নিউজ ডেস্ক, ১২ই সেপ্টেম্বর : বাংলা আধুনিক কথা সাহিত্যের অনবদ্য স্রষ্টা তিনি, তিনি বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়। তিনি ১৮৯৪ সালের আজকের দিনেই অর্থাৎ ১২ই সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাঁচরাপাড়ার নিকটবর্তী ঘোষপাড়া-মুরাতিপুর গ্রামে নিজ মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বনগাঁ’র নিকট বারাকপুর গ্রামে।
তার পিতার নাম মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত। পাণ্ডিত্য এবং কথকতার জন্য তিনি শাস্ত্রী উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। মাতার নাম মৃণালিনী দেবী। পিতামাতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে বিভূতিভূষণ ছিলেন সর্বজ্যেষ্ঠ।
বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং তিনি বনগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। এরপরে তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে অর্থনীতি, ইতিহাস এবং সংস্কৃত বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। পড়াশোনা শেষে তিনি একজন শিক্ষক হিসেবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন।
এরপর ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে এক প্রবাসী পত্রিকার মাঘ সংখ্যায় ‘উপেক্ষিতা’ নামক গল্প প্রকাশের মধ্যমে তাঁর সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত হয়। ভাগলপুরে কাজ করার সময় ১৯২৫ সালে তিনি “পথের পাঁচালী” রচনা শুরু করেন এবং এই বই লেখা শেষ হয় ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে।
এই বই বিভূতিভূষণের প্রথম এবং সবচেয়ে বিখ্যাত রচনা। যা এখনও সমান জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। সাহিত্যিক-সম্পাদক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় এই লেখাটি পছন্দ করে বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশ করলে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এরপর ‘অপরাজিত’ রচনা করেন যা পথের পাঁচালীরই পরবর্তী অংশ। উভয় উপন্যাসেই তার ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিফলন ঘটেছে।
পথের পাঁচালী ও অপরাজিত বিভূতিভূষণের শ্রেষ্ঠ রচনা ও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কীর্তি হিসেবে পরিচিত।
পথের পাচালী ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ ছাড়াও বহু ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।
সাহিত্যিক হিসেবে বিভূতিভূষণের ভাষা মধুর ও কাব্যধর্মী। তার ছোট গল্পগুলোর মধ্যে গীতিকবির দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়।
তার উল্লেখযোগ্য রচনা গুলি হলো :
পথের পাঁচালী (১৯২৯), অপরাজিত (১৯৩১), দৃষ্টি প্রদীপ (১৯৩৫), আরণ্যক (১৯৩৮), আদর্শ হিন্দু হোটেল (১৯৪০), দেবযান (১৯৪৪), ইছামতী (১৯৪৯)। ছোট গল্প সংগ্রহ : মেঘমল্লার (১৯৩১), মৌরীফুল (১৯৩২), যাত্রাবদল (১৯৩৪), কিন্নর দল (১৯৩৮)। আত্মজীবনীমূলক রচনা : তৃণাঙ্কুর (১৯৪৩) ইত্যাদি।
ইছামতি উপন্যাসের জন্য তিনি মরণোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কার পান। এরপর ঝাড়খন্ডের ঘাটশিলায়
১লা নভেম্বর ১৯৫০ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। পরদিন দুপুরে সুবর্ণরেখা নদীর ওপরে ‘পঞ্চপাণ্ডব ঘাট’-এ তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। তিনি মারা গেলেও সকলের জন্যে রেখে গিয়েছেন তাঁর অনবদ্য সব সৃষ্টি, যার দ্বারা পাঠকদের কাছে তিনি আজও সমান সম্মানের পদে আসীন।