শিয়ালদহ আদালতে হাজির করানো হয় সঞ্জয়কে
আজ ২০ জানুয়ারী অর্থাৎ সোমবার । আর জি করে ধর্ষণ ও খুন কান্ডে গত ১৮ ই জানুয়ারী সঞ্জয় রাইকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় । এই মামলার রায় দেন শিয়ালদহ নগর ও দায়রা আদালতের বিচারপতি অনির্বাণ দাস ( Anirban das ) । আজ ঠিক কি সাজা হয় সঞ্জয়ের? মৃত্যুদণ্ড নাকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড? সেদিকেই নজর ছিল দেশ বিদেশের বহু মানুষের । ১৮ই জানুয়ারি সঞ্জয় রাই আদালতে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “আমি দোষী নই আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।” এদিন সোমবার ১০.২২ টায় সঞ্জয়কে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে বার করা হয় । ১০টি গাড়ির কনভয় করে সঞ্জয়কে নিয়ে আসা হয় শিয়ালদহ আদালতে । ১০.৪০ টায় সঞ্জয়কে নিয়ে আদালতে পৌঁছায় প্রিজন ভ্যান। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে হাজির করা হয় সঞ্জয়কে । একাধিক পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ মোতায়েন করা ছিল আদালত চত্বর জুড়ে । দুপুর ১২.৩০ টায় সাজা সংক্রান্ত শুনানি শুরু । শুনানির পর হবে সাজা ঘোষণা । ১২.৩০ টায় বিচারক বসেন এজলাসে । আদালতে উপস্থিত ছিলেন অভয়ার মা-বাবা, তাদের আইনজীবী ও দোষী সঞ্জয়ের আইনজীবী, সিবিআইয়ের আইনজীবী। জেল সূত্রে খবর, সঞ্জয় অন্যদিনের তুলনায় আজ ঘুম থেকে ওঠে ৩০ মিনিট আগে। এমনকি বলা বাহুল্য যে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে সঞ্জয় । রবিবার কিছুটা হলেও বাকি সব জেলবন্দীদের সঙ্গে কথা বললেও আজ একবারও সকাল থেকে কথা বলেনি সঞ্জয় । শুধুমাত্র পাশের সেলে যিনি রয়েছে তাঁর সাথেই কথা বলেছে সে। আদালতে এদিন ২জন ডিসি পদমর্যাদার আধিকারিক, ৫ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, ৩১ জন এসআই পদমর্যাদার আধিকারিক, ৩৯ জন এএসআই পদমর্যাদার আধিকারিক, ২৯৯ জন কনস্টেবল এবং মহিলা পুলিশ ৮০ জন ও ব্যারিকেড মোতায়ন করা ছিল । সব মিলিয়ে ৫০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন ছিল । অভয়ার মা বাবা যে ৪২ টি প্রশ্ন তুলেছিলেন । ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট যে ১১ টা প্রশ্ন তুলেছিল। সেইসব প্রশ্নের উত্তর আজ কি দিতে পারবেন বিচারক? অভয়ার পরিবার বারংবার জানিয়েছিলেন শুধু সঞ্জয় একমাত্র দোষী নয় এই ঘটনার সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত এমনকি পুরো ঘটনার তদন্ত আবার নতুন করে করানোর আর্জি জানিয়েছিলেন তারা ।
প্রথম পর্বের শুনানি

আদালতে সময় মত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় । ১২.৪০ টায় বিচারক অনির্বাণ দাস এজলাসে হাজির হন । তারপর আসামি সঞ্জয়কে আনা হয় । বিচারকের বা দিকের উইটনেস বক্সে সঞ্জয় ও সামনের বেঞ্চে আইনজীবীরা ও অভয়ার পরিবারের সবাই বসেছিলেন । বিচারক শুরুতেই সঞ্জয়কে প্রশ্ন করেন যে আপনার কি মতামত সাজা সংক্রান্ত বিষয়ে? উত্তরে সঞ্জয় প্রাণপণে নিজেকে আজও নির্দোষ বলে দাবি করেন । বলেন, আমি ধর্ষণ – খুন করিনি । আরও বলেন আমাকে ফাঁসানো হয়েছে । যদিও ১৮ ই জানুয়ারি সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল । বিচারক বারবার বলছেন, আজ আত্মপক্ষর সুযোগ নেই আপনার । আপনাকে ৩৬৪ অর্থাৎ জবানবন্দির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল সে সময় কেনো কিছু বলেননি? তাই আজ সঞ্জয় দোষী নাকি নির্দোষ এসব প্রমাণের সুযোগ নেই । আজ শুধু হবে সাজা ঘোষণা যদি আপনি চান শাস্তির মেয়াদ কমানো হোক, সেক্ষেত্রে আপনার বক্তব্য থাকলে বলতে পারেন । অপরদিকে সিবিআই এর আইনজীবীদের দাবি, ধর্ষণ – খুন মামলায় সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ সাজা অর্থাৎ ফাঁসির হোক। অপরদিকে অভয়ার মা বাবা এবং তাদের পক্ষের আইনজীবীরা সকলেই ফাঁসির দাবি তুলেছেন । এমনকি সাধারণ জনগণ যারা অভয়ার জন্য প্রতিবাদের সুর চরিয়েছিল যারা দিনের পর দিন রাত দখল কর্মসূচি পালন করেছিল যারা দিনের পর দিন আমরণ অনশন করেছিল তারাও একই দাবি জানিয়েছেন যে দোষীর চরম তম সাজা অর্থাৎ ফাঁসি হোক । শুধু সঞ্জয়ই নয় এই ঘটনায় আরো অনেকে জড়িত রয়েছেন । এমনকি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদে রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, আমি চাই দোষীর ফাঁসি হোক অর্থাৎ পুলিশমন্ত্রি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও চান অপরাধীর ফাঁসি হোক। অপরদিকে বিচারক এও জানিয়ে দিলেন যে, সমস্ত কিছু তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আপনাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে । পাল্টা সঞ্জয় বলেন, আমি যদি ধর্ষণ – খুন করতাম তবে ধস্তাধস্তির সময় আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা ছিঁড়ে যেত। সিবিআই আমাকে মেডিকেল পরীক্ষা করার জন্য তিন তিনটে হাসপাতাল ঘুরিয়েছে । আমাকে অনেক কাগজ পত্র সই করিয়েছে । কিন্তু, সময় হয়তো শেষ । কারণ সঞ্জয়ের কাছে সুযোগ ছিল তার জবান বন্দির। অন্যদিকে সঞ্জয়ের আইনজীবী বলেন, সুপ্রিম কোর্টে এর বিরল থেকে বিরলতম ঘটনা আছে । সেক্ষেত্রে চারিদিক দরজা বন্ধ হয়ে গেলে অপরাধীর ফাঁসির সাজা হয় । কিন্তু, আমাদের কাছে দরজা খোলা রয়েছে । তাই সঞ্জয়ের আইনজীবী ফাঁসির সাজার তীব্র বিরোধিতা করেছেন । তাঁর কথায় একটা অবশ্য ইঙ্গিত স্পষ্ট যে তিনি উচ্চতর আদালতে আবেদন জানাবেন । তারপর বিচারক সব পক্ষের কথা শুনে এই সিদ্ধান্ত নিলেন যে দুপুর ২.৪৫ টায় রায়দান ঘোষণা করবেন । ৫ মাস ধরে জেলবন্দী রয়েছে সঞ্জয় । কিন্তু, তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কেউই আসেননি সঞ্জয়ের সঙ্গে দেখা করতে ।
বিচারকের রায় ঘোষণা

২.৪৪ টায় শিয়ালদহ আদালতের ২১০ নম্বর এজলাসে প্রবেশ করেন বিচারক অনির্বাণ দাস । তারপর নিয়ে আসা হয় ধর্ষণ – খুন মামলায় দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রাইকে । সবশেষে রায় দেন বিচারক । বিচারক বলেন, ৬৪,৬৬,১০৩ ( ১ ) অর্থাৎ ধর্ষণ – খুন – প্রাণঘাতির এই তিন মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে সঞ্জয় রাই। শিয়ালদহ নগর ও দায়রা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস রায়দান দিলেন দিলেন যে আরজি কর কান্ডের ধর্ষণ – খুন মামলায় সিভিক ভলান্টিয়ার দোষী সঞ্জয় রাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার দেওয়া হল ।জরিমানা অনাদায়ে আরও ৫ মাস জেল খাটতে হবে তাকে । পাশাপাশি নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য তাও ঘোষণা করেন বিচারক অনির্বান দাস।