নিজস্ব সংবাদদাতা , মানিকচক , ২৮ ডিসেম্বর : বাতিস্তম্ভ থাকলেও নেই আলো। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর কেটে গিয়েছে এক বছরেরও বেশি সময়। তবু এখনও আলোকহীন অবস্থায় উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম মালদার ‘ভূতনি সেতু’। বাতিস্তম্ভ বসেছে, নতুন আলোও লাগানো হয়েছে, কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। সন্ধ্যা হলেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবছে ব্রীজ। শীতের কুয়াশা আর সেতুতে আলোহীন হওয়ায় সন্ধার পর সেতুতে যাতায়াত কার্যত বন্ধ। এরফলে সমস্যায় পড়ছেন লক্ষাধিক মানুষ।
উল্লেখ্য, রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসতেই খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে মালদার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বৃহৎ দ্বীপ ভূতনিকে যুক্ত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় সেতু তৈরির। ভূতনিকে সদর মানিকচকের সঙ্গে যুক্ত করতে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফুলহার নদীর ওপর তৈরি হয় এই ভূতনি সেতু। মালদা সফরে এসে এই সেতুর ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ এই সেতুর দৈর্ঘ্য ১৭৯০ মিটার। সেতু তৈরিতে বরাদ্দ করা হয় ১৩২ কোটি টাকা। এই সেতুর মাধ্যমে মালদার মানিকচকের মথুরাপুরের সঙ্গে ভূতনি চরের সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ভূতনি চরে বসবাস করেন প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার মানুষ। ভূতনি চরে রয়েছে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত। উত্তর চণ্ডীপুর, দক্ষিন চণ্ডীপুর ও হিরানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। ভূতনি সেতু তৈরির ফলে উপকৃত হন মালদার মানিকচক ও ভূতনির প্রায় তিন লক্ষ মানুষ। কিন্তু সেতু চালুর হওয়ার এক বছর কেটে গেলেও এখনো আলোর ব্যবস্থা হয়নি। ফলে দিনে চলাচল হলেও সন্ধ্যার পর সেতু ব্যবহারে চরম সমস্যা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু হেঁটে পার হতে সময় লাগে প্রায় আধ ঘন্টা। রাতের অন্ধকারে যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ন। আবার শীতের মরশুমে ঘন কুয়াশায় রাতে গাড়ি চলাচলও কার্যতঃ বন্ধ। ফলে রাতে সেতুর সুবিধে থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা। জানা গিয়েছে, সেতুতে আলো জ্বললে বিদ্যুৎ বিল কে মেটাবে তা নিয়ে জেলা পরিষদ আর মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে টানা পোড়েন চলছে। আর এতেই থমকে গিয়েছে সেতুতে বিদ্যুৎ সংযোগ। অন্ধকারে ডুবে থাকা সেতুতে চলাচলে সমস্যা বাড়িয়েছে দুস্কৃতি তাণ্ডব। অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে সেতুতে মাঝে মধ্যেই মদ ও জুয়ার আসর বসছে। দুষ্কৃতীরা সেতুতে রাতের অন্ধকারে বসে থাকছে। এমনকি ছিনতাই এর ঘটনাও ঘটেছে। ভূতনি সেতুতে বিদ্যুৎ সংযোগ না হওয়া নিয়ে একযোগে সরব হয়েছে বিজেপি ও সিপিএম। ভূতনি সেতুতে ৯৮ টি বাতিস্তম্ভ রয়েছে। বাতিস্তম্ভে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আলোও লাগানো হয়েছে। কিন্তু চালু হয়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। আলোর ব্যবস্থা হলে তার বিল কে মেটাবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। এ বিষয়ে তৃনমূল পরিচালিত মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতি এবং মালদহ জেলা পরিষদের কর্তৃপক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কবিতা মণ্ডলের দাবি, পঞ্চায়েত সমিতিকে সেতুর বিদ্যুৎ খরচ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এত টাকা বহনের মতো নিজস্ব তহবিল পঞ্চায়েত সমিতির নেই। অর্থ বরাদ্দ করা নিয়ে স্থায়ী সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। অন্যদিকে, মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌড় চন্দ্র মন্ডল বলেন, ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে আলোর ব্যবস্থা করা হবে।