নিউজ ডেস্ক ১০ সেপ্টেম্বর : ২০০৩ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হচ্ছে আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। ১০ সেপ্টেম্বর দিনটি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন (I A S P)
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলথের (WFMH) বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া প্রত্যেকেরই মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু কিছু সাইকোলজিক্যাল চেঞ্জ মৃত্যুর কারন হয়ে দাড়াতে পারে। প্রতি বছর আনুমানিক এক মিলিয়ন মানুষ আত্মহত্যা করেন। ২০০৪ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আত্মহত্যার ফলে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা প্রতি বছর প্রায় ১.৫ মিলিয়ন পৌঁছচ্ছে। শারীরিক অসুস্থতার চিকিৎসা করানোর প্রবণতা মানুষের মধ্যে থাকলেও এখনও মানসিক চিকিৎসার কথা শুনলে “পাগল”, “পাগলামি” এই ধরনের ট্যাবু অনেকেই কাটিয়ে উঠতে পারেননি ।
শারীরিক অসুস্থতার মতই মানসিক অসুস্থতাতেও কোনো রোগী একদিনে বা এক মহুর্তে আক্রান্ত হয় না। প্রয়োজন “অবসাদ” নামের এই অসুস্থতা বোঝা ও কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা। WHO এর মতে বিশ্ব জুড়ে হিংসা হানাহানিতে সমস্ত মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক সংখ্যক আত্মহত্যার সংখ্যার সমান। তার উপর কোভিড ১৯ এর পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। ক্রমেই কথা বলা, মানসিক চিন্তাভাবনার আদান প্রদান কমছে। আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস আত্মহত্যা নিয়ে নানা কর্মসূচীর মধ্যেই বর্তমান পরিস্থিতিতে অবসাদ – আত্মহত্যা নিয়ে কি করা উচিত, কেনই বা মানুষ অবসাদে ঘিরে ফেলছে নিজেকে, কিভাবে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে নিজেদের তা নিয়ে আর সি টি ভি সংবাদের সাথে কথা বললেন বিশিষ্ট চিকিৎসক জয়ন্ত ভট্টাচার্য।
“আত্মহত্যা – মানুষের মনে হঠাৎ আসা একটা ড্রাইভ – যা কারোর ক্ষেত্রে একবার বা একাধিক বার আসতে পারে। কোনোভাবে সেই ড্রাইভ কাটিয়ে ওঠাতে পারলে বাঁচানো যেতে পারে সেই মানুষটিকে। এটি জটিল নিউরোলজিকাল মেকানিজমের ফলে হতে পারে। বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতিতে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। মূলত দুটি বিষয় এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।
১) অবদমিত আতঙ্ক
২)মৃত্যু ভয়ের আশঙ্কা
এতেই আক্রান্ত হচ্ছে বিশ্বের মানুষ।কিন্তু বাস্তব চিত্র অনুসারে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের হার অনেক বেশি হলেও তাতে ৮০ % মানুষ কোনো রকম মেডিক্যাল সাপোর্ট ছাড়াই সুস্থ হচ্ছেন। ১৪ % আক্রান্তের হসপিটালাইজেশনের প্রয়োজন হয়। ৫% আক্রান্তের আই সি ইউ, ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়। আর এই ৫ % এর ৪৯% রোগীর মৃত্যু হয়। তাই মৃত্যু হার অনেকটাই কম। কিন্তু কে মারা যাবে তা হয়তো কেউ বলতে পারছে না।
সেজন্যই আতঙ্কের সৃষ্টি হচ্ছে মানুষের মধ্যে। আর থেকে বাঁচতে স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত মানুষকে সরে আসতে হচ্ছে ভালো লাগা সব কিছু থেকে। “লকডাউন” পরিভাষার আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে শিশুদের খেলাধুলা, বড়দের গল্প করা, গান বাজনা, সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে একত্রিত হওয়া। নিজেকে গুটিয়ে নিতে হচ্ছে ঘরের চার দেওয়ালে। মাস্ক পড়া, দূরত্ব বজায় রাখা, স্যানিটাইজ হওয়ার মত কিছু বিচিত্র অভ্যাস আয়ত্ত করতে হচ্ছে। নতুনভাবে নিজেকে নির্মান করা, “আত্মগত” করার লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে বাঁচার তাগিদে।
যা মানসিক চাপ তৈরি করছে। তার ফল হিসেবে কিছু সংখ্যক মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার “ড্রাইভ” সৃষ্টি করছে। এটিকে নিউনর্মাল বলে ব্যাখ্যা করা হলেও আসলে এটি “অ্যাবনর্মাল”। ‘সাইকোলজি’ ও ‘নিউরোলজি’ অনেকাংশেই রিলেটেড। সাইকোলজি মমনের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর নিউরোলজি তার অবজেক্টিভ দিক।” সম্প্রতি সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু ও ড্রাগ অ্যাঙ্গেল প্রসঙ্গে আত্মহত্যায় ড্রাগ এর ভূমিকা নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ” কিছু এমন মেডিসিন আছে যার ব্যবহার নিউরোট্রান্সমিটার সেরোটমিন লেভেল বাড়িয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে হ্যালুসিনেশন হতে পারে। এমনকি রোগী আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের সেল্ফ কনফিডেন্স ভাঙছে। যার ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।
সাইকোলজিস্টরা এক্ষেত্রে রোগীর সাথে খোলামেলা আলোচনা ও কিছু মেডিসিনের মাধ্যমে সেই ‘ড্রাইভ’ কাটাতে সাহায্য করেন। রোগী সমস্ত আশা আকাঙ্খা চাহিদা সেটা যতই ব্যক্তিগত বা তথাকথিত ‘ কুরুচিপূর্ণ ‘ হোক তার খোলামেলা আলোচনা প্রয়োজন। এর মাধ্যমেই সাপ্রেসড ইমোশন ডাইভার্ট করা যেতে পারে।
বহুক্ষেত্রেই সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং এর পর মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রয়োজন অবসাদ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা।” করোনা পরিস্থিতিতে গ্লোবাল এই ডিপ্রেশন কাটাতে, অবসাদ ও মৃত্যু ভয় থেকে কাটিয়ে উঠতে, নিজেকে বাঁচতে সাহায্য করতে তাই বন্ধুদের সাথে কথা, কনফারেন্স কল, টেলিমেডিসিন বা ভার্চুয়াল যোগাযোগকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।