শাশ্বতী চক্রবর্তী : আজ শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার অর্থাৎ দেবাদিদেব মহাদেবের দিন। কথিত আছে, শ্রাবণ মাসে শিবের পুজো করলে সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয়। প্রতিবছর এই মাসে মহাদেবের ভক্তরা দল বেঁধে যান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দেওঘর জেলার দেওঘর শহরে অবস্থিত বৈদ্যনাথধামে শিবের মাথায় জল ঢালতে। তবে করোনা আবহের জেরে ভক্তরা এবছর বৈদ্যনাথধামে যাওয়া থেকে বিরত থাকলেও মহাদেবের পূজার্চনায় এতটুকু খামতি রাখে নি ভক্তরা।
বাড়িতে বসেই সাধ্যমতো শিবের পুজোর আয়োজন করেছেন সকলে। এবারের শ্রাবণ চার বছরে একবার আসে যেখানে মাসে ৩২ দিন রয়েছে। তাছাড়া এবছরের শ্রাবণ মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এবছর শ্রাবণ মাসে পাঁচটি সোমবার আছে। হিন্দু শাস্ত্র মতে, শ্রাবণ মাসে মহাদেব থাকেন প্রসন্ন চিত্তে। ফলে তিনি তার ভক্তদের সকল রকমের ইচ্ছাপূরণ করে থাকেন। কথিত আছে, শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার যদি কোন ভক্ত নিষ্ঠার সঙ্গে শিবের পুজো করেন, তাহলে তার জীবনে শিবের কৃপা দৃষ্টি থাকে।
হিন্দু ধর্মে বহু দেবদেবী থাকলেও মহাদেবের স্থান অন্য মাত্রায় রয়েছে। কেবলমাত্র শৈবরাই নন, সমস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন শিবের আরাধনা করতে পারেন। গোটা দেশের বিভিন্ন স্থান জুড়ে মোট বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ রয়েছে। সেগুলি হলো –
১. সোমনাথ মন্দির, এটি গুজরাটে অবস্থিত। সোমনাথ মন্দির পাঁচ বার ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ছয় বার পুনর্নির্মিত হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন কিংবদন্তিতে এই মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে।
২. ওঁকারেশ্বর মন্দিরটি মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত। নর্মদা নদীর একটি দ্বীপে ওঙ্কারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ ও মামল্লেশ্বর মন্দির অবস্থিত।
৩. ভীমশঙ্কর জ্যোর্তিলিঙ্গ অবস্থিত পুণের ভীমাশঙ্করে। ভীম নামের এক দানবের হাত থেকে ভক্তদের রক্ষা করেন শিব। তারপরই শিবের আরাধনার জন্য গড়ে ওঠে পুণের এই মন্দিরের জ্যোর্তিলিঙ্গ।
৪. কেদারনাথ মন্দিরটি উত্তরাখণ্ডে অবস্থিত। কেদারনাথ সর্ব-উত্তরে অবস্থিত জ্যোতির্লিঙ্গ। এটি তুষারাবৃত হিমালয়ে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির। এই মন্দিরকে ঘিরেও অনেক কিংবদন্তি গড়ে উঠেছে। এই মন্দিরে যেতে গেলে পায়ে হেঁটে যেতে হয়। বছরের মধ্যে ছয় মাস মন্দির বন্ধ থাকে।
আরোও পড়ুন – ভোজনরসিক বিবেকানন্দ প্রিয় খাবার ছিলো কচুরী,ফাউলের মাংস
৫. মহাকালেশ্বর মন্দিরটিও মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত। উজ্জয়িনীর মহাকালে মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির অবস্থিত। এটিই একমাত্র দক্ষিণমুখী মন্দির। মন্দিরের গর্ভগৃহে যেখানে শিবলিঙ্গটি রয়েছে সেখানে সিলিং-এ একটি শ্রীযন্ত্র উলটো করে ঝোলানো থাকে।
৬. ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দিরটি মহারাষ্ট্রে গোদাবরী নদীর উৎসের কাছে অবস্থিত।
৭.ঘৃষ্ণেশ্বর মন্দিরটি মহারাষ্ট্রের ইলোরার কাছে, ঔরঙ্গাবাদ জেলায় ইলোরার গুহামন্দিরের কাছে অবস্থিত।
৮. বিশ্বনাথ মন্দিরটি উত্তরপ্রদেশের বারানসিতে অবস্থিত। বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দির হিন্দুদের পবিত্রতম মন্দিরগুলির অন্যতম।
৯. মল্লিকার্জুন মন্দির অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুল জেলার শ্রীশৈলমে অবস্থিত। মল্লিকার্জুন বা শ্রীশৈলম কৃষ্ণা নদীর তীরে একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত। মন্দিরটি প্রাচীন ও এর স্থাপত্য সৌন্দর্য দর্শনীয়।
১০. নাগেশ্বর মন্দিরের জ্যোতির্লিঙ্গের অবস্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। জ্যোতির্লিঙ্গ দাবিদার মন্দিরগুলি উত্তরাখণ্ডের আলমোড়ার কাছে জাগেশ্বর, গুজরাতের দ্বারকা ও মহারাষ্ট্রের হিঙ্গোলি জেলার অন্ধ নাগনাথে অবস্থিত।
আরোও পড়ুন – লড়াই করেই দেবীর স্বীকৃতি মনসার
১১. রামেশ্বরম মন্দিরের অবস্থান তামিলনাড়ুতে। রামেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গটি বিশাল। এই মন্দিরে রামেশ্বর স্তম্ভ অবস্থিত।
১২. বৈদ্যনাথ মন্দিরের জ্যোতির্লিঙ্গের অবস্থানও বিতর্কিত। ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের বৈদ্যনাথ মন্দিরটি জ্যোতির্লিঙ্গ আখ্যাপ্রাপ্ত। এটিই একমাত্র তীর্থ যা একাধারে জ্যোতির্লিঙ্গ ও শক্তিপীঠ। বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যান্য দাবিদার মন্দিরগুলি হল হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলার বৈজনাথ শিবধাম ও মহারাষ্ট্রের বিড জেলার পারলি বৈজনাথ। পৌরাণিক চরিত্র রাবণের সঙ্গে বৈদ্যনাথ লিঙ্গ প্রতিষ্ঠার গল্পটি জড়িত।