নিউজ ডেস্ক , ০৭ জানুয়ারী : কালোমেঘ বা এন্ড্রোগ্রাফিস পানিচুলাটা এর উল্লেখ আমরা প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে পেয়ে আসছি। এর নিয়মিত সেবন শরীরকে নানা রকম রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। এর ঔষধি গুনের জন্য সংস্কৃতে একে “সর্ব রোগ নিবারণী” আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এর তিতকুটে স্বাদের জন্যে একে “কিং অফ বিটারনেস” বলা হয়ে থেকে। কালমেঘ পাতা সাধারণত ঘরোয়া, আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই পাতার রয়েছে নানা গুন, জেনে নেওয়া যাক –
১) ইনফ্লুয়েঞ্জা মোকাবিলায় সাহায্য করে – সাধারণ জ্বরের প্রাকৃতিক প্রতিকারে কালমেঘ পাতার গুনাগুন অপরিসীম। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে, প্রদাহ কমাতে, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সুরক্ষা প্রদান করতে, পেটের সাথে সম্পর্কিত সমস্যার জন্য কালমেঘ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কালমেঘের ব্যবহারের ফলে পেটের গ্যাস, বদহজম, পেটের কৃমি ইত্যাদি দূর হয়।
২) ত্বকের সমস্যা দূর করতে – কালমেঘ ত্বকের রোগ নিরাময়ে উপকারী। এতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি রক্ত পরিশোধনকারী ওষুধ। পাশাপাশি কালমেঘ ফোঁড়া এবং চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কার্যকর।
৩) লিভার জনিত সমস্যা নিরাময় করে – যে কোনো রকম লিভারের সমস্যার অব্যর্থ ওষুধ কালমেঘ পাতা। এটি লিভার টনিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অতিরিক্ত মদ্য পান, বা অতিরিক্ত কড়া ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করলে আমাদের লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কালোমেঘ পাতা এর নিরাময়ক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া আজকাল আমাদের খাদ্যাভাস বা ফল ও সবজিতে ব্যবহৃত পেস্টিসাইড আমাদের লিভারকে খারাপ করে দেয়। কালোমেঘের নিয়মিত সেবন এই সমস্যার সবথেকে ভালো সমাধান।
৪) জ্বর, সর্দি, কাশি নিরাময় করে – কালমেঘ পাতা জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যাথা, গলা বসে যাওয়া, টন্সিলাইটিস ইত্যাদি ক্ষেত্রে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কালমেঘ পাতা ভালো করে ধুয়ে হালকা গরম জল মিশিয়ে ছাঁকনিতে চেকে নিতে হবে। এই কালমেঘ পাতার রস যেকোনো রকম ঠান্ডা লাগা জনিত রোগ খুব তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। তবে এর স্বাদ অত্যন্ত তিৎকুটে, তাই রস খাওয়ার সাথে সাথে এক চামচ মধু খেয়ে নিলে ভালো।
৫) প্রদাহজনিত রোগ সারাতে সাহায্য করে – কালমেঘ পাতার উপকারিতা এতটাই যে এটি আলসারেটিভ কোলাইটিসের মতো জটিল রোগ সারিয়ে দিতে পারে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ যা বৃহদন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করে। ইমিউন সিস্টেমের ভুল কাজ করার কারণে এটি ঘটে।
৬) সাইনাস নিরাময় করে – যাদের সাইনাসের সমস্যা রয়েছে, যারা সাইনাসের ব্যথায় কাবু, তাঁদের ক্ষেত্রেও কালমেঘ পাতা খুবই উপকারী। এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং ইমিউনোমোডুলেটিরি বৈশিষ্ট্যর জন্য ব্যথার উপশম হয়। কালমেঘ সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
৭) টনসিল দূর করতে সহায়তা করে -টনসিলের সমস্যা কারও কারও ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী অস্বস্তির কারণ হয়ে যায়। খেতে পারেন না। গলায় ইনফেকশন হয়ে যায় অনেকের। এক্ষেত্রেও কালমেঘ পাতা উপকারী বন্ধুর ভূমিকা পালন করে। এটিতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং ইমিউনোমোডুলেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি টনসিলের প্রদাহকে বাধা দিতে পারে। এটি জ্বর, গলা ব্যথা এবং টনসিলাইটিসের সাথে জড়িত কাশি জাতীয় লক্ষণও হ্রাস করে। কালমেঘ পাতার রস টনসিলাইটিসের কারণে জ্বর এবং গলা কমাতে সহায়তা করে।