নিউজ ডেস্ক, ১৪ অক্টোবর : উমা আসছেন মর্ত্যে, তাই সেজে উঠছে শহর৷ দেবীকে মৃন্ময়ী রুপ দিতে ব্যস্ততা তুঙ্গে কুমোরটুলি গুলোতে। বলা হয়, দেবী দুর্গার কাঠামো পুজো হয় রথযাত্রার দিন। এরপর আস্তে আস্তে শুরু হয় মায়ের মূর্তি গড়ার কাজ। মৃৎশিল্পীর নিপুণ হাতের জাদুতে ধীরে ধীরে প্রাণ পায় মহিষাসুরমর্দিনী।
তবে হিন্দু শাস্ত্র মতে, মা দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে কয়েকটি বিশেষ উপকরণ লাগে। যেগুলি ছাড়া প্রতিমা গড়া অসম্ভব। পবিত্রতার প্রতিমূর্তি ‘মা’ দুর্গার মূর্তি তৈরি করতে প্রথমেই লাগে বিশেষ কিছু জায়গার মাটি। রাজবাড়ির মাটি, চৌমাথার মাটি, গঙ্গার দুই তীরের মাটি ও ‘অশুদ্ধ’ পতিতালয়ের মাটি৷ এর সঙ্গে প্রয়োজন গাভীর মূত্র, গোবর, ধানের শিষ এবং পবিত্র গঙ্গার জল। শাস্ত্র মেনেই এই কাজ করে থাকেন শিল্পীরা। পুজোর বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই মৃৎশিল্পীরা বিভিন্নভাবে এই সমস্ত উপাদান জোগাড় করতে শুরু করেন। নিষিদ্ধ পল্লীতে থাকা বারাঙ্গনার ঘরের দরজার বাইরে থেকে মাটি সংগ্রহ করা হয় এবং এই আচার পালন করা হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকে। কিন্তু সমাজে যারা নিষিদ্ধ, অপাংক্তেয়, ‘অশুচি’ আর ‘অপবিত্র’ বলে গণ্য, জানেন কি কেন সেই অঞ্চলের মাটি ব্যবহার হয় মা দুর্গার প্রতিমা তৈরীতে!
কথিত আছে, যখন কোনো পুরুষ পতিতার বাড়ি গিয়ে যৌনাচার করে, তখন তার জীবনের সমস্ত পুন্য পতিতার বাড়ির মাটিতে স্থান পায় এবং এর পরিবর্তে সেই পুরুষ পতিতার ঘর থেকে পাপ বহন করে নিয়ে আসে। বহু পুরুষের পুন্যে তাই পতিতাদের বাড়ির মাটি পরিপূর্ণ থাকে বলে মনে করা হয়। এই কারণেই দুর্গা পুজোর মতো পবিত্র কাজে নিষিদ্ধপল্লীর মাটি ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও প্রচলিত আছে, মানুষের কামনা, বাসনা, লোভ, লালসা, কদর্যতাকে পতিতারা নিজের মধ্যে ধারণ করে নিজেকে অশুদ্ধ, অপবিত্র করে সমাজকে পবিত্র, পরিশুদ্ধ রাখে। সমাজের নৈতিকতাকে তারা একইভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই দেবী পুজোর মূর্তি তৈরিতে পতিতাপল্লীর মাটি গ্রহণ করা আদতে তাদেরই খানিক সম্মান জানানো। এছাড়াও হিন্দু পুরাণ মতে বলা হয়, পতিতাদের ক্ষমতা নাকি দেবতাদের থেকে অনেক বেশি। কারণ ঋষি বিশ্বামিত্র যখন ইন্দ্রত্ব লাভের আশায় কঠোর তপস্যায় ব্রতী হয়েছিলেন তখন তার ধ্যান ভঙ্গ করার জন্য দেবরাজ ইন্দ্র তাঁর দরবারের সব থেকে সুন্দরী নর্তকী মেনকাকে পাঠান ।
মেনকার নৃত্যের ফলে বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভঙ্গ হয় । তাই দেবরাজ ইন্দ্র সর্বশক্তিমান হয়েও যা পারেন নি, সামান্য নারী হয়ে মেনকা সেই কাজ সহজেই করে দেয়। সেই কারণেই শক্তি স্বরূপা, জগৎজননী মা দুর্গার মূর্তি তৈরিতে এই পতিতালয়ের মাটি এক অপরিহার্য উপাদান। শরৎকালে হয় দেবীর অকাল বোধন ৷ দুর্গা পুজোর সময় মা মহামায়া ৯টি রূপে পূজিত হন ৷ এই নবম রূপটিই আসলে পতিতালয়ের প্রতিনিধি ৷ আর সে কারণেই এই রীতির জন্ম হয়েছে বলে মনে করা হয়।