নিজস্ব সংবাদদাতা, রায়গঞ্জ, ১৩ নভেম্বর : আজ ১৩ ই নভেম্বর কিংবদন্তি জননেতা তথা রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির জন্মদিন। ১৯৪৫ সালে আজকের দিনেই দিনাজপুর জেলার উপজেলা চিচির বন্দরে( অধুনা বাংলাদেশ) জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি৷ ছাত্রাবস্থা থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন রাজনীতির ময়দানে সুবক্তা বলে পরিচিত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি।
১৯৭০ সালে যুব কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। পরের বছর ১৯৭১ সালে প্রথম সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ। ওই বছরই লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা থেকে জয়ী হন প্রিয়রঞ্জন। এরপর ১৯৮৪ সালে প্রথম হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রে দাঁড়িয়েই জয়ী হয়ে প্রথমবার মন্ত্রী হন। বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সে সময়ে দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। তবে ১৯৮৯ ও ১৯৯১ সালের ভোটে পরপর পরাজিত হন তিনি। তবে পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে ফের বাজিমাত করে হাওড়া লোকসভা থেকে জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন প্রাজ্ঞ এই রাজনীতিবিদ। হাওড়া লোকসভা থেকে এরপর প্রিয়বাবু ফিরে আসেন তৎকালীন কংগ্রেসের দূর্গ বলে পরিচিত উত্তর দিনাজপুরে। এখানে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে ১৯৯৮ সালে প্রথমবার দাঁড়িয়ে সিপিআইএম প্রার্থী সুব্রত মুখার্জির কাছে সামান্য কিছু ভোটে পরাজিত হলেও ১৯৯৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে সুব্রত মুখার্জিকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সংসদে আঙিনায় প্রবেশ করেছিলেন প্রিয়রঞ্জন। বাজপেয়ি সরকারকে লোকসভার ভেতরে পর্যুদস্ত করতে কংগ্রেস হাইকমান্ড গুরুদ্বায়িত্ব সপে দিয়েছিল প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সীর কাঁধে। লোকসভায় কংগ্রেসের চিফ হুইপার বা মুখ্য সচেতক ছিলেন তিনি। এরপর ২০০৪ সালে সিপিআইএম প্রার্থী মিনতি ঘোষকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হন তিনি। লোকসভা ভোটে বিপুল সাফল্য পায় কংগ্রেস। বামেদের সমর্থনে কেন্দ্রে সরকার গড়ে কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী হন অর্থশাস্ত্রী ও প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ডঃমনমোহন সিং।
প্রথম ইউ পি এ সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটে বাংলা থেকে জায়গা পান প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী৷ কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের দায়িত্ব পান তিনি৷ এর কিছুদিন পরেও তাঁর কাঁধে আরও দায়িত্ব দেন কংগ্রেস সভানেত্রী। জল সম্পদের পরে কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলান তিনি। বিচক্ষণ ও সুবক্তা হওয়ার কারণে অন্যান্য জাতীয়স্তরের নেতাদের দক্ষতার থেকে কয়েকগুণ এগিয়ে ছিলেন এই রাজনীতিবিদ৷ রাজনীতির ময়দানে ইংরেজি, হিন্দি সহ বিভিন্ন ভাষায় যথেষ্ট দক্ষ ও সাবলীল ছিলেন দীর্ঘদিনের এই অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। সেকারণেই তাঁকে সমীহ করে চলতেন বিরোধীরাও। এমনকি দলের সংকটের সময় চাণক্যের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সমস্যা মিটিয়ে ফেলারও যথেষ্ট কৌশল জানা ছিল তাঁর। শুধু রাজনীতির ময়দানেই নয়, পাশাপাশি ফুটবল বিশ্বেও যথেষ্ট খ্যাতি ছিল তাঁর। ফুটবলঅন্ত প্রাণ হিসেবে সুপরিচিত এই বঙ্গসন্তান দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন প্রিয়বাবু। সাংসদ থাকাকালীন রায়গঞ্জ তথা উত্তর দিনাজপুর জেলাকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রিয়বাবু। দীর্ঘদিন কোমায় আচ্ছন্ন থেকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জীবন যুদ্ধের লড়াইয়ে হেরে যান পঞ্চমবারের সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী। ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ৭২ বছর বয়সে প্রয়াত হন তিনি। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে রায়গঞ্জ পুরসভার পক্ষ থেকে স্থানীয় শিলিগুড়ি মোড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে উন্মোচিত করা হয় তাঁর পূর্ণাবয়ব মূর্তির। গত ২ রা অক্টোবর সেই মূর্তির উন্মোচন করা হয়।