হরিশ্চন্দ্রপুর, ২৭ জুলাই : প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে গিয়ে ব্লক অফিস থেকে পঞ্চায়েত সদস্যদের অপহরণের অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়ালো হরিশ্চন্দ্রপুরে।যদিও পাল্টা অপহৃত হয়েছে পঞ্চায়েত প্রধান এমন অভিযোগে দিনভর উত্তাল হয়ে রইল হরিশচন্দ্রপুর ২ ব্লক অফিস চত্বর।
উল্লেখ্য, দৌলতনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ২০টি আসন রয়েছে। তৃণমূল পরিচালিত এই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে দলেরই আরেক সদস্য পিন্টু কুমার যাদব সহ ১২ জন সদস্যের স্বাক্ষর সম্বলিত অনাস্থা প্রস্তাব ব্লক প্রশাসনের কাছে পেশ করে।মঙ্গলবার ছিল ওই ১২ জন সদস্যের সই ভেরিফিকেশন। সেই হিসেবে বিক্ষুব্ধ সদস্যরা ব্লক অফিসে উপস্থিত হতেই হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জুবেদা বিবির স্বামী তথা এলাকার যুব তৃণমূল নেতা আশরাফুল হকের নেতৃত্বে প্রায় ৫০-৬০ জনের একটি সশস্ত্র দল ওই ১২ জন পঞ্চায়েত সদস্যকে জোর করে সেখান থেকে অন্যত্র নিয়ে যেতে চেষ্টা করে।এনিয়ে বিক্ষুব্ধ সদস্য ও আশরাফুল হকের সঙ্গীদের মধ্যে ব্লক চত্বরেই হাতাহাতি বেধে যায়। গন্ডগোলের সময়েত ভাঙচুর চালানো হয় ব্লকের সদ্ভাব মন্ডপের আসবাবপত্রে। এরমধ্যে ওই বিক্ষুব্ধ ১২ জন সদস্যের মধ্যে ১১ জনকে অন্যত্র সরিয়ে দিলেও একজন কোনক্রমে পালিয়ে যায়।এই ঘটনায় হরিশচন্দ্রপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ হাসান জানিয়েছেন, এদিন প্রায় ৫০-৬০জনের দল আসে সেখানে। তাদের প্রত্যেকের হাতে বন্দুক, গুলি ছিল। এরপরে তারা জোর করে ১২জন সদস্যকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ব্লকের সিসিটিভি ফুটেজেও তা ধরা পড়েছে। এই ঘটনায় ঘন্টাখানেকের মধ্যে সদস্যদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী জানায় তারা।এই ঘটনার জেরে বিক্ষুব্ধ সদস্যদের সঙ্গীরা লোহা ব্রিজে অবরোধ চালায়। পুলিশের গাড়ি আটকে চলে বিক্ষোভ। এমনকী পুলিশের সামনে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দুপক্ষই।পরে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা আইসি সঞ্জয় কুমার দাসের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয় র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স।এই ঘটনায় হরিশচন্দ্রপুর ২ব্লকের বিডিও বিজয় গিরি জানিয়েছেন, এদিন বেলা সাড়ে এগারোটার সময় দেওয়া থাকলেও ওই সদস্যরা সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ব্লকে চলে আসে। এরপরেই তাদেরকে নিয়ে যায় ৫০-৬০জনের একটি বাহিনী। পুলিশকে খবর দেওয়া থাকলেও তাদের আসার সময় ছিল দশটা। কিন্তু তার আগেই এই ঘটনা ঘটে।এই ঘটনায় পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে জেলাশাসককেও।অন্যদিকে অপহৃত হওয়া বিক্ষুব্ধ সদস্যদের সমর্থকেরা স্লুইসগেট সংলগ্ন প্রধানের ব্যক্তিগত অফিসে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। যদিও সেসময় প্রধান নাজিবুর রহমানকেও অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনেছে প্রধানগোষ্ঠীর সদস্যরা।যদিও এবিষয়ে মালদা জেলা তৃণমূল কো অর্ডিনেটর দুলাল সরকার জানিয়েছেন, প্রধান দূর্নীতিগ্রস্ত হলে ব্যক্তিগত ভাবে অনাস্থা না এনে দলকে জানাতে হবে। দল তখন সেই প্রধানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু হরিশচন্দ্রপুরের এই পঞ্চায়েতে সদস্যরা নিজে থেকেই অনাস্থা আনে। এই পদক্ষেপকে দল কোনভাবেই সমর্থন করেনা। এই গন্ডগোল বন্ধে প্রশাসনকে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।পাশাপাশি দলের পক্ষ থেকেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুলালবাবু।
আরও খবর পড়ুন : আফগানিস্তানের পর ইরাক থেকেও সেনা প্রত্যাহার করছে আমেরিকা