নিউজ ডেস্ক, ০৭ নভেম্বর : উৎসবে অনুষ্ঠানে বাঙালী। সদ্য অতিক্রান্ত হয়েছে বাঙালীর সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। আর পুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই দোরগোড়ায় হাজির দীপাবলি। আর এই দীপাবলিতে সারা ভারত যখন ধনদেবী মহালক্ষ্মীর আরাধনায় সামিল হবে, বঙ্গদেশে দেখা যাবে কালীপুজোর আয়োজন। দেবী দক্ষিণাকালীর আরাধনায় সামিল হবে আপামর বাঙালী।
কিন্তু বঙ্গদেশে দক্ষিণাকালী আরাধনা শুরু হল কীভাবে? কীভাবেই বা এলো দেবীর এই মুর্তি? উত্তর খুঁজতে আমাদের যেতে হবে সপ্তদশ শতাব্দীর বঙ্গদেশে। নবদ্বীপের এক মহান তন্ত্র সাধক ছিলেন শ্রী কৃষ্ণানন্দ ভট্টাচার্য। তিনি তন্ত্রের “আগম” তন্ত্রে সিদ্ধিলাভ করেন এবং আগমবাগীশ উপাধি লাভ করেন। এই কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের সাধনার ফল বর্তমানে প্রচলিত দক্ষিণাকালী মূর্তি ও আরাধনা। কিন্তু কীভাবে এলো এই দক্ষিণাকালী মূর্তি? দেবীপুরাণ, কালিকাপুরাণে ও শ্রীশ্রী চণ্ডী তে দেবি কালীর যে রূপ বর্ণনা পাওয়া যায়, সেখানে দেবী উগ্রা, করালবদনা। তাঁর গাত্রবর্ণ অমাবস্যার নিশার থেকেও ঘন, নিকষ কালো। তাঁর এলোকেশ, লোল জিহ্বা, সারা গায়ে রক্ত, দেবী সদা রক্তপান করছেন। অথচ আজ বাঙালীর ঘরে ঘরে ও মন্দিরে যে দেবী কালীর বিগ্রহ আমরা দেখি, সেখানে তিনি স্নিগ্ধা, যেন ঘরের মেয়ে। তবে দেবীর এই মূর্তি উদ্ভাবনের কাহিনী বেশ অভিনব। ছড়িয়ে রয়েছে নানান কিংবদন্তী।
আগে দেবী কালীর পুজো গৃহে বা মন্দিরে প্রচলন ছিলো না। কেবলমাত্র তান্ত্রিক ও তন্ত্র সাধকেরা দেবীর “যন্ত্র” স্থাপন করে, তাতেই পুজো করতেন। শুধু তাই নয় তন্ত্রের নামে নানান অবিচারও শুরু হয়, যা মনে প্রাণে মেনে নিতে পারছিলেন না কৃষ্ণানন্দ। তিনি তাই দেবীর কাছে প্রার্থনা করলেন সাকার রূপে আবির্ভূত হওয়ার জন্য। দেবী স্বপ্নাদিষ্ট করলেন কৃষ্ণানন্দকে, রাত ভোর হতেই গঙ্গাস্নানের পর যে নারীমূর্তি প্রথম দেখবে তাই হবে দেবীর রূপ। দেবীর কথামত পরদিন ভোরে গঙ্গাস্নান করে কৃষ্ণানন্দ দেখলেন এক আদিবাসী গ্রাম্য রমনী। যার গাত্রবর্ণ কালো, আলুলায়িত কেশ, এক হাতে উচু করে কাদার তাল। পরপুরুষ কৃষ্ণানন্দ কে দেখে ওই মহিলা লজ্জায় জিভ কাটলেন। এই রূপ দেখেই কৃষ্ণানন্দ ধ্যানস্থ হলেন, এবং মানস চক্ষে সাক্ষাৎ দর্শন পেলেন পরমেশ্বরী দেবী দক্ষিণাকালীর। এরপর দীপান্বিতা অমাবস্যায় দেবীর মূর্তি তৈরি করে প্রচলন করলেন কালীপুজো। রচনা করলেন “বৃহৎ তন্ত্রসার” গ্রন্থের। কৃষ্ণানন্দের প্রতিষ্ঠিত দেবী মূর্তি ও পদ্ধতি মেনে আজও পুজো হয়ে আসছে বঙ্গদেশে। আমরা আজ যে কালীমুর্তি পুজো করি, তার রূপকার এই কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। পরবর্তীতে দেবীর পুজোর প্রচলন করেন তাঁরই সুযোগ্য শিষ্য সাধক রামপ্রসাদ। আজও নবদ্বীপে আগমেশ্বরী দেবী পূজিতা হয়ে আসছেন সমাদরে। দেবী কালিকা কে উগ্রা রূপ থেকে একেবারে ঘরের মেয়ে করে দেওয়ার রূপকারও