নিউজ ডেস্ক , ২৬ নভেম্বর : আর মাসখানেক পরেই নতুন বছরকে স্বাগত জানাবেন বিশ্ববাসী অথচ তার আগে অভিশপ্ত ২০২০ বছর যেতে যেতেও একের পর এক অঘটন ঘটে চলেছে। পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছেন একের পর এক কিংবদন্তি মানুষজন। বছরের শেষ ক’দিনে যে আর কত দুঃসংবাদ দিতে থাকবে এই ২০২০, তার কোন ইয়াত্তা নেই। বুধবার চলে গেলেন বিশ্ব ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। শোকস্তব্ধ গোটা বিশ্ব।
৩০ শে অক্টোবর নিজের ৬০ তম জন্মদিন পালনের কয়েকদিন পরই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মারাদোনা। তাঁকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। প্রথমে আশঙ্কা করা হয়েছিল তিনি হয়ত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পরে তাঁর চিকিৎসক লিপোলদো লুকি জানিয়ে দেন তাঁকে মানসিক অবসাদ গ্রাস করেছে। যদিও মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের কারণে তাই অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগে ছিল গোটা বিশ্বের ফুটবল মহল। লা প্লাতার সেই হাসপাতালের বাইরে রোজ জড়ো হতেন অনুগামীরা। অবশেষে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে হাসপাতাল থেকে রিহ্যাব সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় দিয়েগোকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, অনেকটাই সুস্থ তিনি। তবে তাঁর অ্যালকোহল নির্ভরতা ছাড়ানো প্রয়োজন। রিহ্যাব থেকে বাড়িও ফিরেছিলেন বলে খবর। কিন্তু বুধবারই এল দুঃসংবাদ। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ী মহাতারকা নেই, এখনও যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না কেউ। আর্জেন্টিনার লানুসের বুয়েনোস আইরেসে ১৯৬০ সালের ৩০ শে অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। মারাদোনাই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি দুইবার স্থানান্তর ফি-র ক্ষেত্র বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন। নিজের পেশাদার চমকপ্রদ ক্যারিয়ারে মারাদোনা আর্জেন্টিনার জুনিয়র্স, বোকা জুনিয়র, বার্সেলোনা, নাপোলি, সেভিয়া, নিওয়ে লস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলেছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর্জেন্টিনার হয়ে ৯১ টি খেলায় ৩৪ টি গোল করেন। ঝুলিতে রয়েছে প্রচুর রেকর্ড। চারটি ফিফা বিশ্বকাপ খেলেছেন।
তার মধ্যে সেরা জয় ছিল ১৯৮৬ বিশ্বকাপ, যেখানে তিনি আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন এবং দলকে বিশ্বকাপ এনে দেন। প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় হিসেবে স্বর্ণগোলক জিতেন তিনি। প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ২–১ গোলে জয় লাভ করে। আর্জেন্টিনার পক্ষে উভয় গোলই করেন মারাদোনা। দুইটি গোলই ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে দুইটি ভিন্ন কারণে। প্রথম গোলটি ছিল হ্যান্ডবল যা “হ্যান্ড অফ গড” নামে খ্যাত। দ্বিতীয় গোলটি মারাদোনা প্রায় ৬০ মিটার দূর থেকে ড্রিবলিং করে পাঁচজন ইংরেজ ডিফেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে করেন। ২০০২ সালে ফিফাডটকম এর ভোটাররা গোলটিকে শতাব্দীর সেরা গোল হিসাবে নির্বাচিত করে। ১৯৯১ সালে ইতালিতে ড্রাগ টেস্টে কোকেইনের জন্য ধরা পড়ায় ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি। ১৯৯৪বিশ্বকাপে ইফিড্রিন টেস্টে ইতিবাচক ফলাফলের জন্য তাঁকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে তিনি তার কোকেইন নেশা ত্যাগ করেন। ২০০৮ সালের নভেম্বরে তাঁকে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১০ বিশ্বকাপের পর চুক্তি শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি আঠারো মাস এই দায়িত্বে বহাল ছিলেন। এহেন ফুটবল তারকার মৃত্যুতে শোকবিহ্বল গোটা ফুটবল বিশ্ব।
ARGENTINA: Football legend Maradona dead at 60 pic.twitter.com/OF5n07ksXf
— AFP Photo (@AFPphoto) November 25, 2020