কুম্ভমেলায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড । আগুনের লেলিহান শিখায় আচ্ছন্ন চারিদিক । রবিবার বিকেলে আচমকাই প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত কুম্ভমেলার ১৯ নম্বর সেক্টরের পাশে একটি তাঁবুতে আগুন লাগে । মুহুর্তের মধ্যে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে আগুন । কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারিদিক । আগুনে পুড়ে ছাই সন্ন্যাসীদের প্রায় ২৬০ টি তাবু । ঘটনার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে দমকলের একাধিক ইঞ্জিন ও প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা । দমকলকে সাহায্য করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরাও। যদিও এখনও পর্যন্ত মৃতের খবর পাওয়া যায়নি তবে বহু পুণ্যার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে । ১৯ নম্বর সেক্টরের এলাকা সিল করে দিয়েছে দমকল বাহিনী ।আগুন লেগেছে স্বস্তিকা গেটের কাছে । আগুনে পুড়ে গিয়েছে রেল ব্রিজের কাছের আখড়া । হাওয়ার গতি বেশি থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে দমকল আধিকারিকদের । যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন দমকলবাহিনী ও বিপর্যয় মোকাবিলা দল।
কিভাবে লাগলো এই আগুন?

জানা গিয়েছে এদিন একটি তাঁবুর ভেতরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণেই এই অগ্নিকাণ্ড । সেখান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য তাবুগুলিতে । দুর্ঘটনার পর পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে প্রশাসন। ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ভারত সেবাশ্রম সংঘের সন্ন্যাসী ও স্বেচ্ছাসেবকরা পৌঁছে পুণ্যার্থীদের উদ্ধার কাজে হাত লাগান । পাশাপাশি কুম্ভমেলা পরিচালনায় সহযোগিতা করছেন সংঘের কয়েকশো সন্ন্যাসী ও স্বেচ্ছাসেবকরা । তীর্থ যাত্রীদের থাকার ব্যবস্থাপনায় টেন্ট তৈরির কাজও হাত লাগিয়েছেন তারা । ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রধান সম্পাদক স্বামী বিশ্বত্মানন্দ মহারাজ বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়েই ভারত সেবাশ্রম সংঘের সন্ন্যাসী স্বামী সত্যমিত্রানন্দ মহারাজ সহ অন্যান্য সন্ন্যাসী ও স্বেচ্ছাসেবকরা তীর্থযাত্রীদের উদ্ধার কাজে হাত লাগান।
মেলার কিছু ঘটনা প্রবাহ ও নিয়মসূচি

কুম্ভমেলার অন্যতম ও সবচেয়ে বিশেষ আকর্ষণ শাহী স্নান । এই পুণ্যস্নান করতেই বহু মানুষ ভিড় করেন । তবে শাহী স্নানের প্রথম অধিকারী কিন্তু নাগা সন্ন্যাসীরা । ২০২৫ এর ১৩ জানুয়ারি সোমবার পৌষ পূর্ণিমা তিথিতে প্রথম শাহী স্নান হল মহাকুম্বে। তার পরের দিন অর্থাৎ ১৪ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তিতে হয় শাহী স্নান যার আরেক নাম অমৃত স্নান । প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, কুম্ভে স্নান করলে জন্ম মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্তিলাভ হয় । অমৃত স্নান বা শাহী স্নানের প্রথম অধিকারী নাগা সন্ন্যাসীরা । জ্যোতিষ অনুসারে, সূর্য ও বৃহস্পতির অবস্থান অনুসারে শাহী স্নানের দিনক্ষণ নির্ধারিত হয় । এই দুই গ্রহের শুভ প্রভাবে সুখ , সম্পদ, জাতক রাজ্যভাগ অর্জন করা যায় । কুম্ভমেলায় শাহী স্নানে নাগা সন্ন্যাসীরা হাতি ঘোড়ার পিঠে বা রথে চড়ে আসেন । রাজকীয় ভঙ্গিতে নাগা সন্ন্যাসীরা শাহী স্নান করেন । গায়ে ভস্ম মেখে, মাথায় জটাজুটো, হাতে ত্রিশূল নিয়ে এই নাগা সন্ন্যাসীরা চিরকালই সাধারণ মানুষের কাছে রহস্যে ঘেরা এক সম্প্রদায়। শাহী স্নানের আগে তারা মন্ত্রচ্চারণ করেন, শঙ্খধ্বনি দেন এবং ধূপ প্রদীপ জ্বালান । তবে এই মহাকুম্ভে এসেই ঘটে গিয়েছে এক দুর্ঘটনা । ১০ জানুয়ারি উত্তর প্রদেশের প্রয়াগ্রাজের কুম্ভমেলায় স্নান করতে এসেছিলেন ৭৭ বছরের বৃদ্ধা কৃষ্ণা সরকার । কিন্তু, গঙ্গায় স্নান করার পর ভিড়ের মধ্যে তাঁর মেয়েকে খুঁজে পাননি তিনি । অবশেষে তাঁকে উদ্ধার করে সুস্থ ভাবে বাড়ি পৌঁছে দিলেন ইসলামপুরের এক যুবক । যুবকের এমন ভুমিকায় মুগ্ধ পুলিশ এবং বৃদ্ধার পরিবার । তাঁকে পুলিশের তরফে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
পুণ্যার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক

১৩ ই জানুয়ারী উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে শুরু হয়েছে মহাকুম্ভ মেলা । মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত । মহাকুম্ভ প্রতি ১২ বছর পর অনুষ্টিত হয় । আর অর্ধকুম্ভ প্রতি ৬ বছর পর । দূরদূরান্ত থেকে বহু পুণ্যার্থীরা এসে ভিড় জমান মেলায় । পূণ্যার্থীরা বিশ্বাস করেন যে নদীতে স্নান করলে পুণ্য লাভ করা যায় । মহাকুম্ভ মেলা বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় মেলাগুলির মধ্যে একটি । যেখানে সারা বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তরা অংশগ্রহণ করেন মেলায় । তবে রবিবারের এই ঘটনায় ব্যাপক ভাবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে পুণ্যার্থীদের মধ্যে ।