ডিজিটাল ডেস্ক: মঙ্গলবার দুপুরে আচমকা ভেঙে পড়ে এক পরিবার। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) এর স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদার (Rinku Majumdar)-এর একমাত্র ছেলে সৃঞ্জয় দাশগুপ্ত (Srinjoy Dasgupta)-র অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। নিউটাউনের সাপুরজি আবাসনের (Shapoorji Housing, New Town) নিজ ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় ২৭ বছর বয়সি ওই যুবকের নিথর দেহ। ডাকনামে পরিচিত ছিলেন ‘প্রীতম’ (Pritam) নামে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন সপ্তাহ আগে মা রিঙ্কু মজুমদার বিয়ে করে দিলীপ ঘোষকে এবং তার সঙ্গে সংসার শুরু করেন। সেই সময় থেকেই সৃঞ্জয় একাই থাকতেন নিউটাউনের ওই আবাসনে। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। তবে ব্যক্তিগত জীবনে একাধিক অভ্যাসগত সমস্যা ছিল বলেই ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি।
সূত্রের খবর, সৃঞ্জয় দীর্ঘদিন ধরেই মাদক ও ঘুমের ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। এমনকি মা রিঙ্কুর সঙ্গে এই বিষয় নিয়েও নাকি প্রায়শই অশান্তি হতো। রিঙ্কু বারবার ছেলেকে সুস্থ জীবনে ফেরাতে চেষ্টা করেছিলেন বলেই জানাচ্ছেন পরিচিতরা। কিন্তু পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরও জটিল হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুনঃ দিলীপ ঘোষ-পত্নী রিঙ্কু মজুমদারের একমাত্র ছেলের অকালমৃত্যু
তবে শোকের মুহূর্তে এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে একাধিক প্রশ্ন। কারণ বিয়ের সময় সৃঞ্জয় নিজেই সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন যে তিনি রিঙ্কু ও দিলীপ ঘোষের বিয়ে নিয়ে অত্যন্ত খুশি। বলেন, ছুটি নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা আগেই করা ছিল, হোটেল বুকিংও হয়ে গেছে, তাই বিয়েতে উপস্থিত থাকা সম্ভব হয়নি। তবুও মায়ের নতুন জীবনের প্রতি তাঁর কোনো বিরূপতা ছিল না।
মঙ্গলবার সকালে যখন তাঁকে সাপুরজি আবাসনের ফ্ল্যাটে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়, তখনই খবর দেওয়া হয় পরিবারকে। প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তবে সেখান থেকে তাঁকে ফিরিয়ে সরকারি হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে, যেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ সূত্রে প্রাথমিক অনুমান—অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধই প্রাণ কেড়ে নিয়েছে সৃঞ্জয়ের। তবে এটি নিছক আত্মহত্যা, নাকি নেশার অতিরিক্ত মাত্রার ফল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। এদিকে দেহ পাঠানো হয়েছে আরজি কর (RG Kar Hospital) হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য। তার রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ স্পষ্ট নয়।
এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত বক্তব্য প্রকাশ করেননি দিলীপ ঘোষ বা রিঙ্কু মজুমদার। শোকস্তব্ধ পরিবার এখন পুরোপুরি নীরব। তবে পুলিশের তরফে তদন্ত শুরু হয়েছে। সৃঞ্জয়ের ফোন ও ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাঁর সাম্প্রতিক বার্তালাপ ও অনলাইন অ্যাক্টিভিটি।
সব মিলিয়ে সৃঞ্জয়ের অকালমৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা রহস্য। আত্মহনন, নাকি শারীরিক অপ্রস্তুতির পরিণাম—তারই উত্তর খুঁজছে তদন্তকারীরা।