আরসিটিভি সংবাদ : কোচবিহারের রাজারা যখন শিকারে যেতেন, তারা জঙ্গলের ভেতরে একাধিক কুঠিতে রাত কাটাতেন। আর সেই সব কুঠি আজও রয়েছে স্বমহিমায়, তবে ইতিহাসের ভারে আজ তা ঝুরঝুরে।
কোচবিহারের শেষ প্রান্তে, সেসব জঙ্গলে ঢাকা এলাকায় এখন আর পা পড়ে না কারও। তাই এইসব ইতিহাস বিজরিত জায়গাগুলোকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আজ থেকে কয়েকশো বছর আগেও কোচবিহারের রাজারা হাতির পিঠে চেপে, সৈন্য সামন্ত নিয়ে, ভুটান সহ অসম লাগাওয়া একাধিক জঙ্গলে হরিণ বাঘ শিকার করতে যেতেন।
আরও পড়ুন – ভালোবাসার দিনে রক্তক্ষরণ
বর্তমানে সেই এলাকার মধ্যে অন্যতম রামপুর ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। সেখানে প্রায় ৫৫ বিঘা জমির উপর ছিল রাজাদের ঘর। পরবর্তীতে সেগুলোর দখল নিয়েছিল ব্রিটিশ শাসকরা। সেই ৫৫ বিঘা জমির উপর শুরু হয় নীল চাষ। সেই সময় রামপুর এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, স্কুল, কারখানা সবই গড়ে তোলেন ইংরেজরা। গড়ে ওঠে বিশাল দীঘি যা সাহেবদের দীঘি নামেই পরিচিত।
ব্রিটিশ শাসনে কোচ রাজাদের গরীমা ধীরে ধীরে ধুয়ে মুছে সফ হয়ে যায়। তবে স্থানীয় বাসিন্দা হরেকৃষ্ণ সিংহ বলেন, এখানে সাহেবরা নীল চাষ করত। কারখানা, গুদামঘর তৈরি করা হয়েছিল। ইংরেজ শাসন শেষ হয়ে যাওয়ার পর সাহেবরা রামপুর এলাকা থেকে চলে যায়। তবে সেই পরিত্যক্ত ঘরগুলি সাহেবের ঘর নামেই পরিচিত থেকে যায়। আমরা চাই এই জায়গা এখন সংরক্ষণ করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হোক।
আরও পড়ুন – বিরল প্রজাতির রাজ হাঁসের আগমন ঘিরে উৎসাহিত সাধারন মানুষ
স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জিত ঘোষ বলেন, বহু পুরোনো আমলের সেই ঘর তৈরীর কাঠ, রাজ আমলের ব্যবহৃত সরঞ্জাম সিন্দুক আজও পড়ে রয়েছে সেখানে। এগুলোকে সরকার যাতে সংরক্ষণ করে সেই ইতিহাস বিজড়িত এলাকা বাঁচিয়ে তোলে সেটাই আমরা চাইছি। জীর্ণ ঘরগুলো মেরামত ও সংস্কার করে রাজগৌরব ফিরিয়ে আনা হোক। আবারও কথা বলে উঠুক বাংলার স্বর্ণময় ইতিহাস।
নতুন প্রজন্মের কাছে এই স্বর্ণময় ইতিহাস অতীতের সাক্ষী বহন করুক এটাই চাইছেন এলাকার সকলেই। সিঙ্গীমারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রামদুলাল সাহা রায় জানিয়েছেন, আমাদের এই বিদ্যালয়ও আমলেই তৈরি। বহু ইতিহাস রয়েছে এই এলাকাজুড়ে। আমরাও চাইছি ইতিহাস বিজরিত কোচবিহারের রামপুর এলাকা একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক। তাহলে এলাকার আর্থ সামাজিক পরিকাঠামোর উন্নয়নও হবে।