নিজস্ব সংবাদদাতা , মানিকচক , ২১ অক্টোবর : গঙ্গা নদীর ভাঙনে বার বার পুজোর স্থান পরিবর্তিত হয়েছে মানিকচকের দিয়ারা সর্বজনীন দুর্গা পুজার। কখনো আম বাগানে কখনো বা স্কুল চত্বরে আর কখনো চাষের জমিতে অস্থায়ীভাবে হয়ে আসছে দুর্গাপুজো। মথুরাপুরের নীলকুঠির জমিদার বাহাদুর সিংহ প্রতিষ্ঠিত এই পুজো বারবার গঙ্গার ভয়াল গ্রাসে ঐতিহ্য হারিয়েছে।
জানা যায়, প্রায় ১১৫ বছর আগে ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠা এই পুজোর। মানিকচকের দাল্লুটোলায় মায়ের বেদি করে পুজো সূচনা করেছিলেন মথুরাপুরের জমিদার বাহাদুর সিংহের পরিবার। প্রায় ৯০ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে সেখানে পুজো হয়েছিলো। একসময় বাহাদুর সিংহের পরিবার এই পুজোর থেকে সরে দাঁড়ায়। তখন থেকে গ্রামবাসীরাই পুজোর আয়োজন করে আসছে। নয়ের দশকের শুরু থেকে গঙ্গার ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহতা রূপ ধারন করে। ১৯৯৫ থেকে ভয়াবহ গঙ্গাভাঙ্গনে তলিয়ে যায় দাল্লুটোলার মা দশোভূজার মন্দির। ১৯৯৫ ফের গ্রামবাসীরা বেচুটোলায় মায়ের মন্দির স্থাপন করে পুজো শুরু করে। চার বছর পরে আবারও গঙ্গার গঙ্গার ভাঙনের কবলে পরে মন্দির। নতুন করে গ্রামবাসীরা মায়ের মন্দির স্থাপন করেন ডোমহাটে। পাঁচ বছর পর সেটিও ভাঙনে তলিয়ে যায়। এখনো পর্যন্ত সর্বশেষ মায়ের ঠিকানা জোতপাট্টা আমবাগানের স্থায়ী মন্দির। মন্দিরের আশেপাশে এখনো বন্যার জল। করোনা আবহে এবার অনাড়ম্বরভাবেই পুজো হচ্ছে। উল্লেখ্য বিগত তিন দশক ধরে মানিকচকে গ্রামের পর গ্রাম গঙ্গা ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে। মানুষের ভিটেবাড়ি, কৃষিজমি গঙ্গা গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। গঙ্গার রক্তচক্ষু থেকে বাদ যায়নি মা দশভূজার বেদীও। বারবার গঙ্গা গ্রাস করে নিয়েছে জগজ্জননী মায়ের মন্দির। ক্রমাগত ভাঙনে মায়ের ঠিকানা বারবার বদলেছে। তাই লোকে এই পুজোকে ভ্রাম্যমাণ দুর্গাপুজো বলেই জানত। গত বছর থেকেই মা সপরিবারে অধিষ্ঠিত হয়েছেন জোতপাট্টার আম বাগানে একটি স্থায়ী মন্দিরে। যদিও পুজো কমিটির নাম খাতায়-কলমে মানিকচক দিয়ারা সর্বজনীন দুর্গাপুজো। স্থান বদল এর সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে মায়ের মন্দিরের নামকরণ এবং ঠিকানা।
এখন অনেকে এই পুজো কে বলছেন জোতপাট্টা সর্বজনীন দুর্গাপুজো। মন্দিরের আশেপাশে এখনো বৃষ্টি -বন্যার জল। করোনা আবহে এবার অনাড়ম্বরভাবেই পুজো হচ্ছে। পুজো কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা উজ্জ্বল কর্মকার জানান, করোনা আবহে এবারের পুজোর বাজেট খুবই কম। কোভিড পরিস্থিতির জন্য চাঁদা তুলছি না আমরা। স্বল্প আয়োজনে পুজো সম্পন্ন হবে। এক চালায় পূজিতা হবেন মা। প্রতিবার মেলা অনুষ্ঠিত হয় এখানে। কিন্তু এবার কোভিডের কারণে কোন মেলার আয়োজন করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র নিয়মরীতি মেনেই পুজো সম্পন্ন হবে। এবারের পুজো কমিটির সভাপতি নূপেন মন্ডল, সম্পাদক মনোজ মণ্ডল। প্রায় ১১৫ বছর পুরাতন আমাদের পুজা। ১৯৯৫ থেকে ব্যাপক ভাঙ্গন হয়। এই ভাঙ্গনে তলিয়ে যায় দাল্লুটোলার মা দশোভূজার মন্দির। ১৯৯৫ সালে ফের গ্রামবাসীরা বেচুটোলায় মায়ের মন্দির স্থাপন করে পুজো শুরু করে। চার বছর পর আবার গঙ্গার ভাঙন। নতুন করে গ্রামবাসীরা মায়ের মন্দির স্থাপন করেন ডোমহাটে। পাঁচ বছর পর সেটিও ভাঙনে তলিয়ে যায়। এখনো পর্যন্ত সর্বশেষ মায়ের ঠিকানা জোতপাট্টা আমবাগানের স্থায়ী মন্দির। তবে এই স্থায়িত্ব কতদিন থাকবে জানি না। তবে আমরা সব সময় মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা করছি। দিনের পর দিন গঙ্গাভাঙন আরো প্রকট হচ্ছে। খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি আমরা।