সুমন ভট্টাচার্য , ১৯ অক্টোবর : ছবিটা টুইট করবো না ইয়োবো তে শেয়ার করব,ভাবছিলাম। নাতনির ছবি তো। আমাদের পরিবারের প্রথম কেউ চাঁদে গেল ২০২০ সালে যখন নাসা মিশন ২০২৮ ঘোষণা করে আর জানিয়ে দেয় নোকিয়া কে সেখানে ফোর জি নেটওয়ার্ক তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হল, সেইদিন থেকে আমি ভেবেছি,আমার চেনাশোনা কেউ নিশ্চয়ই চাঁদ থেকে ফোন করবে। অবশেষে নাতনি করল। রেঁনেশা, রেঁনেশা গর্বাচেভ।
আমার মেয়েটা যেদিন বিদেশে পড়তে গিয়ে ভাব জমানো বয়ফ্রেন্ডের পদবীটা বলেছিল,আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। উফফ,এই একটা পদবীকে আমি এত শ্রদ্ধা করি যে, প্রায় পুজো করতে পারি। শ্রীচৈতন্য যদি একধরনের অচলায়তনকে ভেঙে থাকেন, তাহলে এই একটা পদবী পাষাণকে হেলিয়ে দিয়েছিল যে। ভাবী জামাইয়ের সঙ্গে কি কি করতে হবে ভেবে আমার যে একটু টেনশন হয়নি, তা নয়। ভদকা টা আমি এমনিতেই পছন্দ করতাম, কিন্তু বিয়ের সময় আবার পাত্রীর বাবা হিসেবে নাচতে হবে না তো?? মেয়ে যখন ছোট ছিল,তখন ভিকি ডোনার নামে একটা সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। দিল্লি প্রবাসী বঙ্গললনার সঙ্গে পাঞ্জাব কা পুত্তরের বিয়েতে দুই পক্ষের অভিভাবকদের কি কি উচাটন হতে পারে,তার কিছু দৃশ্য মনে পড়ে গিয়েছিল!!
বাঙালির সঙ্গে গর্বাচভ পদবির কারো বিয়ে হলে??
আমি নিশ্চিন্ত ছিলাম,সব আমার স্ত্রী সামলে দেবে। যে ভারতনাট্যম জানে, সে ব্যালেও পারবে। আর ও কৈশোরে গণনাট্য সঙ্ঘতে ছিল, যে কোনো গণ নৃত্যে ওর অনুশীলন আছে। হলও তাই, নেচেকুঁদে ওই পাত্রীপক্ষের হয়ে সব দায়িত্ব সামলে দিল। শুধু বিয়ের রিসেপশনে সমবেত নৃত্য করতে গিয়ে আমার স্ত্রীর চশমাটা হারিয়ে গিয়েছিল। সে ভালই হয়েছিল, আমি কতবার ভদকার গ্লাস তুলে টোস্ট করছিলাম,ও দেখতে পায়নি। প্রথমে পদবি,তারপরে আলাপ হওয়ার দৌলতে বুঝে গিয়েছিলাম জামাই বাবাজীবনের দৌলতে আমার অনেক প্রাপ্তি হবে| হলোও তাই। এইরকম একটা ফুটফুটে নাতনি। ওর দিদিমাই নাম রাখল রেঁনেশা। আসলে ততদিনে আবার বাংলায় চাকরি বাকরি পাওয়া যাচ্ছিল বলে ওর দিদিমা এটাকেই নবজাগরণের সময় ভাবছিল। এমনকি সিঙ্গুরেও অন্য কোনো কারখানা হয়েছিল। সল্টলেকে বৃদ্ধবৃদ্ধাদের পাশাপাশি আবার তরুণ প্রজন্মও থাকতে শুরু করেছিল। এইসব দেখেই আদরের নাতনির নাম রাখা হযেছিল আর কি। ছোটবেলায় নাতনিটা অবশ্য খুব জ্বালাতো। ওর একেবারে ঠান্ডা লাগতো না বলে খাটে উঠেই আমার লেপটা ফেলে দেওয়াটা ছিল দস্তুর। তারপরে ফর্সা নাকটা আমার নাকে ঘষে ঘষে আদর চলত। সেই পুঁচকে টা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে….
সেই রেঁনেশা, সেই নাতনিই শেষপর্যন্ত আমার স্বপ্নপূরণ করল। একেবারে চাঁদ থেকে ফোন।
ওদের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাকি চাঁদে রিয়েল এস্টেট প্রোজক্টের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে নিয়ে গিয়েছে। ৭ দিনের ফিল্ড স্টাডি|নাতনিকে বিহারে পড়তে পাঠানো হবে শুনে আমি একটু আপত্তি করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কন্যা আমাকে এক ধমক দিয়েছিল। তুমি তো কিছুই খবর রাখো না দেখছি। আমি দেশে ফিরে নালন্দাতেই জয়েন করছি। ওখানেই পড়াবো। আর রেঁনেশাও ওখানে পড়বে। বিজ্ঞানটা নালন্দা তেই সবচেয়ে ভাল পড়নো হয়। আমাদের ছোটবেলায় কল্পবিজ্ঞানের বিখ্যাত লেখক অদ্রীশ বর্ধন একটা ধারাবাহিক লিখতেন। আমার মা সব জানে। এখন, মানে গত বছর কুড়ি ধরেই আমি সেটাকে বদলে নিয়ে বিড়বিড় করে বলি,আমার মেয়ে সব জানে। নাতনির চাঁদে সেলফি দেখে আমি যতটা খুশি, তার চাইতেও বেশি উত্তেজিত অন্য একটা খবর শুনে। ও নাকি চাঁদ থেকে চিনের প্রাচীর টা আর দেখতে পায়নি। ওকে নাকি মার্কিন আর রুশ স্পেস স্টেশনের অফিসাররা বলেছেন, তাঁদের তোলা ছবি অনুযায়ী চিনের প্রাচীরের ইঁট নাকি খুলে খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
কি কান্ড!!
মণিবন্ধে লাগানো যন্ত্রটা টিপে নাতনিকে ভিডিও কল করতে যাব,হঠাৎ দেখি কে যেন ধাক্কা দিচ্ছে। দেখি, মেয়ে ধাক্কা দিচ্ছে আর বলছে, নীচে ষষ্ঠীর পুজো শুরু হবে| ফ্ল্যাটের সবাই ডাকছে, তুমি যাবে না?? তাহলে কি আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম?? এখনও চিনের করোনাকেই তাড়ানো শেষ হয়নি?? এখনও ২০২০ তেই রয়েছি ? ঘুম থেকে উঠে তাড়াহুড়োতে লিফটের দিকে যাচ্ছি, আমার কলেজ পড়ুয়া মেয়েই আবার পিছন থেকে ডেকে বলল, কাগজে পড়লে যে নাসা নোকিয়া কে ১৪ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে চাঁদে ফোর জি নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য!!