নিজস্ব সংবাদদাতা , মানিকচক , ২৭ নভেম্বর : বেশ কয়েকদিন অতিক্রান্ত হলেও এখনো মানিকচকের গঙ্গা নদীগর্ভে নিখোঁজ ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ জেলার সরজিত গ্রামের বাসিন্দা মন্টু শেখ। নিজের ট্রাকেই চালকের কাজ করতেন ওই যুবক। এখনো পর্যন্ত ৪ টি ট্রাক এবং দুজনের দেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও মন্টু শেখের কোন খোঁজ পাননি বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা।চারদিন ধরে প্রিয়জনের অপেক্ষায় নদীর ধারে বসে রয়েছে তার পরিবারবর্গ। যদিও প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, নদীতে তল্লাশি অভিযান জারি রয়েছে। খুব শীঘ্রই উদ্ধারকার্য শেষ করা সম্ভব হবে। ওই অসহায় পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন মানিকচক ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি ইমরান হোসেন। শুক্রবার থেকে ওই পরিবারের নদী পার্শ্ববর্তী এলাকায় আপাতত থাকার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ মানিকচক ঘাট পার্শ্ববর্তী গঙ্গা নদীতে ভেসেল দুর্ঘটনা হয়। ঝাড়খণ্ডের রাজমহল থেকে পণ্য ট্রাকবোঝাই ভেসেল আসছিল মালদা মানিকচকে। মালদহের মানিকচক ঘাটে পৌঁছানোর আগেই ভেসেলের একদিকে রেলিং ভেঙে যায়। সঙ্গে সঙ্গে একদিকে কাত হয়ে যায় ভেসেলটি। বেশিরভাগ ট্রাকেই পাথরবোঝাই ছিল। ঘটনার পর ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌড় চন্দ্র মন্ডল, জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র, জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া, সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, মানিকচকের কংগ্রেস বিধায়ক মোত্তাকিন আলম সহ অন্যান্যরা। রাতভর চলে নদীতে তল্লাশি অভিযান তবে অন্ধকারের কারণে দৃশ্যমানতা কম থাকায় সেভাবে তল্লাশি অভিযান চালানো যায়নি মঙ্গলবার সকাল থেকেই তল্লাশি অভিযান এর গতি আনা হয়। ডুবুরি তল্লাশিতে একটি ট্রাকের জলের তলায় সন্ধান পাওয়া যায় সকালবেলা। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা সকাল থেকে দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করেন ক্রেন দিয়ে সেটিকে জল থেকে তোলার। তবে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হন তারা। অবশেষে দুপুর নাগাদ ক্রেনের সাহায্যে একটি ট্রাককে জল থেকে তুলে আনেন তারা। দেখা যায় পুরো ট্রাকটি দুমড়ে-মুচড়ে রয়েছে। পরবর্তীতেও রাতভর মানিকচকের গঙ্গা নদীর ঘাটে তল্লাশি অভিযান জারি রেখেছিল বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা। বুধবার দুপুর নাগাদ অত্যাধুনিক ক্রেনের সাহায্যে নদীতে তল্লাশিতে আরো একটি ট্রাক উদ্ধার এর পাশাপাশি একটি দেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা। জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম সাইদুল শেখ।
ঝাড়খণ্ডের উদুয়া এলাকার বাসিন্দা সে। ট্রাকে সহকারীর কাজ করতো সে। এদিন ট্রাকের কেবিনের মধ্যে থেকে উদ্ধার হয় তার দেহ। অপরদিকে বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ নদীগর্ভ থেকে অপর একটি ট্রাককে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া অবস্থায় উদ্ধার করে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা। বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ নদীতে ভাসমান অবস্থায় একটি দেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই ব্যক্তির নাম তারানাথ যাদব। সেই লঞ্চে সে মিস্ত্রির কাজ করতো। এদিন ওই ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধারের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃতের ছেলে। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ নদী থেকে উদ্ধার করা হয় অপর একটি ট্রাক। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চারটি ট্রাক সহ একটি ট্রাকের কিছু যন্ত্রাংশ উদ্ধার হলেও জলের তলায় রয়েছে এখনো পাঁচটি ট্রাক। বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যরা এখনো নদীতে তল্লাশি অভিযান জারি রেখেছে। পাশাপাশি মন্টু শেখ বলে একজন ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছে। তার সন্ধানে নদীতে তল্লাশি অভিযান জারি রেখেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা। শুক্রবার সকাল থেকে তল্লাশি অভিযান চালানো হলেও এদিন কিছু উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি উদ্ধারকারী দল। নদীতে এখনো নিখোঁজ ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ জেলার বারারুয়া থানার সরজিৎ গ্রামের বাসিন্দা মন্টু শেখ। সে নিজের ট্রাকে নিজেই চালকের কাজ করতেন। অবিবাহিত মন্টু শেঠের পরিবারের রয়েছে ৫ দাদা ও ৬ দিদি। পরিবারের সদস্যরা ভাই মন্টু শেখের অপেক্ষায় প্রতিদিন নদীর পারে ঠায় হয়ে বসে থাকছেন। চাইছেন ছোট ভাইয়ের দেহ যেন উদ্ধার হয়। তবে সোমবারের ঘটনার পর পরিবারের সদস্যরা প্রতিদিন নদীর তীরে আসলেও এখনো পর্যন্ত প্রশাসন সেই পরিজনদের জন্য কোন রকম ব্যবস্থা করেননি বলে অভিযোগ। প্রতিদিন তল্লাশি অভিযান চালানোর সময় অধীর আগ্রহে নদীপাড়ে দিন কাটাচ্ছেন অপেক্ষায় পরিবারের সমস্ত সদস্যরা।
এ প্রসঙ্গে নদীতে নিখোঁজ মন্টু শেখের দাদা খোরশেদ শেখ ও দিদি আয়েশা বিবি অভিযোগ করে বলেন, ভাইয়ের দেহের অপেক্ষায় তারা প্রতিদিন সকালে নদী পার করে গঙ্গা নদীর পাড়ে এসে বসে থাকছেন। সারাদিন তল্লাশি অভিযান চলছে রাতে আবার ফিরে যাচ্ছেন কোনক্রমে সেই ওপারের বাড়িতে। গত চারদিন ধরে একই মত আসা যাওয়া থাকলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা করেনি তাদের জন্য। সারাদিন নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে নদী পারে দিন কাটছে তাদের। একটাই মাত্র চাওয়া পাওয়া দেহ যেন দ্রুত উদ্ধার করতে সক্ষম হয় প্রশাসন। যদিও গোটা ঘটনা নিয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। শুক্রবার থেকে ওই পরিবারের নদী পার্শ্ববর্তী এলাকায় আপাতত থাকার ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন মানিকচক ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি ইমরান হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, আজ থেকে ওই পরিবারের থাকার আপাতত ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে করে এই পরিবার থাকা খাওয়া থেকে শুরু করে সর্বত্র সুবিধা পায় সে ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের কাছে তাদের আর্জি জানানো হয়েছে। দ্রুত সমস্ত রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।