‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ -র মত বিখ্যাত রিয়ালিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করে ২৫ লক্ষ টাকা জিতে তাক লাগিয়েছে রায়গঞ্জের স্কুল ড্রপ-আউট মিন্টু সরকার। শুধু জেতা নয় রীতিমতন সকলের মাঝে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মিন্টু। ইতিমধ্যেই শো-এর হট সিটে বসে ‘বিগ-বি’-র সামনে ১৩ টি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অবাক করেছে স্কুল পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক মিন্টু। মিন্টুর এই সাফল্যে স্বভাবতই খুশি পরিবার থেকে শুরু করে গোটা গ্রাম।
ভাঁপা পিঠের পসরায় ছেয়েছে বাজার
রায়গঞ্জ ব্লকের ২নং জগদীশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত জাওনিয়া এলাকার ডাঙ্গিপাড়া গ্রামের অত্যন্ত দুঃস্থ পরিবারের ছেলে তিনি। স্থানীয় মহারাজাহাট হাই স্কুলে পড়াশোনা করতেন। ২০১৬ সালে ওই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষাও দেন। সেই পরীক্ষায় ৪০% নম্বর পান মিন্টু। তবে তারপরে আর পড়াশোনা করা হয়নি। কাজ করতে চলে যান সুদূর পাঞ্জাবে। বাবা শিবু সরকার গ্রামেরই একটি ছোট চায়ের দোকান ও ১বিঘারও কম একটি জমিতে কাজ করে কোনক্রমে সংসার চালাতো। পরে বাবার শারীরিক অসুস্থতার কারণে সংসারের হাল ধরতে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ শুরু করে মিন্টু।
হিলি চেকপোস্টে কমল যাতায়াত ও বানিজ্য
বাবার চিকিৎসার জন্য ওই স্বল্প জমিটুকু ও বন্ধক রাখে তারা। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসে বাবা প্রয়াত হন। তেমন পরাশোনা না জানলেও মিন্টুর দেশ-বিদেশের নানান বিষয়ে জানার আগ্রহ ছিল প্রবল। তাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে সব খবর রাখতো মিন্টু। টিভিতে ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ বাবা-মায়ের সাথে দেখতো মিন্টু। মায়ের কাছে হতাশার কথা শুনেই সেখানে যাওয়ার জেদ চাপে মিন্টুর। শুরু হয় প্রস্তুতি পর্ব।
গুড টাচ, ব্যাড টাচ শিখিয়ে রোল মডেল ছোট্ট প্রিয়াংশী
ইউটিউবে বিভিন্ন ইউপিএস-সি লেভেলের শিক্ষামূলক ভিডিও দেখা থেকে শুরু করে নিয়মিত পেপার পড়তো মিন্টু। পাশাপাশি দেশ-বিদেশে নানান খবরে ক্রমশ আগ্রহ বাড়তে থাকে মিন্টুর। মোবাইল ঘেটেই সমস্তটা জানতে পেরে ‘কেবিসি’-তে অ্যাপ্লাই করে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার পরে অবশেষে নভেম্বর মাসে ‘কেবিসি’ থেকে ফোন আসে মিন্টুর কাছে। নভেম্বর মাসের ১৩ তারিখে মাকে নিয়ে মিন্টু পাড়ী দেয় সুদূর মুম্বাইয়ে। সেখানে প্রথমদিকে নার্ভাস হলেও বিগ-বি র সামনে বসে কনফিডেন্স হারায়নি প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে মিন্টু। মোট ১৩-টি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে জিতে নেয় ২৫ লক্ষ টাকা। মিন্টুর এই সাফল্যে খুসীর আবহ গোটা গ্রাম জুড়ে।
রোগী কল্যান সমিতির নতুন দায়িত্বে কৃষ্ণ কল্যাণী
মিন্টু বলেন, বাবা-মায়ের সাথে বসে কেবিসি দেখতেন। মা বলেন এই সব দেখে কি হবে? ওখানে যেতে পারবি? সেই থেকেই মোবাইলে ওখানে কীভাবে যাওয়া যায় তা দেখা শুরু করি এবং গোটা বিষয়টা জানতে পারেন। একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে অ্যাপ্লাই করেন। প্রথমে দিল্লিতে একটি লিখিত পরীক্ষা হয় তাতে ২৫টি প্রশ্ন ছিল। সেখানে গোটা দেশের প্রায় ২০০০জন ছিল। তারমধ্যে প্রায় ১০০০জন পাশ করে সেই ১০০০জনের মধ্যে তিনি ছিলেন। তারপর গ্রামে ফিরে আসেন। প্রায় তিনি মাস পর কেবিসি থেকে ফোন আসে। ১৩ই নভেম্বর তিনি মাকে নিয়ে মুম্বই যান।
ক্ষতির মুখে বিঘোরের বেগুনের ফলন
মিন্টুর মা দেখন সরকার বলেন, “ছেলেটা সারাদিন মোবাইলে পড়াশুনা করত, সবাই বলতো কি সারাদিন মোবাইল দেখছিস? আমি তাদের বলতাম ও পড়াশোনা করছে। ও আমাকে বলেছিল যে ও একদিন এই মোবাইলের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে আনবে। ও ‘কেবিসি’ খেলতে মুম্বাই গেছিল। সঙ্গে আমাকেও নিয়ে গেছিল। খুব ভালো লাগলো ওখানে গিয়ে।প্রতিবেশী অনিল চন্দ্র সরকার বলেন, “ও মাঝে মধ্যেই মোবাইল নিয়ে বসে থাকতেন। ওর এই সাফল্যে আমরা খুব আনন্দিত ও গর্বিত।এদিন মিন্টুর বাড়িতে যান মহিলা তৃণমূলের জেলা সভাপতি চৈতালী ঘোষ সাহা। তাকে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের শুভেচ্ছা বার্তা পৌছে দেন তিনি