শান্তনু চট্টোপাধ্যায় : “আমি শিল্পী নই নাট্যকার বা অন্য যে কোনও আখ্যা লোকে আমাকে দিতে পারে, তবে আমি মনে করি আমি প্রোপাগান্ডিস্ট, এটাই আমার মূল পরিচয়”। ১৯-শে আগষ্ট সেই বরেণ্য নাট্যকার, অভিনেতা,পরিচালক ও লেখক উৎপল দত্তের প্রয়ান দিবস। রাজনৈতিক দর্শনের দিক থেকে তিনি ছিলেন আদ্যপ্রান্ত বামপন্থী ও মার্কসবাদী। তাঁর আসল নাম উৎপলরঞ্জন দত্ত।
জন্ম অবিভক্ত বাংলার বরিশালে। তবে উৎপল বাবুর ছেলেবেলা কেটেছিলো বহরমপুরে। পরবর্তী কালে পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন কলকাতায়। ১৯৪৭ সালে কলেজে নিকোলাই গোগোলের “ডায়মন্ড কাটস ডায়মন্ড” -এ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নাট্যজগতে প্রবেশ তাঁর। মাত্র ১৮ বছর বয়সে নাট্যপ্রেমী বন্ধুদের নিয়ে তৈরী করেছিলেন নাট্যদল, ” দি এ্যামেচার শেক্সপিরিয়নস”। যদিও এর দুবছরের মধ্যেই দলের নাম পাল্টে রাখেন কিউব।
১৯৫০-এ ইউরোপ ও আমেরিকার গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আবারও দলের নাম বদলে করেন ‘লিটল থিয়েটার গ্রুপ’। ১৯৫২ সালে এই দলে যোগ দেন রবি ঘোষ, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতারা। মূলত রাজনৈতিক আদর্শের প্রতিফলন, মার্ক্সবাদ থেকে প্রণীত এক ধারা যেখানে মঞ্চ হয়ে ওঠে প্রতিবাদের মাধ্যম। তিনি মঞ্চের কারিগর ,বাংলা মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন। তিনি শেক্সপিয়ার আন্তর্জাতিক থিয়েটার কোম্পানির সাথে ভ্রমণ করেছেন বেশ কয়েকবার। তাকে গ্রূপ থিয়েটার অঙ্গনের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের অন্যতম হিসাবে গন্য করা হয়।
কৌতুক অভিনেতা হিসাবেও তার খ্যাতি রয়েছে। তিনি হিন্দি চলচ্চিত্র গুড্ডি, গোলমাল ও শওকিন অভিনয় করেছেন। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় হীরক রাজার দেশে, জয় বাবা ফেলুনাথ এবং আগন্তুক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। মননশীল ছবি ছাড়াও অজস্র বাণিজ্যিক বাংলা ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় তাঁর অভিনয় মন ছুঁয়েছে দর্শকদের।
উৎপল দত্ত অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র –
বিদ্যাসাগর (১৯৫০), মাইকেল মধুসূদন (১৯৫০), চৌরঙ্গী (১৯৬৮), ভুবন সোম (১৯৬৯), গুড্ডি (১৯৭১), ক্যালকাটা ৭১ (১৯৭১), শ্রীমান পৃথ্বীরাজ (১৯৭৩), ঠগিনী (১৯৭৪), যুক্তি, তক্কো আর গপ্পো (১৯৭৪), কোরাস (১৯৭৪), পালংক (১৯৭৫), অমানুষ (১৯৭৫), জয় বাবা ফেলুনাথ (১৯৭৮), গোলমাল (১৯৭৯), হীরক রাজার দেশে (১৯৮০), আঙ্গুর (১৯৮২), পার (১৯৮৪), পথভোলা (১৯৮৬), আজ কা রবিনহুড (১৯৮৭), আগন্তুক (১৯৯১), পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯৩) ইত্যাদি।
উৎপল দত্তের উল্লেখ্যোগ্য নাটকের তালিকাঃ
চলো ছায়ানট(১৯৫৮) ,অঙ্গার(১৯৫৯),ফেরারী ফৌজ(১৯৬১),কল্লোল(১৯৬৫),হিম্মৎবাই (১৯৬৬),রাইফেল (১৯৬৮),মানুষের অধিকার (১৯৬৮),জালিয়ানওয়ালাবাগ (১৯৬৯),সমাধান.অজেয় ভিয়েতনাম,লেনিনের ডাক,টিনের তলোয়ার,মুক্তিদীক্ষা,সূর্যশিকার,তিতুমির,অগ্নিশয্যা,পুলিশী নির্যাতন,কারাবাস, নাটকের উপর দুষ্কৃতি হামলা-এতসবের মধ্যেও নিজের লক্ষে অবিচল ছিলেন সাম্যবাদের পুরোহিত উৎপল দত্ত।
(তথ্য সহায়তা বাংলা উইকিপিডিয়া)