নিজস্ব সংবাদদাতা , হেমতাবাদ , ০৮ মার্চ : স্নাতকোত্তর পাশ করে ভেবেছিলেন সরকারি দপ্তরে চাকুরি করবেন। বেশ কিছু পরীক্ষাও দিয়েছিলেন নানান সরকারি বিভাগে। আসে নি সাফল্য। হতদরিদ্র পরিবারের সংসারের হাল টানতে শেষমেশ অ্যাম্বুলেন্স চালকের কাজ বেছে নিলেন উত্তর দিনাজপুর জেলার দক্ষিন হেমতাবাদ গ্রামের মেয়ে সেলিনা বেগম।
প্রসূতি নারীদের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মাতৃযানে করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান হেমতাবাদ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিংবা রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এভাবেই দিনরাত অসহায় দরিদ্র প্রসূতি মহিলা থেকে সাধারন মানুষকে তাঁর অ্যাম্বুলেন্সে পৌঁছে দিচ্ছেন হাসপাতালগুলিতে। জানালেন বাংলার মেয়েদের বাংলার উন্নয়নের জন্যই যেকোনও কাজেই এগিয়ে আসতে হবে। সব মেয়েরাই যদি সমাজের সেবায় উন্নয়নমূলক কাজে এগিয়ে আসে তবে আরও উন্নয়ন হবে বাংলার। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিনে বাংলার মেয়েদের কাছে এমনই বার্তা দিলেন মহিলা অ্যাম্বুলেন্স চালক সেলিনা বেগমের।একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান সেলিনা বেগম।উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদ ব্লকের দক্ষিন হেমতাবাদ গ্রামের বাসিন্দা। বাবা কৃষিজীবী নাজিরুদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। মা সাজেদা বেগম ও দিদি কোহিনুর থাকেন বাড়িতেই।অভাবি সংসারে দুবেলা পেট পুরে ভাত জোটেনি কতদিন! হাজারো বাধার দুর্গম পাহাড় ঠেলে রায়গঞ্জ কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পেয়েছেন সেলিনা, কিন্তু বহু চেষ্টা করেও সরকারি চাকরি জোটেনি।সেলিনা জানান, তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে কর্মহীন হওয়ার পর থেকে সংসারে অনটন শুরু হয়। হাল ধরতে ২০১৮ সালের গোড়ায় তিনি অ্যাম্বুল্যান্স চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। মাসদুয়েক গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই হেমতাবাদ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অ্যাম্বুল্যান্স চালকের কাজে যোগ দেন।
সঠিক পরিষেবা দিতে ছুটে চলেছেন হেমতাবাদ ব্লকের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। সকাল থেকে রাত অসহায় প্রসূতি নারী থেকে গ্রামগঞ্জের দুস্থ অসুস্থ মানুষদের তাঁর অ্যাম্বুলেন্সে শুইয়ে নিয়ে যাচ্ছেন হেমতাবাদ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিংবা রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রায় আড়াই বছর ধরে মাতৃযান অ্যাম্বুলেন্সের চালক হিসেবে কাজ করে পরিষেবা দিয়ে চলেছেন হেমতাবাদ ব্লকের মানুষদের। তাঁর কথায় শুধু পুরুষরাই কেন নারীরাও যে কোনও অংশে পিছিয়ে নেই সেই জেদ আর মানসিকতা নিয়ে জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি। গর্ব বোধ করেন নিজেকে সমাজের মানুষের সেবায় নিয়োজিত করতে পেরে। প্রত্যন্ত গ্রামের কোনও অসহায় প্রসূতি নারী যখন প্রসব যন্ত্রনায় ছটফট করছেন আর ঠিক সেইসময় সেলিনা ওই প্রসূতির বাড়িতে পৌঁছে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতালে। সেই কাজ করতে গিয়ে এক অনাবিল আনন্দ উপভোগ করেন বাংলার এই দামাল মেয়ে।