নিজস্ব সংবাদদাতা , রায়গঞ্জ , ০২ অক্টোবর : কিংবদন্তি জননেতা তথা রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির পূর্ণাবয়ব মূর্তির উন্মোচন হলো গান্ধী জয়ন্তীতে। শুক্রবার রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড়ে এই পূর্ণাবয়ব মূর্তির উন্মোচন করেন রায়গঞ্জ বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক চিত্তরঞ্জন রায়, পৌরসভার চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে রায়গঞ্জ পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান অরিন্দম সরকার, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শুভেন্দু মুখার্জি সহ পুরসভার অন্যান্য কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রাবস্থা থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। ১৯৭০ সালে যুব কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। ১৯৭১ সালে প্রথম সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ। ওই বছরই লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা থেকে জয়ী হন প্রিয়রঞ্জন। ১৯৮৪ সালে ফের হাওড়া লোকসভা থেকেও জয়ী হয়েছিলে তিনি। যদিও ১৯৮৯ ও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে হাওড়া থেকেই পরাজিত হতে হয় এই নেতাকে। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত টানা জিতে এসেছেন প্রিয়রঞ্জন। ১৯৯৬ সালে হাওড়া থেকে লড়াই করেন। তবে, ১৯৯৯ ও ২০০৪ সালে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়াই করে জিতেছেন তিনি। শুধুমাত্র সাংসদ নন, কেন্দ্রে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলে ছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। ১৯৮৪ সালে তিনি প্রথমবার মন্ত্রী হন। বাণিজ্য বিষায়ক মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সে সময়ে দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ইউপিএ-১ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলান প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি।
ইন্দিরা গান্ধী ও পরবর্তীতে কংগ্রেস সভানেত্রী আস্থাভাজন হয়েছিলেন প্রিয়রঞ্জন। রাজনীতির পাশাপাশি ফুটবল বিশ্বেও যথেষ্ট খ্যাতি ছিল তাঁর। ফুটবলঅন্ত প্রাণ হিসেবে সুপরিচিত এই বঙ্গসন্তান দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সন্মানিক সভাপতির পদও অলঙ্কৃত করেছিলেন। তবে মন্ত্রী থাকাকালীনই ২০০৮ সালের ১২ ই অক্টোবর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেই থেকেই কোমায় আচ্ছন্ন ছিলেন প্রিয়রঞ্জন। গত ২০ শে নভেম্বর প্রয়াত হন কংগ্রেসের বর্ষীয়ান এই জননেতা। গভীর রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক বুদ্ধি সম্পন্ন এই ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানালো রায়গঞ্জ পৌরসভা। শুক্রবার রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড়ে এই পূর্ণাবয়ব মূর্তির উন্মোচন করেন রায়গঞ্জ বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক চিত্তরঞ্জন রায়, পৌরসভার চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে রায়গঞ্জ পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান অরিন্দম সরকার, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শুভেন্দু মুখার্জি সহ পুরসভার অন্যান্য কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন। সন্দীপবাবু জানিয়েছেন, প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি ছিলেন প্রকৃত জননেতা। রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন দেশ ও দশের সেবা তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। জনগণের সেবায় কাজ করতে করতেই তিনি আচমকা ২০০৮ সালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন কোমায় আচ্ছন্ন ছিলেন। সেই অবস্থাতেই ২০১৭ সালে বিদায় নেন তিনি। তাঁর স্মরণে এবং তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতেই পৌরসভার পক্ষ থেকে এই মূর্তি বসানো হলো। অন্যদিকে এদিন কংগ্রেস নেতৃত্বকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন না জানানোয় বিতর্ক দেখা দেয়। এপ্রসঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যান অরিন্দম বাবু বলেন, ” যারা প্রিয়বাবুকে কালো পতাকা দেখিয়ে গো ব্যাক শ্লোগান দিয়েছিলো,যারা প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সীর আদর্শ কে বিসর্জন দিয়ে সিপিএমের সঙ্গে সুবিধাবাদী জোট করে, তাদের অনুষ্ঠানে ডাকা হয় নি। তাতে মহান এই নেতাকে অসম্মান করা হতো।