রায়গঞ্জ, ২৪ মে :দেশজুড়ে করোনার তীব্র দাপট। কোথাও অক্সিজেনের অভাব৷ আবার কোথাও হাসপাতালে বেড নেই৷ অতিমারিকালে এই জোড়া সংকটে যখন বেসামাল গোটা দেশ, প্রতিদিন করোনার ছোবলে স্বজন হারা হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ, তখন এলাকা থেকে কার্যত ‘নিরুদ্দেশ’ রায়গঞ্জের বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয়মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী৷
এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের সাধারণ মানুষের মধ্যে। তাঁদের অভিযোগ,এই অতিমারির সংকটের সময় নিজের দায়িত্ব কিছুতেই এড়াতে পারেন না একজন সাংসদ৷ তিনি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি৷ তাঁর দায়িত্ব লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় নাগরিকগণ করোনা অতিমারিকালে কেমন রয়েছে তার খোঁজ খবর নেওয়া৷ অথচ তার দেখা নেই লকডাউন পরিস্থিতিতেও৷ কোথায় রয়েছেন সাংসদ দিল্লিতে না রায়গঞ্জে? জানেন না রায়গঞ্জের মানুষ।করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণের জেরে নিমেষে প্রাণ হারাচ্ছেন আক্রান্তদের অনেকে৷ ফলে প্রতিদিন বহু মানুষ পরিবার পরিজনদের হারাচ্ছেন৷ এমতাবস্থায় করোনা সংক্রমণে রাশ টানতে গত ১৬ মে থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে ১৫ দিনের কড়া লকডাউন৷ করোনার ভয়ে সামান্য বাজার করেই কার্যত দিনভর ঘর বন্দি হয়ে থাকছেন সাধারণ মানুষ৷ উল্টোদিকে করোনার সংক্রমণে যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাঁদের জন্য রাজ্য সরকার ইটাহারের গোটলু হোম গার্ড ট্রেনিং সেন্টারের ভেতরে সেফ হোম চালু করেছে। পাশাপাশি রায়গঞ্জ গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ছাড়াও রায়গঞ্জের অত্যাধুনিক পরিকাঠামো যুক্ত দুটি বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে।আর এই লকডাউন পরিস্থিতিতে করোনা আক্রান্ত ও অসহায় মানুষদের কল্যানে রাজ্য সরকারের পাশাপাশি যখন বিভিন্ন মহল ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তখন আশ্চর্যজনকভাবে দেখা পাওয়া যাচ্ছে না রায়গঞ্জের সাংসদ ও কেন্দ্রীয়মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীর৷ যদিও তাঁর দলের বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বিলম্বে হলেও শনিবার অক্সিজেন পরিষেবা যুক্ত একটি অ্যাম্বুলেন্স চালু করেছেন।
কিন্তু সদ্য শেষ হওয়া বিধানসভা নির্বাচনের সময় দেবশ্রী চৌধুরী মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেও নির্বাচনে দলের ভরাডুবির পর থেকে তাঁকে আর কার্যত খুঁজে পাচ্ছেন না রায়গঞ্জের সাধারণ মানুষ৷ যে মানুষ প্রতিদিন দলের কর্মসূচি ও প্রচারে হাজির থাকতেন, সেই মানুষ রায়গঞ্জ থেকে উধাও এই অতিমারিকালের সংকটের সময়। এমনটাই অভিযোগ রায়গঞ্জের সাধারণ মানুষের৷ তাঁদের দাবি, এই করোনা অতিমারিকালে একজন সাংসদের উচিত এলাকায় থেকে মানুষের পাশে থাকা। তার ওপর দেবশ্রী চৌধুরী কেন্দ্রীয়মন্ত্রী৷ ইচ্ছে করলেই করোনা আক্রান্তদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা থেকে শুরু করে অক্সিজেন, খাবার, ওষুধপত্র এমনকি লকডাউনে অসহায় মানুষদের ত্রাণ সামগ্রীর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে পারেন অনায়াসেই৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, তাঁকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি কার্যত নিরুদ্দেশ। এই অতিমারির সময়ে একজন জনপ্রতিনিধি তাঁর দায়িত্ব এড়ান কী করে?’ তৃণমূলের অভিযোগ,ওনার এটা পুরনো অভ্যাস। বিপদের সময় ওনাকে মানুষ খুঁজে পান না। একজন সাংসদ হিসেবে উনি এই অতিমারিতে সবকিছু করতে পারেন সহায়তার ক্ষেত্রে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক তিনি অনুপস্থিত৷ তাঁর লোকজন তো রয়েছে৷ তারা মাঠে নামছে কেন? গত বছরও তাঁকে এলাকার মানুষ দেখতে পান নি৷ এবারেও একই ভূমিকা এই করোনা অতিমারিতে।’ অন্যদিকে উত্তর দিনাজপুরের বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, দেবশ্রী চৌধুরী সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। বেশকিছুদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। বর্তমানে কলকাতায় চিকিৎসকদের পরামর্শে বিশ্রামে রয়েছেন। তাই বলে হাত পা গুটিয়ে বসে নেই৷ তাঁর নির্দেশে অক্সিজেন পরিষেবা চালু রয়েছে। দেবশ্রী চৌধুরী শুধু এলাকার সাংসদই নন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও বটে৷ তাই সারা দেশের মানুষের কাছে তিনি দায়বদ্ধ৷ বিরোধীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন৷’ উল্লেখ্য সদ্য শেষ হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটেছে বিজেপির৷ ফলে পরাজয়ের কারণে মুষড়ে পড়েছেন দলের ছোটবড় সব নেতাই। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেসমস্ত ভিন রাজ্যের নেতারা রাজ্যে এসে একমাসের বেশি সময় ধরে ঘাঁটি গেড়েছিলেন তাদেরও আর দেখা নেই। তাই সাধারণ মানুষ বলছেন,’ভোট বড় বালাই। ভোটের জন্য নেতারা কিনা করতে পারেন। বাড়িঘর ছেড়ে কেউ কেউ দিনের পর দিন আশ্রয় নিতে পারেন অন্যত্র, তেমনই আবার কেউ কেউ অসহায় মানুষদের ছেড়ে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় নিজেকে ঘর বন্দি করে ফেলেন।’ ফলে রাজনৈতিক দলের নেতাদের এহেন দ্বিচারিতা নিয়ে তাই চিন্তিত সাধারণ মানুষ৷