নিউজ ডেস্ক , ১১ই সেপ্টেম্বর : আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের( International Space Station) উদ্দেশ্যে নির্মিত একটি বাণিজ্যিক কার্গো মহাকাশযান ( cargo spacecraft) উড়বে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলা মহাকাশচারী কল্পনা চাওলার নামে।
নর্থরোপ গ্রুমম্যান (Northrop Grumman)সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন সিগনাস ক্যাপসুলটির ( Cygnus capsule) নাম “এসএস কল্পনা চাওলা” হবে যিনি ২০০৩ সালে মহাকাশ শাটল কলম্বিয়ায় (Columbia) নিজের ছয় জন ক্রুমেটদের সাথে মারা গিয়েছিলেন। NG 14 মিশনটির অন্তর্গত এই মহাকাশযানটি ২৯ শে সেপ্টেম্বর রাত ১০:২৭ মিনিটে ভার্জিনিয়ার (Virginia) মিড এ্যাটলান্টিক রিজিওনাল স্পেস পোর্ট ( Mid-Atlantic Regional Spaceport, MARS) NASA‘ র ওয়ালুপ ফ্লাইট ফ্যাসিলিটি ( Wallops Flight Facility) থেকে লঞ্চ করবে। তার দুই দিন পর মহাকাশ স্টেশনের সাথে সংযুক্ত হবে এটি।
কল্পনা চাওলা ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম মহিলা যিনি ইতিহাসে নিজের নাম প্রথম ভারতীয় মহিলা মহাকাশচারী হিসেবে লিখিয়েছেন। কল্পনা চাওলা ১৯৬২ সালের ১৭ মার্চ ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের কারনালে বসবাসকারী এক হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও অফিসিয়ালি কাজকর্মে ১ লা জুলাই ১৯৬১ তারিখটিকে ব্যবহার করতেন তিনি। কল্পনা তার মাধ্যমিক শিক্ষা ঠাকুর বালনিকেতন সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল কারনাল থেকে সম্পন্ন করেন। এর পরে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং(Aeronautical Engineering) নিয়ে স্নাতকের পাঠ সম্পন্ন করেন।
উচ্চশিক্ষার জন্যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং ১৯৮৪ সালে সেখানে ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন (University of Texas at Arlington) থেকে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষা সমাপ্ত করেন। পরবর্তীতে কল্পনা ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো অ্যাট বউল্ডের ( University of Colorado Boulder) থেকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রাপ্ত হন। এরপরে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার নাসা এমস রিসার্চ সেন্টারে ( NASA Ames Research Center) ফ্লুইড ডায়নামিক্স-(fluid dynamics, CFD) এর উপর গবেষণা পরিচালনা শুরু করে নাসায় নিজের ক্যারিয়ারের সূচনা করেন।
মার্কিন নাগরিক হওয়ার পরে, চাওলা “দ্য ফ্লাইং এসকারগোট (The flying Escargot ) হিসেবে নাসার 15th class of trainees- র সদস্য হিসাবে নাসার নভোচারী হওয়ার আবেদন করেছিলেন। ১৯৯৭ সালে, তিনি লঞ্চ হয়েছিলেন চতুর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাইক্রোগ্রাভিটি পেইলোড ( United States Microgravity Payload (USMP-4) এর ১৫ দিনের শাটল মিশন STS-87 তে।
চাওলার দ্বিতীয় স্পেসফ্লাইট STS-107 যার করুন পরিনতির সাক্ষী গোটা বিশ্ব। ১লা ফেব্রুয়ারী, ২০০৩-এ স্পেস শাটল কলম্বিয়া ১৬ দিন ধরে পরিচালনার পরে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়। একটি ছোট ফোম ওরবিটারের বাম পাখায় আটকে যাওয়ায় একটি গর্ত তৈরি করেছিল যা আগে সনাক্ত করা যায়নি। কলম্বিয়া পৃথিবীতে ফিরে আসার পথে গরম প্লাজমা পাখাগুলিতে প্রবেশ করে।
এর ফলে ছিন্নভিন্ন হয় ভেঙে মহাকাশযান টি। মৃত্যু হয় ৭ মহাকাশচারীর। নর্থরোপ গ্রুমম্যান বলেছেন, কল্পনা চাওলার মহাকাশ কর্মসূচিতে ভূমিকা ও চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকার স্বীকার করার মানসিকতা পরের প্রজন্ম ও তার সহযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করে। কলম্বিয়ায় তাদের গবেষণা মহাকাশচারীদের স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার বিষয়ে বুঝতে সহায়তা করেছিল। নর্থরোপ গ্রুমম্যান কল্পনা চাওলার তাই কল্পনা চাওলা গর্বিত করেছে সকলকে। NG -14 মিশন, S S Kalpana Chawla 8,000 lbs. (3,630 kilograms) cargo সরবরাহ করবে স্পেস স্টেশনকে।
এখানে Cygnus এর ওপরে গবেষণার মধ্যে দিয়ে জৈবিক ওষুধের পরীক্ষা করা হবে যা লিউকেমিয়ার চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও মহাকাশে উদ্ভিদের বৃদ্ধির গবেষণা করতে ও ভবিষ্যতের ফসলের মডেল হিসাবে মহাকাশে মূলা চাষ করা হবে। মহাকাশচারীদের জন্য স্পেসে ব্যবহারের উপযোগী একটি কমপ্যাক্ট টয়লেট তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়াও থাকছে 360 ডিগ্রি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ক্যামেরা যা স্পেসওয়াক এর ছবি তুলতে ব্যবহৃত হবে। কল্পনা চাওলার জীবনের স্বর্ণময় দিক ও তাঁর আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন ফের মহাকাশের পথে পা বাড়াবে এই মহাকাশ যানের মধ্য দিয়ে।