নিউজ ডেস্ক, ১৫ অক্টোবর : আজ দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা ভারতরত্ন এপিজে আব্দুল কালামের জন্মদিন। ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর রামেশ্বরমের এক তামিল মুসলিম পরিবারে আবুল পাকির জয়নুলআবদিন আবদুল কালামের জন্ম। তাঁর বাবা জয়নুলআবদিন পেশায় নৌকাচালক ছিলেন, মা আশিয়াম্মা গৃহবধূ। শৈশব থেকেই চরম দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন কালাম সাহেব।
অতি অল্প বয়সে পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য রোজগারের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল তাঁকে। পেটের জন্য স্কুল ছুটি হওয়ার পর সংবাদপত্র বিক্রির কাজ করতেন তিনি। ছোটো বেলায় চরম আর্থিক অনটনের সঙ্গে লড়াই করে রমানাথপুরম শোয়ার্টজ ম্যাট্রিকুলেশন স্কুলের পাঠ শেষ করে তিরুচিরাপল্লির সেন্ট জোসেফ্স কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন আবদুল কালাম। এই কলেজ থেকে ১৯৫৪ সালে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হন তিনি। তবে ইচ্ছা থাকলেও অল্পের জন্য ভারতীয় বায়ুসেনার ফাইটার পাইলট হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় নি তাঁর। তবে এখানেই থেমে থাকেন নি তিনি।এরপর ১৯৬০ সালে ম্যাড্রাস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে এ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক হওয়ার পর তিনি ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এ বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য ছোট হেলিকপ্টারের নক্সাও তৈরি করে তিনি সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি বিক্রম সারাভাইয়ের অধীনে INCOSPAR কমিটির সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। এই মাঝে ১৯৬৯ সালে আবদুল কালামকে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র (ইসরো)-তে তুলে আনে ভারত সরকার। সেখানেও নিজের অসাধারণ কর্মদক্ষতা প্রমাণ করে ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উত্ক্ষেপণ যান প্রকল্প SLV-III-এর প্রোজেক্ট ডিরেক্টর হিসাবে সাফল্য লাভ করেন তিনি। তাঁরই নেতৃত্বে ১৯৮০ সালের জুলাই মাসে ভারতীয় উপগ্রহ রোহিনী-কে পৃথিবীর কক্ষপথের কাছাকাছি উপস্থাপিত করা হয়। DRDO এবং ইসরো-তে কর্তব্যরত অবস্থায় তিনি বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা ও সামরিক মিসাইল তৈরিতে প্রচুর অবদান রাখেন। ব্যালেস্টিক মিসাইল ও তার উৎক্ষেপণ যান প্রস্তুতিতে তাঁর অবদানের জন্য ‘মিসাইল ম্যান’ হিসাবে স্বীকৃতি পান।
১৯৯২ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালে ভারতের প্রথম সফল পরমাণু পরীক্ষা পোখরান-২ এর তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান কখনই ভুলতে পারবে না দেশবাসী। তাঁর কর্মজীবনের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ২০০২ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন এ পি জে আবদুল কালাম। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে তাঁর মনোনয়ন সমর্থন করে শাসক এনডিএ এবং কংগ্রেসও। প্রসঙ্গত, তিনিই দেশের প্রথম বৈজ্ঞানিক যিনি এই পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন। দেশের উন্নতির জন্য আমৃত্যু কাজ করে গেছেন কালাম সাহেব। পেয়েছেন অজস্র সম্মান। ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধি পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৮১ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ এবং ১৯৯০ সালে পদ্মবিভূষণে ভূষিত করে। ১৯৯৭ সালে দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্নে ভূষিত করা হয় তাঁকে। ২০০৫ সালে তাঁর সফরের সম্মানে ২৬ মে দিনটি বিজ্ঞান দিবস হিসেবে ঘোষণা করে সুইত্জারল্যান্ড। বৃহস্পতিবার তাঁর জন্মদিনে রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।