নিজস্ব সংবাদদাতা : শ্রাবণের সংক্রান্তিতে বাংলার ঘরে ঘরে পূজিতা হবেন সর্পদেবী মনসা। দেবী মনসা হলেন হিন্দু লৌকিক দেবী। অথর্ব বেদে প্রথম মনসার কথা জানা যায়। মঙ্গলকাব্য অনুযায়ী শিবের মানসকন্যা হিসেবে আমরা পাই। কিন্তু পুরান বলছে অন্য কথা। পুরানমতে তিনি কাশ্যপ মুনির মানস কন্যা। একবার পৃথিবীতে সাপ ও সরীসৃপের উৎপাত বৃদ্ধি পেলে ঋষি কাশ্যপ এক মানস কন্যার জন্ম দেন, তিনিই মনসা। মহামুনি জরুৎকারুর সাথে তাঁর বিয়েও হয়, এবং আস্তিক মুনি হলেন দেবীর একমাত্র পুত্র।
দেবী মনসা সর্পকূলের অধিষ্ঠাত্রী হলেও, দেবী হওয়ার বাসনা হয়। তাই মর্ত্যলোকে প্রতাপশালী বণিক চাঁদ সওদাগরের হাতে পুজো নেবার জন্য তাঁর লড়াই শুরু। আই আজও বাংলার ঘরে ঘরে মনসা পুজোর সাথে সমান মর্যাদায় স্মরণ করা হয় সতী বেহুলাকেও।
মনসার দেবী হবার যাত্রা যেন এক লড়াই। সমাজে, মান প্রতিষ্ঠার লড়াই। নারী জাতির সম্মান অর্জনের লড়াই শেখায় মনসা মঙ্গল উপাখ্যান।
অন্যদিকে বঙ্গদেশে ঘট ও প্রতিমা উভয়ের মধ্য দিয়েই সর্পদেবীর আরাধনায় সামিল হন আপামর বাঙালী।চতুর্ভুজা দেবী পদ্মাসনে অধিষ্ঠিতা। দেবীর চার হাতে যথাক্রমে শঙখ, পদ্ম, সাপ ও অভয়মুদ্রা দেখা যায়। পাঁচ বা সাত ফনা বিশিষ্ট গোখুরো সাপ দেবীর মাথায় ছাতার মত বিস্তৃত। দেবীর বাহন হিসেবে থাকে রাজহাঁস। দেবীর ঘট যা শুধু মাঙ্গলিক চিহ্নই নয়, মাতৃত্বেরও প্রতীক। অন্যদিকে সাপ কুলকুণ্ডলিনীর জাগরণের প্রতীক, অন্যদিকে রাজহাঁস জ্ঞানের প্রতীক। দক্ষিণ ভারতে দেবীর মুর্তিতে কিছু ভিন্নতা ধরা পড়ে। এখানে দেবী নাগ আসনে উপবিষ্টা ও দেবীর কোলে তাঁর পুত্র আস্তিক মুনি। অন্যদিকে বঙ্গদেশে দেবী চতুর্ভুজা ও নাগমাতা। কোথাও কোথাও দেবীর সখী নেতা, বেহুলা, লক্ষ্মীন্দরের প্রতিমাও দেখা যায়।বঙ্গদেশে প্রধানত অম্বুবাচী থেকে শুরু হয় মনসা পুজো, যা সমাপন হয় ভাদ্রমাসের সংক্রান্তিতে। তবে শ্রাবণের সংক্রান্তিতেই সাড়ম্বরে পালিত হয় মনসা পুজো।