নিজস্ব সংবাদদাতা, রায়গঞ্জ, ৩১ অক্টোবর : অক্টোবর মাসের শেষে অর্থাৎ ৩১ তারিখ মৃত আত্মাদের স্মরণে পালিত হয় হ্যালোয়িন দিবস। বিগত কয়েক বছরে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের অলিগলির প্রায় সর্বত্রই হ্যালোইন দিবস তার বিস্তৃতি লাভ করেছে।
হ্যালোয়িন দিবসের ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখ মৃতের দেবতা সামান সব মৃত অাত্মাদের পৃথিবীতে আহ্বান জানান। ওইদিন উড়ন্ত ঝাড়ুতে করে হ্যালোইন ডাইনি উড়ে বেড়ায় অাকাশ জুড়ে। কখনওবা আবার সেই সবুজ খরখরে দেহের ডাইনি বুড়ি কড়া নাড়ে কোনো বাড়ির দরজায়। তবে উৎসব হিসেবে এর শুরুটা মধ্যযুগে। আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের উচ্চ ভূমি ও ফ্রান্সের উওর অংশ জুড়ে তখন কেল্টিক সভ্যতার বিস্তার। প্রাচীন কেল্টদের পালিত সামহাইন উৎসব থেকেই মূলত হ্যালোইন উৎসবের সূচনা। মূলত কেল্টদের বছর শুরু হতো ১লা নভেম্বর থেকে অর্থাৎ গ্রীষ্ম ও ফসলী মাসের শেষ ও শীতের শুরু। কেল্টদের বিশ্বাস ছিলো, নতুন বছর শুরু হওয়ার আগের রাতে জীবিত ও মৃতের দুনিয়ার মধ্যে যে ফারাক রয়েছে তা কেটে যায়। সেসময় মৃত আত্মা ও ভূত-প্রেত পৃথিবীতে আসে। তাই ৩১ অক্টোবর রাতে মৃত স্বজনদের অাত্মার সঙ্গে মিলনের কামনায় তারা সামহাইন উৎসব পালন করতো।
পরবর্তীতে এ ভূত উৎসব খ্রিস্টান ধর্মেরও তার প্রভাব ফেলে। বিশ্বব্যাপী ১লা নভেম্বরকে “অল সেইন্টস ডে” ঘোষণা করা হয় এবং এর আগের রাত অর্থাৎ ৩১ অক্টোবরকে “হ্যালোইন” হিসেবে পালন করা হয়। এরপর উনিশ শতকের দ্বিতীয়ভাগে আমেরিকায় জাতীয়ভাবে এই দিনটি পালন হওয়া শুরু হয়। ১৯২০ থেকে ১৯৫০ সালের ভেতর পুরো আমেরিকায় হ্যালোইন ডে’র আনুষ্ঠানিকতা বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে তা সরকারি ছুটির দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। এদিন সবাই ভূতের সাজে নিজেকে সাজায়। অনেকের মতে, এসময় সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে যায় বিদেহী আত্মারাও। এ দিনটিকে ঘিরে পুরো অক্টোবর মাসব্যাপী চলে আয়োজনের ঘনঘটা। কুমড়োর লণ্ঠন তৈরি, বাড়িঘর-রাজপথ সাজানো সহ চকলেট-পেস্ট্রি তৈরিতে ব্যস্ত থাকে আয়োজকরা।
আর এই বিদেশি রীতিকে আপন করে ৩১শে অক্টোবর উৎসবে মেতে উঠল রায়গঞ্জবাসী। এদিন শহরে বিভিন্ন স্কুল কলেজ পড়ুয়া সহ সঙ্গীত জগতের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ হ্যালোয়িন সাজে নিজেদের সাজিয়ে ঘুরে বেড়ায় রায়গঞ্জের রাজপথে। অন্যান্য বছর এইদিনটিতে রাস্তার সাধারণ মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও এবছর করোনার কারণে রাস্তাঘাট ছিল প্রায় জনমানবশূন্য, যার জেরে অন্যান্য বারের মতো সাধারণ মানুষের মধ্যে চকোলেট বিতরণ করে মিষ্টিমুখ না করাতে পারায় আক্ষেপ রয়েছে উদ্যোক্তাদের মধ্যে। সীমা ঘোষ, সায়নী দাস সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন এই উৎসবে।