শান্তনু চট্টোপাধ্যায় , রায়গঞ্জ : রুপকথার জগত থেকে সাহিত্যের বিভিন্ন ধারায় কেশরাজীর সৌন্দর্য অপার রহস্যময়তায় ভরা। রাজকুমারী রাপুনজেলের কেশসৌন্দর্য ও দুষ্টু ডাইনীবুড়ির প্রতিহিংসার গল্পতো আজও শিশু মনে আনন্দ জোগায়। এবারে এমনই এক গৃহবধূর দেখা মিললো রায়গঞ্জে। নাম প্রিয়াংকা দে। ক্যান্সার আক্রান্তদের মাথার চুল না থাকার যন্ত্রনা মেটাতে প্রিয়াঙ্কা দেবী তার নিজের মাথার চুল কেটে পাঠিয়ে দিয়েছে মুম্বাইয়ের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে। ক্যান্সার আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতেই এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন প্রিয়াংকা।
উল্লেখ্য রায়গঞ্জের মোহনবাটী এলাকার বাসিন্দা প্রিয়াংকা দে। খুব ছোটোবেলায় পরিচিত ক্যান্সার আক্রান্ত একজনের যন্ত্রনাদায়ক মানসিক ও শারীরিক পরিস্থিতি ভীষন ভাবে নাড়া দিয়েছিলো তাকে। এরপর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রিয়াঙ্কা জানতে পারেন ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য চুল দেওয়ার কথা। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি রস্যগঞ্জের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেন। প্রয়োজনীয় কথাবার্তা হওয়ার পর রবিবার রায়গঞ্জের একটি পার্লারে গিয়ে নিজের বারো ইঞ্চি চুল কেটে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হাতে তুলে দেন। প্রিয়াঙ্কা দেবী বলেন,” ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের ওষুধের প্রভাবে মাথার চুল উঠে যায়।
আরও পড়ুন : দৃষ্টি হীন দের জন্য ব্রেইল পদ্ধতি আবিষ্কারের অজানা তথ্য
একারনে তারা মানসিক অবসাদে ভোগেন। অনেকে অর্থের অভাবে পরচুলা কিনতে পারেন না। ক্যান্সার আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ” মন খারাপ লাগছে না? জিজ্ঞাসা করতেই প্রিয়াঙ্কা দেবী বলে ওঠেন,” ক্যান্সার আক্রান্তদের মুখে কিছুটা হাসি ফুটবে ভেবে ভালো লাগছে। আর আমি আমার এই চেহারাকেও ভালোভাবে ক্যারী করতে পারবো। ” অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্নধার কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন,” প্রিয়াংকাদেবীর এই ইচ্ছার কথা জানতে পেরে আমরা যোগাযোগ করি মুম্বাই এর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে। যারা ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য পরচুলা তৈরীর কাজ করে।
প্রিয়াঙ্কা দেবীর মাথার চুল আমরা ক্যুরিয়র করে মুম্বাই পাঠিয়ে দেবো। এরপর প্রাপ্তি স্বীকার করে তারা সার্টিফিকেট পাঠাবেন। খুব ভালো উদ্যোগ, আমরা চাই অন্যান্যরাও এই কাজে এগিয়ে আসুন।
শহরের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শুভেন্দু মুখার্জী বলেন,” বর্তমান সময়ে আমাদের বোধ,চেতনা,অভিজ্ঞান সব কিছু যেন হারিয়ে যাচ্ছে। সবটাই মেকি। এই পরিস্থিতিতে প্রিয়াঙ্কা দেবীর এই মানসিকতা আমাদের স্তিমিত বিবেক কে নাড়িয়ে দিয়ে যায়। ভালোবাসা,মানবিকতার সবকিছু যে শেষ হয়ে যায় নি-এই বিশ্বাস জেগে ওঠে।
” বহিরঙ্গের সৌন্দর্য নয়,অন্তরের সৌন্দর্য যে অনেক মহৎ,মানবিক প্রিয়াঙ্কা দেবীর এই উদ্যোগ তা আরো একবার প্রমান করলো। রাসায়নিক বিষে যন্ত্রনাক্লিষ্ট ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা আবারো হয়তো আয়না ধরবে মুখের সামনে,চুলের বাহারে মুখে ফুটে উঠবে একচিলতে হাসি।
আরও পড়ুন : এক দেশ এক ভোটের লক্ষ্যে উদ্যোগী কেন্দ্র