নিজস্ব সংবাদদাতা , কালিয়াগঞ্জ , ১৭ অক্টোবর : সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার দিকে তাকালে আজো দেশভাগের যন্ত্রনাময় হাজারো স্মৃতি এসে ভীড় করে কালিয়াগঞ্জ ব্লকের রাধিকাপুর গ্রামপঞ্চায়েতের সীমান্তবর্তী উদগ্রামের বাসিন্দাদের, বিশেষ করে পুজোর আগে। আকাশের গায়ে কালো মেঘদের হঠিয়ে যখন এসে ভীড় করে শরত মেঘের দল, কিম্বা মাঠেঘাটে কাশফুলেরা সলজ্জ চোখে উঁকিঝুঁকি দেয়,
তখন মায়ের আগমনী সুর এসে ভিজিয়ে দেয় গ্রামের বছর ভরের প্রতীক্ষারত মনটিকে। পুজোর চারদিন দূরদূরান্তের আত্মীয় স্বজনেরা এসে ভীড় করেন গ্রামে। গ্রামের কচিকাঁচার দল শরত মেঘকে হাতের মুঠোয় পুরে মনের আনন্দে ছুটে বেড়ায় কাশের বনে। জানা যায় অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার জমিদার জগদীশ চন্দ্র রায়বাহাদুর প্রায় পাঁচশো বছর আগে এই পুজোর সূচনা করেন। দেবীবোধনের সময় জমিদার বাড়িতে কামান ফাটানো হতো,সেই শব্দ শোনার পর মাতৃ আবাহনের সুর ছড়িয়ে পড়তো উদগ্রামের আকাশে বাতাসে। বছরভরের দুঃখযন্ত্রনা ভুলে আনন্দময়ী মায়ের আরাধনায় মেতে উঠতেন অল্পেতে খুশী থাকা মানুষেরা। কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন। দেশভাগের আঘাতে বুকের ভেতর শুরু হয় অবিরাম রক্তক্ষরন। ওপার বাংলা থেকে এখন আর কোনো লোক আসতে পারেন না উদগ্রামের পুজোতে। কালের নিয়মে কিছু প্রথা হারিয়ে গেলেও উৎসবের মূল সুরটা আজো অম্লান থেকে গিয়েছে এই পুজোয়। জন্মাষ্টমীর দিন পুরানো প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। তবে পুরানো কাঠামোতেই মাটির প্রলেপ দিয়ে প্রতিমা তৈরী করেন মৃৎশিল্পীরা। পুজোর চারদিন অতীত নিয়ম মেনেই মুখোশ নাচ ও চন্ডীগানে অংশ নেন গ্রামের আপামোর মানুষ।
উদ্দেশ্য অশুভ শক্তির বিনাশে গ্রামের মঙ্গলকামনা। একাদশীর দিন মেলাও বসে গ্রামে। প্রচলিত বিশ্বাস গ্রামের মেয়েদের এই মন্দিরে বিয়ে দিলে সংসার জীবন সুখী হয়। দেবীর আশীর্বাদ নিয়েই শ্বশুরবাড়ী যাত্রা করে নববধূরা। মন্দিরের নামে বেশ কিছু জমিও রয়েছে। জমির ফসল বিক্রি করে পুজোর আয়োজন করেন গ্রামবাসীরা। পুজোর চারটি দিন আশপাশের গ্রামগুলি থেকেও বহু মানুষ আসেন এই পুজোয়। ছোটো ছোটো দুঃখ- কষ্টকে সরিয়ে মাতৃচরণে পুষ্পাঞ্জলী দেন সকলে। মুছে যায় কাঁটাতারের বিস্তর ব্যাবধান। তবে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে এবারে সরকারী নিয়ম মেনে চলা হবে বলে জানিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা। মাস্ক ও স্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভীড় এড়াতে বাতিল করা হয়েছে মেলাও।