নিজস্ব সংবাদদাতা : ৭৩ পেড়িয়ে ৭৪ এ পা দিল ভারতের স্বাধীনতা দিবস। নীল সাদা আকাশে এভাবেই গর্বের সাথে বুক চিতিয়ে জ্বলজ্বল করছে ভারতের তিরঙ্গা। গেরুয়া, সাদা আর সবুজের এক চাদরে ঢেকেছে ১৩০ কোটি ভারতবাসী।
তবে এবছর করোনা আবহে স্বাধীনতা দিবসের আড়ম্বরতায় কিছুটা কাটছাট হলেও তেরঙ্গার প্রতি শ্রদ্ধায় কোনো খামতি হয়নি। যতসামান্য আয়োজনে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হলেও এর পেছনে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগ ও প্রাণদানের ইতিহাস ভোলার নয়। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস কম বেশী সকলেরই জানা। তবুও স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে চর্চা হলে একটা প্রশ্ন প্রায় সকলের মনেই ঘুরপাক খায়, আর তা হলো, ” কেন ১৫ই আগষ্ট কেই স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উৎযাপন করা হয়?” “কেন ক্যালেন্ডার ঘেটে এই দিনটিকেই স্থির করা হয়েছিল স্বাধীনতা দিবস হিসেবে?”..
তবে চলুন আজ এই বিষয়েই কিছুটা আলোচনা করা যাক –
প্রতিবছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী দিল্লির লালকেল্লা থেকে ১৫ই আগষ্ট স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সেই নিয়মই চলে আসছে বছরের পর বছর। তবে ১৯৪৭ সালের ১৬ই আগষ্ট ততকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু লালকেল্লা থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বলে জানা যায় লোকসভা সচিবালয়ের গবেষণা পত্র অনুযায়ী।
এমনকি ভারত-পাকিস্তানের সীমানাও ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট স্থির হয়নি। ১৭ আগস্ট র্যাডক্লিফ লাইনের ঘোষণার সঙ্গে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এদিকে এর আগে ১৯২৯ সালে জওহরলাল নেহরু কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে পূর্ণ স্বরাজের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর আহ্বানে ২৬ জানুয়ারিকে স্বাধীনতা দিবস ঘোষণার কথা ছিল। ১৯৩০ সাল থেকে এ দিনটিকেই কংগ্রেস স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করত যতদিন না ভারত স্বাধীনতা পায়। কিন্তু তাহলে ১৫ই অগাস্ট কীভাবে ভারতের স্বাধীনতা দিবস হল? এ সম্পর্কে বিভিন্ন ঐতিহাসিকের আলাদা বিশ্বাস রয়েছে।
লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে ১৯৪৭ সালের ৩০শে জুন ক্ষমতা হস্তান্তরের আদেশ দেয় ব্রিটিশ পার্লামেন্ট।
কিন্তু সেই ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে হতে আগস্ট মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এই বিষয়ে ভারতীয় রাজনীতিবিদ সি রাজাগোপালাচারীর তার এক প্রতিবেদনে বলেছিলেন, ইংরেজরা যদি ১৯৪৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করত, তাহলে হস্তান্তর করার মত কোনও ক্ষমতাই তাদের হাতে থাকত না। ফলে মাউন্টব্যাটেন সে কাজ এগিয়ে এনেছিলেন ১৯৪৭ সালের অগাস্টে। সময়টা এগিয়ে আনার ক্ষেত্রে মাউন্টব্যাটেনের যুক্তি ছিল, তিনি দাঙ্গা বা রক্তপাত হতে দেবেন না। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭ পাস হয়। ওই আইনে ১৫ আগস্টকেই ধরা হয় ব্রিটিশ ভারতের শেষ দিন।
ল্যারি কলিন্স ও ডমিনিক লা পিয়েরের লেখা ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইটে বলা হয়েছে মাউন্টব্যাটেন নিজেই শুধু স্বাধীনতার তারিখ স্থির করেছিলেন৷ তবে তাঁকে এই তারিখের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে, সেভাবে কোনও সুস্পষ্ট জবাব দেননি৷ বলেছিলেন আগষ্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই তারিখ ঘোষণা করা হবে৷ তাহলে ১৫ই আগষ্ট কেন বেছে নিয়েছিলেন তিনি? জানতে চাওয়া হয়েছিল৷ তিনি পরে জবাব দিয়েছিলেন ১৫ তারিখ বাছার কারণ সেদিন জাপানের আত্মসমর্পণের দ্বিতীয় বার্ষিকী৷
তবে ইতিহাস বলে, লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে যখন ভারতের স্বাধীনতার দিন ঠিক করতে বলা হয় তখন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের ঘরে বসে রেডিও মারফৎ শোনা জাপানের আত্মসমর্পণের দিনটার কথাই নাকি সবার প্রথম তাঁর মাথায় আসে। এরপর ১৯৪৭ সালের ৪ঠা জুলাই, মাউন্টব্যাটেন ১৫ই অগস্ট দিনটির কথা ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সে পেশ করেন।