সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ সাজার আবেদন

আর জি করে ধর্ষণ-খুন কাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া চলছিল দীর্ঘ ৫ মাস ধরে। নিম্ন আদালত অর্থাৎ শিয়ালদহ কোর্টে ১৮ ই জানুয়ারি এই মামলার রায় দেন বিচারপতি অনির্বান দাস। শুধুমাত্র অভয়ার ধর্ষণ-খুন কাণ্ডে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাইকেই উপযুক্ত তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করেন বিচারপতি। সঞ্জয় রাইয়ের ফাঁসি নয় বরং আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। অপরদিকে এই রায়ের বিরোধিতা করে এবং দোষী সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ সাজা অর্থাৎ ফাঁসির দাবি জানিয়ে উচ্চ আদালতে পাল্টা মামলা দায়ের করে রাজ্য সরকার ও সিবিআই। বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহঃ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে আজ অর্থাৎ ২৭ জানুয়ারী ছিল এই মামলার শুনানি। সোমবারের শুনানিতে রাজ্যের মামলা দায়েরের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সিবিআই এর আইনজীবীর দাবি, শিয়ালদহ কোর্টে এই মামলার পার্টি ছিল না রাজ্য সরকার। তাই সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতেও তারা মামলা করতে পারে না। মামলা প্রসঙ্গে পৃথক তিনটি মামলার উদাহরণও দেন সিবিআইয়ের আইনজীবী।
সঞ্জয়ের ফাঁসি চায় না অভয়ার বাবা মা!

আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের মামলায় দোষী সঞ্জয় রাইয়ের সর্বোচ্চ সাজা অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড চায় না নির্যাতিতার পরিবার! সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলার শুনানিতে পরিবারের আইনজীবী এমনই বললেন। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি ছিল। হাইকোর্টে পরিবারের হয়ে সওয়াল জবাব করেন আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত। এদিন সওয়াল-জবাবে আইনজীবী আরও বলেন, অভয়ার বাবা-মা চায় না যে দোষী সঞ্জয় রাইয়ের সর্বোচ্চ সাজা অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড হোক। বরং তাঁদের দাবি, প্রকৃত অপরাধী’রা এখনও অধরা, তাদের তদন্তের আওতায় আনা হোক। নিহত তরুণী চিকিৎসকের বাবা জানান, যারা অপরাধী, তাদের সকলকে গ্রেফতার করা হোক, এটাই তাঁদের দাবি।
কি বললেন বিচারপতি?

সিবিআই এদিন বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে দাবি করে যে, সাজা যথাযথ বলে মনে না-হলে শুধুমাত্র তাদেরই হাইকোর্টে আপিল করার অধিকার রয়েছে, কারণ তারাই মামলার তদন্তকারী সংস্থা। এই প্রশ্নের জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী এসভি রাজু দাবি করেন, “না, আইনগত দিক থেকে রাজ্যের অধিকার নেই ।যদিও রাজ্য সরকার পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলে, কেন্দ্রীয় সংস্থা ছাড়াও, তারাও ট্রায়াল কোর্টের দেওয়া সাজা সঠিক হয়নি বলে দাবি করে আপিল করতে পারে ৷ সওয়াল-জবাব শুনে বিচারপতি দেবাংশু বসাক রাজ্য সরকারের আইনজীবীর উদ্দেশে প্রশ্ন তুলে বলেন, একই দাবিতে মামলা তবে পৃথকভাবে গ্রহণযোগ্যতার অর্থ কী? আপাতত মামলার এই অংশ অর্থাৎ দুটি পৃথক মামলা গ্রহণ করা হবে কি না, সেই সংক্রান্ত শুনানি শেষ, এই মুহূর্তে রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছে। এদিকে জানা যাচ্ছে, সঞ্জয়ের হয়ে লিগাল এইডের আইনজীবীরা যারা শিয়ালদহ আদালতে লড়েছিলেন তারাই উচ্চ আদালতে লড়বেন। এদিন আরজি করের নির্যাতিতার আইনজীবী সুদীপ্ত মৈত্রর অভিযোগ, তাঁদেরকে আবেদনের কোনো কপি পাঠানো হয়নি । রাজ্যের এজি কিশোর দত্ত বলেন, “দিল্লি পুলিশ এসটাবলিশমেন্ট অ্যাক্টের 417-র (2) ধারা অনুযায়ী রাজ্যও আপিল জানাতে পারে, যদি কোনো আসামিকে বেকসুর খালাস করার নির্দেশ দেওয়া হয় অথবা নিম্ন আদালত যে শাস্তির নির্দেশ দিয়েছে সেটা যদি যথাযথ মনে না হয় ।” এদিন তিনি আরও বলেন, আইনের ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী কেন্দ্র মনে করছে যে এমন ধর্ষণ-খুন মামলায় শুধু তারাই আপিল করতে পারে। যদি শাস্তি উপযুক্ত বলে মনে না-হয়, তবে তারা রাজ্যের পাবলিক প্রসিকিউটরকে এই ধরনের আপিলের অনুমতি দিতে পারে ৷ বিচারপতি দেবাংশু বসাক তখন বলেন, “ভারতীয় ন্যায় সংহিতার BNS-এর ৪১৮ ধারা অনুয়ায়ী CBI যদি আপিল না-করে একমাত্র তখনই তদন্তের অগ্রগতির স্বার্থে রাজ্য এমন আপিল করতে পারে ।যদিও রাজ্যের এজির বক্তব্য ছিল, সিবিআইকে বিশেষ ক্ষেত্রে তদন্তের অধিকার দেওয়া মানেই রাজ্যের অধিকার উবে যায় না । আইন অনুযায়ী পাবলিক প্রসিকিউটরেরও অধিকার আছে আপিল করার । এ ব্যাপারে সিবিআইয়ের তরফে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু তথা আইনজীবীর মন্তব্য, মামলার সমস্ত রেকর্ড, কেস ডায়েরি, তথ্য-প্রমান সবকিছুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে । ৯ অগস্ট আর জি করে সেমিনার ঘর থেকে অভয়ার দেহ উদ্ধার হয়। ঠিক তারপর অর্থাৎ ১৩ অগস্ট হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ কলকাতা পুলিশের হাত থেকে মামলার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে হস্তান্তর করেছিল। ৭ অক্টোবর সিবিআই মামলার চার্জশিট পেশ করে । ১৮ জানুয়ারি নিম্ন আদালত রায় ঘোষণায় দোষী সাব্যস্ত করে সঞ্জয় রায়কে । এই মামলায় যুক্ত হতে চেয়ে নিম্ন আদালতে রাজ্য কোনও আবেদন পর্যন্ত করেনি । রাজ্য সিবিআইকে সহযোগিতা করারও কোনও চেষ্টা করেনি । এই ধরনের মামলায় রাজ্যের আপিলের এক্তিয়ারই নেই ।