ডিজিটাল ডেস্কঃ কাশ্মীরের পহেলগামের অনন্তনাগ জেলার জঙ্গি হামলা আবার এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ‘দ্য রেজিস্টেন্ট ফ্রন্ট’—লস্কর-ই-তইবার ছায়া সংগঠন -এর সদস্যরা ২৬ জন নিরীহ পর্যটককে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করার আগে তাদের এক অদ্ভুত পরীক্ষা নেয়।
হামলাকারীরা তাঁদের শর্তসাপেক্ষে ইসলামিক মৌলিক বিশ্বাসের প্রাথমিক অংশ ‘কলমা’ পাঠ করার জন্য চাপ দেয়। যারা কলমা পাঠ করতে পারেননি, তাদের হত্যা করা হয়। অন্যদিকে, যারা এই কলমা পাঠ করতে সক্ষম হন, তারা বেঁচে যান। এছাড়াও গুলি করবার আগে নিরীহ পর্যটকদের জিজ্ঞাস করা হয়েছিল তারা হিন্দু না মুসলিম। ঘটনাটি মানবাধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে নতুন আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
কলমা কি?
ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের অংশ হিসেবে ‘কলমা’ বা ‘কালেমা’ ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক উপাদান। এটি ইসলামিক বিশ্বাসের একটি মৌলিক ঘোষণা, যেখানে বলা হয়:
-
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই)
-
মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রসুল)
আরও পড়ুনঃ বৃহস্পতি সন্ধ্যায় সর্বদলীয় বৈঠক ডাকল কেন্দ্র, চূড়ান্ত হবে সিদ্ধান্ত
কলমার ধর্মীয় গুরুত্ব:
১. বিশ্বাসের প্রকাশ: কলমা ইসলাম ধর্মের প্রথম স্তম্ভ, ‘শাহাদা’ বা বিশ্বাসের ঘোষণার অংশ। এটি বিশ্বাস এবং আনুগত্যের চূড়ান্ত সাক্ষর।
২. একত্ববাদ: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” মাধ্যমে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা হয়, যা ইসলামের মৌলিক পিলার।
৩. নবী মহম্মদের প্রতি বিশ্বাস: “মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ” কলমার মাধ্যমে মুসলিমরা নবী মহম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন।
৪. ইসলামের ভিত্তি: ইসলামের অনুশীলন এবং জীবন দর্শন এই কলমার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে।
পহেলগাম হামলার ঘটনাপ্রবাহ:
পহেলগামে জঙ্গিরা পর্যটকদের বন্দুকের নল দিয়ে কলমা পড়ানোর জন্য চাপ দেয়। যারা কলমা উচ্চারণ করতে পারেন, তারা বেঁচে যান, এবং যারা পারেন না, তাদের হত্যা করা হয়। দেবাশিস ভট্টাচার্য নামে এক অধ্যাপক কলমা পড়ে বেঁচে যান, যা ইসলামিক মৌলিক বিশ্বাসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে একটি বিরল ঘটনা। এর ফলে হামলার কৌশল এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের দ্বন্দ্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
কলমা ও তার সামাজিক প্রভাব:
-
বিশ্বাসের মুখোমুখি আসা: কলমা শুধু একটি ধর্মীয় বাক্য নয়, বরং এটি মুসলিম জীবনের একটি অংশ, যা তাদের নৈতিকতা, আচরণ, এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে।
-
ধর্মীয় স্বাধীনতা: এমন পরিস্থিতি তৈরি করা, যেখানে মানুষের জীবন কলমা পাঠের ওপর নির্ভর করে, তা যে মানুষের মৌলিক অধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী, তা সহজেই অনুমেয়।
কাশ্মীরের পহেলগামের এই হামলা, যেখানে কলমার মাধ্যমে জীবন রক্ষা পেয়েছে, সে সম্পর্কে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে। কলমা বা ধর্মীয় বিশ্বাসের পরীক্ষা নেয়ার প্রচেষ্টা মানবাধিকারের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং সবার ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আঘাত। এর মাধ্যমে বিশ্ব জুড়ে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার এবং মানবাধিকারের নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে।