নিউজ ডেস্ক , ২১ সেপ্টেম্বর : এইমস। যার পুরো নাম অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স। স্বাধীনতার পর থেকে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকা উত্তরবঙ্গের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য এইমসের মতো আধুনিক উন্নতমানের হাসপাতাল রায়গঞ্জে গড়ে তোলার স্বপ্ন যিনি দেখিয়ে ছিলেন তিনি হলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী, ।
মূলত তাঁর উদ্যোগেই ইউ পি এ (১) সরকারের আমলে ২০০৯ সালের ৫ ই ফেব্রুয়ারী অর্থাৎ লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট রায়গঞ্জে এইমস স্থাপনের বিষয়টি মঞ্জুর করে। এরপর রায়গঞ্জের কুলিক নদীর ওপর দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি তা আর পূরণ হল কোথায়? তাঁর স্বপ্নের যে অপমৃত্যু ঘটেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁর স্বপ্নের এইমস এখন নদীয়া জেলার কল্যাণীতে উদ্ধোধনের অপেক্ষায় দিন গুণছে।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রাক্তন মন্ত্রী প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির প্রচেষ্টাতেই ২০০৯ সালের ৫ ই ফেব্রুয়ারী রায়গঞ্জে এইমস হাসপাতাল মঞ্জুর করে তৎকালীন কংগ্রেস পরিচালিত ইউপিএ সরকার(১)। এই উন্নত আধুনিক মানের হাসপাতালের জন্য ৯৬০ টি বেড বা শয্যা, ৩৯ টি স্পেশাল ও সুপার স্পেশালিটি বিভাগ থাকার কথা ছিল। প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনার আওতায় রায়গঞ্জে এই এইমস হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এই হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ৮২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। সেই সময় রাজ্যে বাম সরকারকে এইমস হাসপাতাল স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ১০০ একর জমি, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, রাস্তাঘাট সহ অন্যান্য পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছিল কেন্দ্রের তরফে।
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে এইমস হাসপাতালে মেডিকেল ও সার্জিকাল বিভাগে নিউরোলজি, নেফ্রোলজি-ইউরোলজি এবং গ্যাস্ট্রো-এন্টোলজি, কার্ডিও-থোরাসিক এবং ভাস্কুলার সার্জারি, ইন্টিগ্রেটেড মেডিকেল, সার্জিকাল এবং রেডিয়েশন অনকোলজি, ট্রমা কেয়ার, রিউম্যাটোলজি, চক্ষুবিদ্যা, প্লাস্টিকের সুপার-স্পেশালিটি ইউনিট থাকবে সার্জারি এবং পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি থাকার কথা ছিল। কিন্তু এই হাসপাতাল ঘোষণার পরই প্রিয়বাবু গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর স্বপ্নের এইমস হাসপাতাল নিয়ে ব্যাপক রাজনীতি শুরু হয় রাজ্যে। ফায়দা তুলতে আসরে নামে সবপক্ষই। বিস্তর জলঘোলা, রাজনীতির কূট কাচালি, জমি জটিলতা এবং সর্বোপরি কল্যাণীতে চলে যায় স্বপ্নের এইমস। ২০১৪-র কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর কল্যাণীতে এইমস স্থাপনের কাজে গতি আসে। বর্তমানে হাসপাতাল নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে। ঝাঁ-চকচকে আধুনিক মানের এই হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা থেকে স্বাভাবিকভাবেই বঞ্চিত হল উত্তর দিনাজপুর তথা উত্তরবঙ্গের সাধারন মানুষ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কিছুদিন আগেই বিহারের দ্বারভাঙ্গায় একটি এইমস হাসপাতাল গড়ার অনুমোদন দেয় বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার। যেখানে পাটনাতে ইতিমধ্যেই একটি এইমস হাসপাতাল রয়েছে।
বিহারে দুটি এইমস হাসপাতালের নির্মাণের যুক্তি দেখিয়ে এখন উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষও দাবি করছেন তাহলে রায়গঞ্জ আরেকটি এইমস হাসপাতাল স্থাপন করা হোক। কারণ কল্যাণীতে যদি এইমস হাসপাতাল নির্মাণ হয় তাহলে রায়গঞ্জে কেন এইমস হাসপাতাল তৈরি হবে না? উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষের যুক্তি নদিয়ার কল্যাণী থেকে কলকাতার দূরত্ব ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার। ঘণ্টাদেড়েকের মধ্যেই কলকাতা পৌঁছে যাওয়া যায়। কলকাতায় সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ছাড়াও একাধিক বেসরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল রয়েছে।
সেখানে উত্তরবঙ্গের মানুষকে আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা পেতে গেলে হয় কলকাতা নতুবা দক্ষিণ ভারতে ছুটতে হয়। আর এনিয়ে যথেষ্ট হয়রানি, ভোগান্তি এবং অর্থ অপচয় হয় সাধারণ মানুষের। স্বাভাবিক ভাবেই রায়গঞ্জে কেন আরেকটি এইমস হাসপাতাল স্থাপন করা হবে না তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সোচ্চার হয়েছেন উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়াতে এনিয়ে যথেষ্ট তৎপরতা শুরু করেছেন তাঁরা। উত্তরবঙ্গের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও চাইছেন অবিলম্বে রায়গঞ্জে আরেকটি এইমস হাসপাতাল স্থাপনের ব্যাপারে উদ্যোগ নিক বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী৷