নিজস্ব সংবাদদাতা , রতুয়া , ১৫ অক্টোবর : দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রতুয়া ১ নম্বর ব্লকের মহানন্দাটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ অংশ চলে গিয়েছে নদীগর্ভে। তবে এরই মধ্যে নদীর ওপারে জেগে উঠেছে চরও। এপারের জমি ওপারে চর হিসাবে জেগে ওঠায় আনন্দিত হয়েছিলেন রতুয়ার জমি মালিক এবং কৃষকরা। কিন্তু তাদের আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। জমি ফিরে পেলেও সে সমস্ত জায়গায় চাষ শুরূ করতে পারেননি তারা, মূলত দুটি কারণে।
প্রথমত, গ্রাম থেকে ৫-৬ কিলোমিটারের বেশি গঙ্গা পেরিয়ে তাদের সেই চরে যেতে হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত চরে যাতায়াতের জন্য সরকারি ফেরি ব্যবস্থা নেই। দ্বিতীয়ত, সেই চরে কার্যত সন্ত্রাস চালাচ্ছে ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতিরা। চাষাবাদ শুরূ করলেও কৃষকদের ফসল কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। কোনও নিরাপত্তা না থাকায় রতুয়ার কৃষকরা তাদের মোকাবিলা করতে পারছেন না। এসব নিয়ে সম্প্রতি তারা বিডিও এবং জেলা শাসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন। জেলা শাসকের নির্দেশে বুধবার ওই এলাকা পরিদর্শনে যান রতুয়া ১ নম্বর ব্লকের বিডিও। খুব দ্রুত প্রশাসনের পক্ষ থেকে চরে যাতায়াতের জন্য ফেরিঘাট চালু করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে রতুয়া ১ ব্লকের মহানন্দাটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রাম গঙ্গার ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। নদীর গ্রাসে চলে গিয়েছে কয়েক হাজার একর উর্বর কৃষিজমি। তবে এই সময়ের মধ্যে নদীর অন্য পাড়ে চর আকারে গজিয়ে উঠেছে তলিয়ে যাওয়া সেই সমস্ত জমি। ওই চরের নাম গদাই মহারাজপুর। গজিয়ে ওঠা চরে নিজেদের হারানো জমি ফিরে পেয়ে খুশির সীমানা ছিল না মহানন্দাটোলা, জঞ্জালিটোলা, শ্রীকান্তটোলা, জিতুটোলা, মুনিরামটোলা সহ বিভিন্ন গ্রামের কয়েকশো বাসিন্দাদের। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় অন্য জায়গায়। রতুয়ার স্থলভূমি থেকে ওই চরের দূরত্ব ৫-৬ কিলোমিটারেরও বেশি।
কিন্তু সেখান থেকে ঝাড়খণ্ডের দূরত্ব মাত্র ৫০০ মিটার। ফলে ওই চর রতুয়া ১ ব্লকের অন্তর্ভূক্ত হলেও তার দখল কার্যত নিয়ে নেয় ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতিরা ৷ ফলে এই জেলার কৃষকরা নিজেদের জমিতে ঠিকমতো চাষও করতে পারছেন না। মহানন্দাটোলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মনোজ মাহাতো, গোলাপ মণ্ডল, দীনেশ মণ্ডল, রামপ্রসাদ যাদবরা বলেন ; গঙ্গা জমি কেটে নেওয়ার দীর্ঘদিন পর আমরা চরে নিজেদের জমি ফেরত পেয়েছিলাম। কিন্তু সেই চর জেগে উঠেছে নদীর ওপারে। ওই চরে অন্তত তিন হাজার বিঘা উর্বর জমি রয়েছে। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে আমরা কেউ চরে চাষ করতে পারছি না। দুষ্কৃতীরা আমাদের চাষ করতে বাঁধা দিচ্ছে। ফসল কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা থাকলেও এবার তাদের দাপট অনেকটা বেড়ে গিয়েছে৷ তাছাড়াও এপার থেকে চরে পৌঁছোতে প্রচুর সময় লাগে। গঙ্গায় ফেরি নৌকার ব্যবস্থা নেই। এসব নিয়ে আমরা বিডিওকে জানিয়েছিলাম। জানানো হয়েছিল জেলা শাসককেও। শেষ পর্যন্ত প্রশাসন আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়েছে। বিডিও এলাকা পরিদর্শনে এসেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, খুব তাড়াতাড়ি সরকারি ফোরিঘাটের ব্যবস্থা করা হবে। চরে আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হবে। এরপর থেকে চরেই চাষাবাদ করতে পারব আমরা। এ প্রসঙ্গে রতুয়া ১ এর বিডিও সারওয়ার আলি বলেন, জেলা শাসকের নির্দেশে আমি ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। চরে এই রাজ্যের মানুষের কিছু কৃষিজমি রয়েছে। সেখানে বহিরাগত কিছু মানুষ কৃষকদের বাঁধা দিচ্ছে। ওই চরে যাওয়ার জন্য গঙ্গার ফেরি নৌকা চালু করার জন্য জেলাশাসক নির্দেশ দিয়েছেন। গোটা বিষয়টি মহকুমা শাসককে জানানো হয়েছে। এনিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পাওয়া গেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।