নিউজ ডেস্ক , ১১ আগস্ট : ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ফাঁসি হয়েছিল শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর। বাংলা তথা ভারত হারিয়েছিল এক আদন্ত নির্ভীক সন্তানকে। স্বাধীনতার স্বপ্নে যিনি মৃত্যুভয়কেও বশ করেছিলেন। ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত মেদিনীপুর শহরের কাছাকাছি (বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) কেশপুর থানার অন্তর্গত মৌবনী (হাবিবপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ছিলেন নাড়াজোলের তহসিলদার। তাঁর মার নাম লক্ষ্মীপ্রিয় দেবী। তিন কন্যার পর তিনি তাঁর মায়ের চতুর্থ সন্তান ছিলেন। তাঁর দুই পুত্র অকালে মৃত্যুবরণ করেন। অপর পুত্রের মৃত্যুর আশঙ্কায় তিনি তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তার পুত্রকে তার বড়ো দিদির কাছে তিন মুঠো খুদের (চালের খুদ) বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে শিশুটির নাম পরবর্তীকালে ক্ষুদিরাম রাখা হয়। ক্ষুদিরামের বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর তখন তিনি তার মাকে হারান। এক বছর পর তার পিতার মৃত্যু হয়। তখন তার বড়ো দিদি অপরূপা তাকে দাসপুর থানার এক গ্রামে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। অপরূপার স্বামী অমৃতলাল রায় ক্ষুদিরামকে তমলুকের হ্যামিল্টন হাই স্কুলে ভরতি করে দেন। ১৯০২ এবং ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে শ্রী অরবিন্দ এবং সিস্টার-নিবেদিতা মেদিনীপুর ভ্রমণ করেন। তারা স্বাধীনতার জন্যে জনসমক্ষে ধারাবাহিক বক্তব্য রাখেন এবং বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে গোপন অধিবেশন করেন, তখন কিশোর ছাত্র ক্ষুদিরাম এই সমস্ত বিপ্লবী আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। অনুপ্রাণিত হন। এরপর স্পষ্টতই তিনি অনুশীলন সমিতিতে যোগদান করেন এবং কলকাতায় বারীন্দ্র কুমার ঘোষের কর্মতৎপরতার সংস্পর্শে আসেন। তিনি ১৫ বছর বয়সেই অনুশীলন সমিতির একজন স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ওঠেন এবং ভারতে ব্রিটিশ শাসন বিরোধী পুস্তিকা বিতরণের অপরাধে গ্রেপ্তার হন। ১৬ বছর বয়সে ক্ষুদিরাম থানার কাছে বোমা মজুত করতে থাকেন এবং সরকারি আধিকারিকদেরকে আক্রমণের লক্ষ্য স্থির করেন। এরপর ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল বিহারের মুজফ্ফরপুরে ইওরোপিয়ান ক্লাবের সামনে বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে বোমা ছুড়ে হত্যা করতে গিয়েছিলেন অত্যাচারী ব্রিটিশ বিচারক ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড সাহেবকে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত যে গাড়িটিতে তাঁরা বোমা ছুড়েছিলেন তাতে ছিলেন না কিংসফোর্ড।
বদলে দুই ইংরেজ মহিলার মৃত্যু হয়। প্রফুল্ল চাকি আত্যহত্যা করলেও ক্ষুদিরাম ধরা পড়েছিলেন ব্রিটিশদের হাতে। বিচারে তাঁর ফাঁসির রায় দিয়েছিলেন ব্রিটিশ বিচারক মি. কর্নডফ। রায় ঘোষণার পর ক্ষুদিরামের মুখে ছিল হাসি। অল্প বয়সী ক্ষুদিরামকে বিচারক কর্নডফ প্রশ্ন করতে বাধ্য হয়েছিলেন, ফাঁসিতে যে মরতে হবে সেটা সে বুঝেছে তো? ফাঁসি হওয়ার সময় ক্ষুদিরামের বয়স ছিল ১৮ বছর, ৭ মাস এবং ১১ দিন, যেটা তাকে ভারতের কনিষ্ঠতম ভারতের বিপ্লবী অভিধায় অভিষিক্ত করেছিল। শোনা যায় যে দিন ফাঁসি দেওয়া হয় ক্ষুদিরাম বসুকে, সেই আগের রাতে ঘুমোন নি। দিদি অপরুপার কথা মনে করেছেন। জল খেয়েছেন অনেকবার। তার ইচ্ছে ফাঁসির সময় তাঁর দিদি যেন সেখানে উপস্থিত থাকেন। কিন্তু পরে তা আর সম্ভব হয় নি। ফাঁসির দিন কাকভোরে সেল থেকে ক্ষুদিরামকে নিয়ে যায় কারা রক্ষীরা। স্নান করে ধুতি পাঞ্জাবী পড়ে ইস্টমন্ত্র জপ করতে করতে একাই হাসি মুখে ফাঁসির মঞ্চে পৌঁছে যান তিনি৷ গেয়েছিলেন জীবনের জয়গান ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর এই গান ও তার আত্নবলিদানে তখন গরম হয়ে উঠেছিল বাংলা তথা দেশের আকাশ বাতাস৷ তার মৃত্যু ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলার হাজার হাজার যুবক৷ বুধবার দেশের সর্বকনিষ্ঠ শহিদ বিল্পবীর আত্মবলিদান দিবস উদযাপিত হল যথাযথ মর্যাদার সঙ্গেই।