সাধারণতন্ত্র দিবস পালন

প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি দিনটিকে সাধারণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এবছর ২০২৫ সালে ৭৬ তম প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত করা হল। উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের স্টেডিয়াম ময়দানে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রস্তুতি বহু আগে থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে। রবিবার ২৬ জানুয়ারি সাড়ম্বরে পালিত হবে দেশের ৭৬ তম সাধারণতন্ত্র দিবস। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি এই দিনটিতেই ভারতে সংবিধান গৃহীত হয়। এই দিন থেকেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পায় ভারত। ভারত ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়ার পর, ডক্টর বি আর আম্বেদকরের সভাপতিত্বে একটি দল একটি সংবিধান রচনার প্রস্তাব পেশ করেছিল। দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে ২ বছর পর ২৪ জানুয়ারী, ১৯৫০-এই সংবিধান গৃহীত হয়। ওই সংবিধান কোনো সাধারণ দলিল ছিল না। এটি ছিল নতুন প্রজাতন্ত্রের প্রাণ, একটি গণতান্ত্রিক, সমতাবাদী এবং ন্যায়পরায়ণ সমাজের কাঠামো। সংবিধান গৃহীত হওয়ার দুই দিন পরে সংবিধানটি ২৬ জানুয়ারী, ১৯৫০ সালে কার্যকর করা হয়, গড়ে ওঠে সার্বভৌম গণ-প্রজাতান্ত্রিক ভারত।
কবে প্রস্তাব সংগৃহিত হয়?

প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি ভারতে প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করা হয়। এবছরেও তাঁর অন্যথা হয়নি। ইংরেজ শাসন থেকে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা পেয়েছিল ভারত। প্রতি বছর ১৫ অগস্ট দিনটি স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়। কিন্তু সে সময় ভারতের নিজস্ব কোনও সংবিধান না থাকায় ব্রিটিশ সরকারের ১৯৩৫ সালের ‘গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট’-এর সংশোধিত সংস্করণ অনুযায়ী স্বাধীন ভারত শাসন করা হত। এরপর ভারতের একটি নিজস্ব সংবিধানের প্রয়োজন দেখা দিতে শুরু করে। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরেই সংবিধান সভার কথা ঘোষণা করা হয়। ড. বি আর আম্বেদকর, জওহরলাল নেহরু, ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ, সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল, মৌলানা আবুল কালাম আজাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের নিয়ে এক সংবিধান সভা তৈরি হয়। দিনটা ছিল ১৯৪৭ সালের ২৯ আগস্ট। সেই দিনে আম্বেদকরের নেতৃত্বে ভারতে স্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি খসড়া কমিটি গড়ে তোলা হয়। ১৯৪৭ সালের ৪ নভেম্বর খসড়া কমিটি সংবিধান সভায় ভারতীয় সংবিধানের খসড়া জমা দেয়। এরপর পার হয়ে যায় দু’বছরেরও বেশি সময়। জনগণের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা ও নানা চিন্তাভাবনার পরে প্রস্তাবিত সংবিধানে কিছু সংশোধন, সংযোজন ও পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর সংবিধান সভায় শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সংবিধানের খসড়া গৃহীত হয়। সভার ২৮৪ জন সদস্য ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের দু’টি হস্তলিখিত কপিতে সই করেন। এর একটি ইংরেজিতে ছিল ও অন্যটি হিন্দিতে।এর ঠিক দু’দিন পর ২৬ জানুয়ারি সকাল ১০টা ১৮ মিনিটে ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ভারত। ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ হয়েছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনিই উত্তোলন করেন দেশের পতাকা।
বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান এবং কুচকাওয়াজ

গোটা দেশে ২৬ জানুয়ারি দিনটিতে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান এবং কুচকাওয়াজের মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতি, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস উদযাপিত করা হয়। নয়াদিল্লি থেকে কলকাতা, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, দেশের নানা প্রান্তে সাধারণতন্ত্র দিবসকে ঘিরে সেজে ওঠে সাজ সাজ রব । এই দিনটিকে জাতীর জনক মহাত্মা গান্ধী নাম দিয়েছিলেন, ‘স্বতন্ত্রতা সংকল্প দিবস’। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে ১৯২৯ সালের বর্ষশেষে পূর্ণ স্বরাজ আনার শপথের পরই ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যদিও ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর সেই দিনই স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পরিচিতি পেল ভারত। এরপর ২৬ জানুয়ারিকে সাধারণতন্ত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হল।