জড়ানো চোখে রেডিও র নব ঘোরালেই ভেসে আসে মহিষাসুরমর্দিনীর বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের সংস্কৃত স্ত্রোত্রপাঠ আর কালজয়ী আগমনী গান। এএক অদ্ভুদ আবেগ,আর এটাই তো বাঙালীর পরিচিত স্বত্বা। বিশেষ করে প্রবীনরা আজোও রেডিও ছাড়া মহালয়া শোনার কথা ভাবতেই পারেন না।
রায়গঞ্জের বাসিন্দা গোবিন্দ দও বলেন,,রেডিও তে প্রায় চল্লিশ বছর হয়ে গেলো মহালয়া শুনছি। যতই আধুনিক প্রযুক্তি আসুক না কেনো রেডিও তে মহালয়া শোনার আনন্দই আলাদা। ছোটোবেলার স্মৃতি এসে ভীড় করে মনে। তখন পরিবারের সকলে একসঙ্গে বসে মহালয়া শুনতাম। আজও সেই ঐতিহ্য মেনে রেডিও তেই মহালয়া শুনি।” রীনা দত্ত নামে এক গৃহবধূ বলেন,” মহালয়া শোনার জন্য রেডিও ঠিক করেছি। বাড়ির রেডিওটা শাশুড়ীর আমলের। রেডিও ছাড়া মহালয়া যেন প্রানহীন। বাড়িতে ছেলেমেয়েরা টিভিতে দেখে। আমি কিন্তু প্রতিবারই রেডিও তেই শুনি।”
এটাই বোধহয় বাঙালির নষ্টালজিয়া। স্মৃতির সরণী বেয়ে মহালয়ার ভোরে প্রতিবার এসে জারিত করে তোলে বাঙালীর আবেগ,পরম স্বত্বাকে। মহালয়ার বিশেষ মুহূর্তে রেডিওর মাধ্যমেই দেবী হয়ে ওঠেন দশপ্রহরনধারিনী।