জন্মদিনের প্রাক্কালে রঙে রঙে স্মরণ বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী এম এফ হুসেন

ডিজিটাল ডেস্ক :  ১৯১৫ সালে  (১৭ সেপ্টেম্বর) মহারাষ্টের পন্ধরপুরে সুলেমানি বোহরা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন (Maqbool Fida Hussain)। তাঁর ঠাকুরদা গুজরাট থেকে পন্ধরপুরে এসে ছোটোখাটো ব্যবসা করে অর্থোপার্জন করতেন। তাঁর বাবা ফিদা মা জৈনব। মাত্র দেড় বয়সে তার মা মারা যান, তার বাবা ফিদা আবার বিয়ে করেন এবং পরিবার নিয়ে ইন্দোর চলে যান।

ইন্দোরে হুসেন প্রাথমিক শিক্ষার স্তর পার করেন। ছোটোবেলা থেকেই চিত্রকলার প্রতি অসীম টান ছিলো এম এফ হুসেনের। মা-হারানো হুসেন আজীবন খুঁজেছেন তাঁর মা-কে। তাঁর ছবিতে সেই খোঁজ স্পষ্ট। তথাকথিত ভাবে কারো কাছে তালিম ছিলো না বরং স্বশিক্ষিত চিত্রশিল্পী হয়ে ওঠেন তিনি। পরবর্তী সময়ে জে জে স্কুল অফ আর্টস থেকেও প্রশিক্ষণ নেন তিনি। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকেই জীবিকা নির্বাহের তাগিদে সিনেমার পোষ্টার আঁকা শুরু করেন হুসেন। পাশাপাশি খেলনাও তৈরি করেন। ১৯৪৭ সালে সমসাময়িক চিত্রশিল্পীদের নিয়ে তৈরি প্রোগ্রসিভ আর্টিস্ট গ্রুপে( Progressive Artists’ Group) যোগদান করেন তিনি।যার প্রতিষ্ঠাতা ফ্রান্সিস নিউটন সুজা। যা শিল্প জগতে একটি অবিস্মরণীয় পদক্ষেপ। কারন এরপর থেকেই ভারতীয় চিত্রকলা বিশ্বের দরবারে স্থান পায়।

    হুসেন প্রথম চিত্র শিল্পী হিসেবে পরিচিত হন ১৯৪০ সালে । তার প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী হয় জুরিখে ১৯৫২ সালে এবং পরের কয়েক বছরে তার কাজ ব্যাপক ভাবে বিস্তার লাভ করে ইউরোপ এবং আমেরিকাতে । সেসময় থেকেই ভারতের চিরাচরিত প্রতীক, রঙ, আকারকে আধুনিক চিত্রকলায় স্থান করে দেন তিনি। চিত্রকলায় তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ভারত সরকার ১৯৫৫ সালে পদ্মশ্রী ১৯৭৩ সালে পদ্মভূষণ ও ১৯৯১ সালে পদ্মবিভূষণে সম্মানিত করে তাকে। ১৯৮৬ সালে রাজ্যসভায় মনোনিত হন তিনি। সাংসদ হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালনের সময় তাঁর কিছু সৃষ্টি আজও সংসদের সম্পদ। পরিচালক হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। তাঁর তৈরি প্রথম ছবি “থ্রু দ্যা আইজ অফ এ পেন্টার” বার্লিনে গোল্ডেন বিয়ার অ্যাওয়ার্ড পায়। এছাড়ারাও ” গজগামিনী ” ও ” মীনাক্ষী -দ্যা টেল অফ থ্রি সিটিজ” ছবি গুলিও যে একজন চিত্রশিল্পীর দৃষ্টিভঙ্গিতে তৈরি তা স্পষ্ট। নিজের কর্মজীবনে দেবী মূর্তি নগ্ন ছবি সহ বিভিন্ন বিষয়ে বারংবার সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তবে অভিনেত্রী মাধুরি দীক্ষিতের (Madhuri Dixit) গুণমুগ্ধ ছিলেন হুসেন। ” হম আপকে হ্যায় কউন” (Hum aapke hai kaun) ৭৫ বার দেখেছিলেন।

      শুধু তাই নয় ছবির একটি সিরিজও মাধুরি দীক্ষিতের উপর তৈরি করেন তিনি। বিয়ের পর মাধুরি দীক্ষিতের কামব্যক ছবি আজা নাচলে (২০০৭) দেখতে দুবাই এর একটি সিনেমা হল পুরোটাই বুক করেছিলেন এম এফ হুসেন। জীবনের প্রথম পর্যায়ে খালি পায়ে হেঁটে এসেছিলেন ভারতের মুম্বাই শহরে। খালি পায়ে হাঁটা নিয়ে নিজের একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, কোথাও গেলে যে দিকটা সবার প্রথম লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, সেটা হলো পায়ের জুতা। এবং সেখান থেকেই সামাজিক মর্যাদা সম্পর্কে সিদ্ধান্তে উপনীত হয় সকলে। ধাবায় ঘুরতে খুব ভালোবাসতেন হুসেন। চাইলেই ফাইভ বা সেভেন স্টার হোটেলে থাকতে পারা হুসেন রাত শেষে ভোরে ধাবাতে যেতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। প্রায় ৫০ বছর ধরে খালি পায়ে হেঁটে বেড়িয়েছেন। কবিতা খুব ভালোবাসতেন হুসেন। কবি মুক্তি বোধ সে সময় দিল্লীতে গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় চেতনহীন ছিলেন কয়েক মাস। এরপরই মারা যান তিনি। যখন হুসেন তার শেষকৃত্যে যান, সেসময় হঠাৎ এক অবহেলার ভাবনা মাথায় জাঁকিয়ে বসে তাঁর।

      সারা জীবনে একটিও বুকলেট প্রকাশিত হয় নি মুক্তিবোধের । এতটাই অবহেলায় দিন কেটেছিলো। হিন্দি কবিতায় তাকে আমি একজন বড় মাপের কবি মনে করি। ঠিক সেই সময় মানসিক কষ্টর বহিঃপ্রকাশ হিসেবে নিজের পায়ের জুতা খুলে নেন হুসেন। বিশ্বব্যাপী পথ চলা শুরু হয় খালি পায়ে।তাঁর ছবিতে ক্যুউবিজম ধরা পড়ে। তাঁর আঁকায় পিকাসোকে মনে পরে যায়। হিন্দুধর্ম ও পুরাণ, ইতিহাস, রাজনীতি, সাহিত্য, ব্যক্তিত্ব সবটাই প্রকাশ পেয়েছে তাঁর ছবিতে। রামায়ণ, মহাভারত থেকে ব্রিটিশ রাজত্বকাল, মহাত্মা গান্ধী থেকে মাদার টেরেসা, ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন—সব ফুটে উঠেছে তাঁর সিরিজ গুলিতে।
      ৯ জুন, ২০১১ তে লন্ডনে ৯৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

      Next Post

      করোনার দাপট অব্যাহত, আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ লক্ষ পার করল ভারত

      Wed Sep 16 , 2020
      Share on Facebook Tweet it Share on Reddit Pin it Share it Email নিউজ ডেস্ক, ১৬ সেপ্টেম্বর : ভয়ংকরভাবে দেশজুড়ে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে করোনা (CORONA) আক্রান্তের সংখ্যা। বুধবার করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ লক্ষ পার করল গোটা দেশে। পাশাপাশি গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৯০ হাজার ১২৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গত […]

      আপনার পছন্দের সংবাদ

      RCTV Sangbad

      24/7 TV Channel

      RCTV Sangbad is a regional Bengali language television channel owned by Raiganj Cable TV Private, Limited. It was launched on August 20, 2003, as a privatecompany. The channel runs a daily live broadcast from Raiganj, West Bengal. The company also provides a set-top box.

      error: Content is protected !!