তোমরা আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’ । নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু তোমাকে জানাই প্রণাম…

সুভাষ এর জীবন কাহিনী 

    নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদান অপরিসীম। এদেশ তথা সারা বিশ্বের মানুষ তাকে আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে । নেতাজির বাণীগুলোর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কিছু বাণী হল,’ সত্যান্বেষণ না করা পর্যন্ত আমরা নীরব হয়ে বসে থাকব না, বা থাকা উচিতও নয়’। * ‘নরম মাটিতে জন্মেছে বলেই বাঙালির এমন সরল প্রাণ’। * ‘আমাদের সবচেয়ে বড় জাতীয় সমস্যা হল, দারিদ্র, অশিক্ষা, রোগ, বৈজ্ঞানিক উত্‍পাদন। যে সমস্যাগুলির সমাধান হবে, কেবলমাত্র সামাজিকভাবনা চিন্তার দ্বারা। তোমরা আমায় রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব ‘ ।নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন একজন ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতা । যিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন । যুগ যুগ ধরে তাঁর এই বাণী তাঁর এই আদর্শকে পাথেয় করে চলছে সমগ্র দেশবাসী । মহান এই বিপ্লবী বাঙালির জন্ম হয়েছিল ১৮৯৭ সালে ২৩ জানুয়ারি । বেলা ১২ টা বেজে ১০ মিনিটে । ওড়িশার কটকে জন্মেছিলেন তিনি । তাঁর পিতার নাম জানকীনাথ বসু ও মাতার নাম প্রভাবতী দেবী । সুভাষ তাঁর ১৪ ভাই বোনদের মধ্যে নবম সন্তান ছিলেন । তিনি একটি সুশিক্ষিত এবং ধনী পরিবার থেকে এসেছিলেন । তাঁর পিতা জানকিনাথ বসু একজন প্রসিদ্ধ আইনজীবী ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন বিশিষ্ট নেতা ।

    পড়াশোনা কাল

      সুভাষ ছোটবেলা থেকে বেশ মেধাবী ছিলেন । পড়াশোনার প্রতি তাঁর আগ্রহ ও মনোযোগ দুই ছিল । অন্যান্য ভাই বোনেদের মত সুভাষকেও কটকের প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপিয়ান বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছিল । এরপর তাঁর যখন বারো বছর বয়স তখন তিনি কটকের র‍্যাভেনশা কলেজিয়েট বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন । ম্যাট্রিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন । স্কুলে পড়ার সময় সুভাষ স্বামী বিবেকানন্দের বই পড়তে আগ্রহী ছিলেন । আর বিবেকানন্দের বই তাকে স্বাধীনতা সংগ্রামী হতে অনুপ্রেরণা জাগিয়েছিল । এমনকি স্বামীজির লেখা বই পড়ে তিনি জীবনের আসল উদ্দেশ্য খুঁজে পান । তারপর তিনি প্রথমে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও পরে স্কটিশ চার্জ কলেজে পড়াশোনা করেন । সেখান থেকে বিএ পাশ করেন । পরে বিদেশে গিয়ে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করেন । বিলেত থেকে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করে দেশে ফিরে আসেন । তবুও ইংরেজ সরকারের অধীনে চাকরি কখনোই গ্রহণ করেন নি তিনি। তাই বিলেতে চাকরি ও করেননি । বরং দেশকে ইংরেজদের কবল থেকে মুক্ত করতে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিলেন ।

       

       

      দেশের জন্য অবদান

        খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা হয়ে উঠেছিলেন । তিনি দুবার কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন । একবার কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচিতও হয়েছিলেন । সালটা ১৯৪১ । ইংরেজ সরকার তাকে বাড়িতে নজরবন্দি করে রাখার সময় ছদ্মবেশ ধরে পালিয়ে যান সুভাষ। প্রথমে জার্মানি এবং পরে জাপান চলে যান তিনি । জাপানে রাসবিহারী বসুর সঙ্গে যোগ দিয়ে হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক হয়ে ওঠেন । তখন থেকে সকলের কাছে সুভাষ হয়ে উঠলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। এরপর তিনি বাহিনী নিয়ে উত্তর – পূর্বের মনিপুর দখল করে সেখানে ভারতের পতাকা উড়িয়ে দেন । কিন্তু আরও এগিয়ে যাওয়ার পথে তাঁকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল । নেতাজি গঠিত আজাদ হিন্দ সরকারের পতনের পর থেকে তাঁর কোনো খবর পাওয়া যায়নি । নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস । তাঁর হাত ধরেই সর্ব প্রথম প্রকাশ্য এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন । দেশবন্ধুর স্ত্রী বাসন্তী দেবী সুভাষকে বড়ই স্নেহ করতেন । এমনকি বাসন্তী দেবীকে মা বলে ডাকতেন তিনি । রাজনীতিতে প্রবেশের কিছুদিনের মধ্যে তিনি কংগ্রেস কমিটির প্রচার সচিবের পদ পান । মাঝে ইংল্যান্ডের যুবরাজের ভারতে আসার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য জেলও খাটতে হয় তাকে । কারা মুক্তির পর বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক হয়েছিলেন । পরবর্তীতে চিত্তরঞ্জন দাস মেয়র থাকাকালীন সুভাষ কলকাতা পুরসভার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে নিযুক্ত হন । দেশবন্ধুর মতোই স্বরাজ অর্থাৎ পূর্ণ স্বাধীনতার সমর্থক ছিলেন বঙ্গ বীর এই সন্তান । একইসঙ্গে ছিলেন চরমপন্থী নায়ক । তাই তার চরমপন্থী চিন্তা ধারার সঙ্গে কংগ্রেসের নরমপন্থীদের মতবিরোধ হয় । এমনকি কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে নরমপন্থীরা বিক্ষুদ্ধ হলে তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে কংগ্রেস ত্যাগ করেন। এরপর নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর হাত ধরে তৈরি হয় নতুন দল’ ফরওয়ার্ড ব্লক ‘ । নতুন দল গড়ার পর স্বাধীনতা অর্জনের জন্য দেশবাসীকে নতুন ভাবে অনুপ্রাণিত করতে ঝাপিয়ে পড়েন বিপ্লবী সন্তান । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার পর সুভাষের ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই আরও জোরদার হতে শুরু করে । তিনি মানুষকে এক জোট হওয়ার শক্তি এবং অস্ত্রবল জোগাড় করতে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার কথা ভাবেন । ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলাপচারিতার মাধ্যমে যে স্বাধীনতা পাওয়া যাবে না, তা অবশ্য আগেই বুঝে গিয়েছিলেন তিনি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির প্রবল চাপে ব্রিটিশরা এক অভাবনীয় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় । নেতাজি সেই শক্তি ব্যবহার করতে পারে ভেবে ব্রিটিশ সরকার তাকে ১৯৪০ সালের ৪ জুলাই কলকাতায় গৃহবন্দি করে রাখে । কিন্তু সকলের চোখে ফাঁকি দিয়ে ছদ্মবেশে ১৯৪১ সালে ১৭ জানুয়ারি দেশ ত্যাগ করেন তিনি।তাঁর নিরুদ্দেশের খবর রটে যায় দেশ জুড়ে । কেউ ভাবতে পারেনি তিনি আগামী দিনে স্বাধীনতা সংগ্রামে এক ঝড় তুলতে চলেছেন । ব্রিটিশ সরকারের সমস্ত চক্রান্তকে পরাজিত করে তাঁর কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল মহান বাণী । ১৯৪৩ সালে আজাদ হিন্দ ফৌজ নেতাজির নেতৃত্বে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । ঠিক এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৪৪ সালে কোহিমা ও ইম্ফলের কাছে ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল নেতাজির সেনা দল । এই সালেই আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারতের মাটি ইম্ফলে স্বাধীন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে । জাপানের অসহযোগিতা এবং বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয় শেষদিকে আজাদ হিন্দ বাহিনীকে দুর্বল করে তুলেছিল ।

        নেতাজির জন্মদিন পালন

          ২৩ জানুয়ারি দিনটি নেতাজি জয়ন্তী বা প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অসম, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা রাজ্যের সরকারি ছুটির দিন আজ। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে এই দিনটি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয় । কলকাতায় এই দিন নেতাজির বাড়ি নেতাজি ভবনে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কলকাতার রেড রোডের নেতাজি মূর্তির সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় । সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লক ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর পরিবার তাঁর এই জন্মদিন ভারতে দেশপ্রেম দিবস এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই দিনটিকে দেশনায়ক দিবস ও জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল । কিন্তু, রাজনৈতিক কিছু কারণে সেই দাবি দুটি আজও পূরণ হয়নি ।

           

           

           

          নেতাজির মৃত্যু সংবাদ

            ১৮ অগাষ্ট ১৯৪৫ সালের তাইপেইতে একটি বিমান দুর্ঘটনার পর তাঁর আর কোনো খোঁজ মেলেনি । দুর্ঘটনার পর থেকেই নেতাজির নিখোঁজ ও মৃত্যু নিয়ে একাধিক রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করে । ঘটনার সত্য উদঘাটনের জন্য একাধিক তদন্ত কমিশন গঠন করা হয় । এর মধ্যে শাহনওয়াজ এবং খোসলা কমিশন সংশ্লিষ্ট বিমান দুর্ঘটনার পর নেতাজি মারা গেছেন বলে দাবি করেন । অন্যদিকে মুখার্জি কমিশন দাবি করেছিলেন, তিনি দুর্ঘটনার পরও জীবিত ছিলেন। ভারতে মহান স্বতন্ত্র মনীষীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। যিনি অতীত কিংবা বর্তমান নয় ভবিষ্যতের যুবসমাজকেও তিনি প্রেরণা জাগাবেন । তাই হয়তো দেশবাসী তথা সারা বিশ্বের মানুষ তাঁর মৃত্যু সংবাদ আজও বিশ্বাস করতে উঠতে পারেন না ।

            Next Post

            সইফের ওপর হামলার নয়া মোড়! অভিযুক্তের বাবা কে জানেন?

            Fri Jan 24 , 2025
            Share on Facebook Tweet it Share on Reddit Pin it Share it Email সইফের ওপর হামলার ঘটনা ১৬ জানুয়ারি অভিনেতা সইফ আলি খানের ( bollywood actor saif ali khan ) জীবনে ছিল এক বিভীষিকাময় রাত। সেই রাতে বান্দ্রার অভিজাত সৎগুরু শরণ আবাসনের পাঁচিল টপকে এক অচেনা ব্যাক্তি সোজা চলে যান […]

            আপনার পছন্দের সংবাদ

            RCTV Sangbad

            24/7 TV Channel

            RCTV Sangbad is a regional Bengali language television channel owned by Raiganj Cable TV Private, Limited. It was launched on August 20, 2003, as a privatecompany. The channel runs a daily live broadcast from Raiganj, West Bengal. The company also provides a set-top box.

            error: Content is protected !!