নিউজ ডেস্ক, ২৩ অক্টোবর : সারাবছর ধরে বাঙালির একের পর এক উৎসব লেগেই থাকে, আর তারই মধ্যে অন্যতম দুর্গাপুজো। এই সময় সপরিবারে মা দূর্গার আগমন ঘটে মর্ত্যে। চারদিন ধরে চলে উমার আরাধনা।
মা দূর্গা তাঁর চার সন্তান লক্ষী, গণেশ, সরস্বতী ও কার্ত্তিক কে নিয়ে মর্ত্যে এলেও পুজোর চারটে দিন গণেশের পাশে লাল পাড় সাদা অথবা হলুদ শাড়ী পড়িয়ে ঘোমটা দিয়ে একটি কলাগাছের সাথে আরও অন্য গাছকে বেঁধে রাখা হয়। জনশ্রুতি অনুযায়ী অনেকেই এটিকে গণেশের স্ত্রী মনে করেন। কিন্তু গনেশের স্ত্রীদের নাম রিদ্ধি ও সিদ্ধি। এটিকে “নবপত্রিকা” বলা হয়। পত্রিকা মানে পাতা হলেও আসলে নবপত্রিকা হলো নয়টি গাছ। নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে কল্পিত। বৃহৎ নন্দীকেশর পুরাণে দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিনে নবপত্রিকার পুজোর বিধান দেওয়া আছে। নবপত্রিকায় নয়টি উদ্ভিদের অংশ দিয়ে একটি প্রতীক তৈরি করা হয়। সেগুলি হল – ধান গাছ, ডালিম গাছ, জয়ন্তী গাছ, বেলগাছ, কচু গাছ, কলা গাছ, মানকচু গাছ, হলুদ গাছ, অশোক গাছ। শাস্ত্র মতে এই ন’টি গাছের মধ্যে দিয়েই দেবী দূর্গার নবরুপ প্রকাশ করা হয়েছে। এই নবদূর্গা বছরে দু’বার পুজিতা হন, শরত ও বসন্তে। এই নবপত্রিকার আয়ুর্বেদিক গুণাবলিও রয়েছে।
ধানগাছ – ধান গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মী। ধান গাছ প্রাণীদের প্রাণদাত্রী। ধান থেকে চাল ও চাল থেকে ভাত হয়। আহারে ভাতের গুণাগুণ অপরিসীম।
ডালিম গাছ – ডালিম গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা। ডালিম দেহের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। এতে অ্যানেমিয়া ও রক্তের নানা সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রাখে।
জয়ন্তী গাছ – জয়ন্তী গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কার্তিকী। এই গাছে পাতা ও ডালপালা বাটা জ্বর, বসন্ত রোগ, ডায়াবেটিস সহ শ্বেতী ও বাতের ব্যথায় খুব উপকারী।
বেলগাছ – বিল্ব গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শিবা। বেল কাম দমন করতে সহায়তা করে। পাশাপাশি বেল পেটের জন্যে খুবই উপকারী যার কারণে একে শ্রীফলও বলে।
কচু গাছ – কচু গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কালিকা। গেঁটে বাত ও অশ্বে কচু উপকারি পাশাপাশি রক্ত পরিশোধক হিসেবেও কচুর গুন অপরিসীম।
কলা গাছ – কলা গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ব্রহ্মাণী। কলা গাছের প্রতিটি অংশই ব্যবহারযোগ্য। শিকড়ে রক্তদূষণ নিরাময় হয়। পাতার ডাঁটির রসে কর্ণশূল, পাতা পোড়ানো ছাইয়ে ছুলি, কাঁচকলায় অতিসার ও প্রদর প্রভৃতি রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে৷ পাকা কলায় থাকে খনিজ ও ভিটামিনের নানাগুণ।
মানকচু গাছ – মানকচু গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী চামুণ্ডা। নানাবিধ ব্যাঞ্জনে সুস্বাদু পুষ্টিকর খাবারে এটি রক্তশুদ্ধি হিসেবে রান্নাঘরে নিজের স্থান করে নিয়েছে।
হলুদ গাছ – হলুদ গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী উমা। জীবাণুনাশক গুন থাকায় কেটে যাওয়া ও মচকানো স্থানে হলুদ বাটার প্রলেপ লাগালে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
অশোক গাছ – অশোক গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শোকরহিতা। স্নায়ুরোগ, অশ্ব, রক্তবর্ণ ও স্ত্রীরোগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
সমাজতত্ববিদরা বলে দুর্গাপুজো আসলে প্রতীকে কৃষিসমাজের আরাধনা সে কারণেই জনগণেশের পাশেই নবপত্রিকা রাখা হয়। কারণ তারাই মাঠে নামেন, ফসল ফলান, এবং রক্ষা করেন সৃষ্টি।