fbpx

বেলতলার মাঠে ব্রহ্মদৈত্যির গপ্প..

ভূতুড়ে গপ্প

ডঃ শান্তনু চট্টোপাধ্যায় :  কেউ জেনে যায়, কেউ না-জেনে। যারা জেনেশুনে বেলতলায় যায় তারা মনে হয় অতি সাহসী বা পেটের টানে যায়। হারান মাঝি বলল ‘যেতে-তো হবেই কাকা ! না-গেলে চাষাবাদ করি কি-ভাবে! আমি জানালাম- ‘হক কথা।’ তা, দখিনমাঠের নেড়া বেলতলায় নয় নয়  করে এ’গাঁয়ের অর্ধেক চাষির ক্ষেত জমি আছে। নদীর ইজারা আছে জেলোদের। তাদেরও যেতে হয় আঁধার ভোরে। দু’একটা ঘটনা ছাড়া এরকম কেজো লোকের কোনো অঘটন ঘটে নাই। যত ঘটনা ঘটে শুনসান দুপুরে কিম্বা রাত্রিবেলায়।

ব্রহ্মদৈত্যির দোষ নাই। পথচারীরও দোষ দিই কি-করে! উপায় নাই যে ও-পথ এড়িয়ে যাওয়ার! একেই বলে মরণ ফাঁদ! আবার লক্ষ্য করে দেখবেন, যেখানে ভূতের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়। নদীর ও-পারের গ্রাম থেকে এ’গ্রামে আসার যে মোটা আলপথ, তার ধারেই সেই কুখ্যাত বেলগাছটা।  কবে থেকে যে আছে ব্যাটা। হারান মাঝি আবার শুরু করল বলতে- ‘গত বছর, কাশী মোড়ল তার ছোটছেলে মোহনের ন-সমন্ধ করে ফিরছিল বেয়াই বাড়ি থেকে। ধূলাপুর পার করে সেনপাড়া গ্রাম ঢুকতে জমাট আঁধার নেমে এলো। সেনপাড়ার পর সেই নদী। আর নদী পাড়ের আলপথে কুখ্যাত বেলগাছ।এসব হাতের তালুর মতো চেনা চাষি কাশী মোড়লের।

তবু এমন আঁধার দেখে ও বুঝে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল যেন।একবার ভাবল পড়শি-গাঁয়ের কাউকে বলবে কি-না কিছুটা এগিয়ে দেবার জন্য। তারপর নিজেই সিদ্ধান্ত বদল করল এই ভেবে যে সবাই প্রচার করে দেবে জীবনপুরের কাশী মোড়ল ভিতু। খুব লজ্জার ব্যাপার হবে সেটা। এদিকে কাশী মোড়লের হাতব্যাগে বেয়াই বাড়ীর পাঠানো মিষ্টি, মাছ, মাংস, বোঁদে রয়েছে।এগুলোর মধ্যে মাছটা আবার বেয়াইদের পুকুরের জ্যান্ত আড়াই কিলো ওজনের কাতলা! ব্যাগের ভেতর মাছটার ল্যাজ ঝাপ্টানোর মোচড়ও অনুভব করেছে মোড়ল কিছুক্ষণ আগে।

সেনপাড়া ছেড়ে নদীর ঢালু-গর্ভে নেমে যাচ্ছে কাশী মোড়ল। এ তল্লাটে ডাকাত, ভূত, রাজনৈতিক অপদেবতা যাকে ভয় পেত সেই স্বর্গীয় জিতেন মোড়লের ছেলে কাশী মোড়ল। তার দেহে সেই রক্ত বইছে! মেয়ে দুটোর বিয়েতে অনেক জমি বিক্রি করেও কাশীর জমি এখন কুড়ি বিঘের কম নয়।হাতে লাঠি বা টর্চ না থাকলে কি হবে, এইসব আত্মবিশ্বাসমূলক ভবিষ্যৎ ও নিজের বর্তমানকে বাগিয়ে ধরে পা দিল নদীর ঠাণ্ডা জলে। মোড়ল বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ভাবছিল বটে তা বলে ভুলে যায়নি ভূতের কথা। আজকের জলটা বড্ড ঠাণ্ডা লাগছে যেন তার। পায়ের তলায় একটা কী ফুটে গেল যেন! ঝিনুক? কাচ? ঘটিং? বাবলা কাঁটা? না-কি বেল…? অমনি মোড়ল হাঁটুজলেই বাবা গো চিৎকার ক’রে কোমরতক হেলে গিয়ে ভিজে গেল।আঁধারে ভিজে গেল বোধহয় হাতের ব্যাগ।

ভিজে বিড়ালের মতো আবার ঢালু পথ আর দু’ধারে বেনাঝোপ ঠেলে মোড়ল এসে পড়ল নিজগ্রাম জীবনপুরের ক্ষেত সীমায়।সেদিন ঘুটঘুটে আঁধার রাত ছিল। একে অমানিশা সঙ্গে চতুর্দশীযুক্ত মঙ্গলবার। দূরে ভচ্চার বাড়ির কালী মন্দিরে ঢাকবাদ্যের শব্দ  কানে স্পষ্ট এলো মোড়লের।নাকে যেন ধূপ-ধুনোর গন্ধ পেলো মোড়ল। কিন্তু, এই আঁধার রাতের ফাঁকা মাঠে এসব আসছে কেন তা জানা নাই মোড়লের।পাড়ে উঠে মোটা আলপথ ধরে হাঁটছে মোড়ল। আন্দাজে পা-ফেলা আরকি। ভিজে ধুতি ব্যাগ বড্ড পায়ে পায়ে জড়াতে লাগল।মোড়ল ঘাড় ঘুরিয়ে একবার বাঁদিক একবার ডানদিক তাকাতে থাকল।বাঁহাতে দেখা গেল বাবলাবন।বাবলার নিচে সেই আকন্দা আর বেনাঝোপ জমাট কালো পাথরের মতো ঘাপটি মেরে বসে। মোড়লের পা দুটো কে যেন চেপে জড়াতে থাকছে। হাতের ব্যাগটা থেকে কে যেন সমস্ত মিষ্টির রস শুষে খেয়ে নিচ্ছে। সব টের পাচ্ছে মোড়ল কিন্তু দাঁড়াবার উপায় নাই।একটু এগিয়ে গেলে পালেদের বাকুড়ি। সে জমিটায় ঘন আখচাষ হয়েছে। ওটার পাশেই যে বেলগাছ! মোড়ল একবার দাঁড়াল।   

নদীজল পেয়ে মাছটা খুব ছটফট করছিল ব্যাগে। মোড়ল টের পেল কিছু। পালেদের আখজমি থেকে নেমে গেল ডানদিকের ধানজমিতে। উদ্দেশ্য বেলতলাকে পাশ কাটিয়ে বাড়ি ফেরা।  ধানজমিতে আঁধারে নামলে নানা ভয় ও বিপদ আছে তা জানে মোড়ল।তবু উপায় নাই। জমিতে নামতেই ব্যাগে লাগল জলের স্পর্শ। কাতলা মাছটা আবার ছটফট করে উঠল। ব্যাগ হাতে রাখা যায় না এমন মোচড় মারছে মাছটা। মোড়লের পা গেঁথে যাচ্ছে কাদা জলে। মোড়ল প্রাণপণে ছুটছে সোজ উত্তর দিকে। বাড়ি পশ্চিমে। পিছনে ভচ্চার বাড়ির কালীপুজোর ঢাকবাদ্য কানে আসছে।কোনাকুনি দখিনে সেই বেল গাছের মাথা দেখা যাচ্ছে। মোড়ল ছুটছে। হঠাৎ সামনে ঘোমটা মাথায় দাঁড়াল কে যেন! মোড়ল জলে ঘামে কাদায় ভিজে একসা। তার ওপর এরকম অবস্থার মুখে দাঁড়িয়ে বু- বু- বু শব্দ করতে শুরু করল। প্রথম প্রহরের মেঠো শিয়ালগুলো পিছনে নদীর ধার ধরে হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া জুড়ে দিল। গাঁয়ের কুকুরগুলোর ঘেউ ঘেউ কানে এলো মোড়লের।কতো কুকুর মোড়লের বাড়িতে আশ্রিত। কিন্তু এখন কারোর দেখা নাই! ঘোমটাওয়ালি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। সে যেন অপেক্ষা করছে কারোর জন্য।মাছটা আবার ব্যাগের ভেতর লাফিয়ে উঠল যেন। ঘোমটার পিছন দিকে আচমকা দেখা দিল উজ্জ্বল আলো।পিছনে সেই বেলতলা। মোড়লের জ্ঞান আছে কি না তা মোড়ল বুঝতে পারল না। তার পথের চারদিক এখন বন্ধ। মোড়লের জ্ঞান যখন ফিরল তখন সে একটা আলের ওপর শুয়ে ছিল। তার পাশে ছেলে মোহন ও  তার বন্ধুরা দাঁড়িয়ে।’

আমি জিজ্ঞাসা করলাম ‘তা হারান, ভূত বা ব্রহ্মদত্যিকে দেখতে পেয়েছিল মোড়লমশাই?’ হারাণ মাঝি উত্তরে জানালো—‘দেখা মানে! গায়ে কাঁটা দিচ্ছে দেখো। সাক্ষাৎ সামনে মেয়েদের রূপ ধরে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। ব্যাগে যে মাছ ছিল সেটা জানো কাকা বাড়িতক জ্যান্ত ছিল।অনেকে বলেছিল মাছটা আর খেয়ো না। কিন্তু কাশী মোড়লের ছেলে মোহন ফেলতে দেয় নাই। হবু শ্বশুরের পাঠানো মাছ বলে কথা না!’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম ‘আর ওই যে, পায়ে কী ফুটেছিল তার কী হলো?’ উত্তর সংক্ষিপ্ত- ‘কে জানে!’

লিখেছেন – ডঃ শান্তনু চট্টোপাধ্যায়

Next Post

বেহাল রাস্তার কাজ শুরু, খুশি এলাকাবাসী

Sun Sep 20 , 2020
Share on Facebook Tweet it Share on Reddit Pin it Share it Email নিউজ ডেস্ক , রায়গঞ্জ , ২০ সেপ্টেম্বর :  দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়েছিল রায়গঞ্জের ১০ নম্বর রাজ্য সড়কের সংযোগস্থল চন্ডীতলা থেকে আব্দুলঘাটা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারের বেশি রাস্তা। ফলে চলাচল করতে তীব্র সমস্যায় পড়তেন বাসিন্দারা। অবশেষে রাস্তাটি […]

আপনার পছন্দের সংবাদ

RCTV Sangbad

24/7 TV Channel

RCTV Sangbad is a regional Bengali language television channel owned by Raiganj Cable TV Private, Limited. It was launched on August 20, 2003, as a privatecompany. The channel runs a daily live broadcast from Raiganj, West Bengal. The company also provides a set-top box.

error: Content is protected !!