নিউজ ডেস্ক , শাশ্বতী চক্রবর্তী : সাধারণত পিতৃপক্ষ মানেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ দুর্গা পুজোর দিন গোনা শুরু। সাধারণত পিতৃপক্ষে ১৬ দিনের হয়। এই বছর পিতৃপক্ষ শুরু হয়েছে ১লা সেপ্টেম্বর এবং শেষ হবে ১৭ই সেপ্টেম্বর।
হিন্দুশাস্ত্র মতে মহালয়া পিতৃপক্ষের শেষ দিন এবং দেবীপক্ষ সূচনার আগের দিন। পিতৃপক্ষ পূর্বপূরুষের তর্পণাদির জন্য প্রশস্ত এক বিশেষ পক্ষ। আমাদের কাছে যা সাধারণত “মহালয়া” নামেই পরিচিত। এই পক্ষ পিত্রুপক্ষ, ষোলা শ্রাদ্ধ, কানাগাত, জিতিয়া, মহালয়া পক্ষ ও অপরপক্ষ নামেও পরিচিত।
সাধারণত মহালয়া ও দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর মধ্যে এক সপ্তাহের পার্থক্য থাকলেও এই বছর এক মাসের মধ্যে দুটো অমাবস্যা থাকায় মহালয়ার ৩৫ দিন পরে শুরু দুর্গাপুজো।
হিন্দুশাস্ত্র মতে, পিতৃপক্ষে যেহেতু প্রেতকর্ম, তর্পণ ইত্যাদি মৃত্যু-সংক্রান্ত আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়, তাই এই পক্ষ শুভকার্যের জন্য অনুকূল নয়। দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে গণেশ উৎসবের পরবর্তী পূর্ণিমা (ভাদ্রপূর্ণিমা) তিথিতে এই পক্ষ সূচিত হয় এবং সমাপ্ত হয় সর্বপিতৃ অমাবস্যা, মহালয়া অমাবস্যা বা মহালয়া দিবসে। উত্তর ভারত ও নেপালে ভাদ্রের পরিবর্তে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষকে পিতৃপক্ষ বলা হয়।
মহাভারত অনুযায়ী, দাতা কর্ণের মৃত্যু হলে তার আত্মা স্বর্গে গমন করে। সেখানে তাকে স্বর্ণ ও রত্ন খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়। কর্ণ ইন্দ্রকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে ইন্দ্র বলেন, কর্ণ যেতেতু সারাজীবন স্বর্ণই দান করেছেন,তিনি পিতৃগণের উদ্দেশ্যে কোনোদিন খাদ্য প্রদান করেননি। তাই স্বর্গে তাকে স্বর্ণই খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। প্রতিত্তোরে কর্ণ বলেন, তিনি যেহেতু তার পিতৃগণের সম্পর্কে জানতেন না, তাই তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে পিতৃগণকে স্বর্ণ প্রদান করেননি। এই কারণে কর্ণকে ষোলো দিনের জন্য মর্ত্যে গিয়ে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করার অনুমতি দেওয়া হয়। এই পক্ষই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হয়। এই কাহিনির কোনো কোনো পাঠান্তরে, ইন্দ্রের বদলে যমকে দেখা যায়।
এইসময় জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করেন। এই লোক স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। পিতৃলোকের শাসক মৃত্যুদেবতা যম। তিনিই সদ্যমৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। পরবর্তী প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে পূর্ববর্তী প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন এবং পরমাত্মায় লীন হন এবং এই প্রক্রিয়ায় তিনি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের ঊর্ধ্বে উঠে যান। এই কারণে, কেবলমাত্র জীবিত ব্যক্তির পূর্ববর্তী তিন প্রজন্মেরই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়ে থাকে। এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আরও পড়ুন – নাগর নদীতে নতুন অতিথির আগমন
পিতৃপক্ষে পুত্র কর্তৃক শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হিন্দুধর্মে অবশ্য করণীয় একটি অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের ফলেই মৃতের আত্মা স্বর্গে প্রবেশাধিকার পান। এই প্রসঙ্গে গরুড় পুরাণ গ্রন্থে বলা হয়েছে, “পুত্র বিনা মুক্তি নাই।”
ধর্মগ্রন্থে গৃহস্থদের দেব, ভূত ও অতিথিদের সঙ্গে পিতৃতর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মার্কণ্ডেয় পুরাণ গ্রন্থে বলা হয়েছে, “পিতৃগণ শ্রাদ্ধে তুষ্ট হলে স্বাস্থ্য, ধন, জ্ঞান ও দীর্ঘায়ু এবং পরিশেষে উত্তরপুরুষকে স্বর্গ ও মোক্ষ প্রদান করেন”।
মহালয়া পক্ষের পনেরোটি তিথির নাম হল প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, চতুর্দশী ও অমাবস্যা।
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, যে ব্যক্তি তর্পণে ইচ্ছুক হন, তাকে তার পিতার মৃত্যুর তিথিতে তর্পণ করতে হয়।
আরও পড়ুন – জেনে নিন সাইলেন্ট মোডে অন করা ফোন খুঁজে পাওয়ার কৌশল