নিউজ ডেস্ক , ২৪ ডিসেম্বর : ২৫ ডিসেম্বর দিনটি খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন বা ক্রিসমাস ডে হলেও বর্তমানে এদিনের উৎসবে মেতে ওঠেন সর্বধর্মের মানুষ। এই দিনটি মূলত যিশুর জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে, এই দিনই যিশু জন্মগ্রহণ করেন। তাঁরা মনে করেন, ঈশ্বরের পুত্ররূপে যিশু এসেছিলেন এই মর্ত্যে। আর৷ বড়দিনের অন্যতম বড় আকর্ষণ হলো স্যান্তা ক্লজ।
জিংগেল বেলস, জিংগেল বেলস, জিংগেল অল দ্য ওয়ে ওহ্ হোয়াট ফান ইট ইজ টু রাইড এ ওয়ান হর্স ওপেন স্লে….
গান গাইতে গাইতে আসেন এক বৃদ্ধ। সাদা ধবধবে গোঁফ দাড়ি, পড়নে ফারওয়ালা লাল টুকটুকে গাউন ও টুপি পরে বলগা হরিণের স্লেজে চেপে আসেন থলে ভর্তি উপহার নিয়ে। ২৪শে ডিসেম্বর রাতে কিংবা বড়দিনের প্রথম প্রহরে বাচ্চাদের দিয়ে যান তাদের পছন্দসই উপহার। তিনি আর কেও নন, তিনি সকলের প্রিয় স্যান্টা ক্লজ। কিন্তু রহস্য হলো কে এই স্যান্তা? কোথা থেকে এলেন, কেমন করে তাঁর আবির্ভাব, কেনই বা ঘুরে ঘুরে বাচ্চাদের মাঝে উপহার বিতরণ করেন? ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, আজ যাকে আমরা সান্তা ক্লজ নামে চিনি, তার পেছনে রয়েছে লম্বা কাহিনী। ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের দিকে লাল জামা, টুপি ও সাদা চুল-দাড়িওয়ালা লোকটির ইতিহাসের সন্ধান মেলে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির কিংবদন্তি চরিত্রটি আসলে ছিলেন সেন্ট নিকোলাস নামের একজন ধর্মযাজক। এশিয়ার মাইনর বর্তমান তুরস্কের পাতারা নামক অঞ্চলে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। এ ছাড়াও সান্তার নিবাস নিয়ে ও তার কাজ ও কাহিনির নিয়েও রয়েছে বহু তথ্য। কোথাও তাকে উত্তর মেরুর বাসিন্দা আবার কোথাও তাকে ফিনল্যান্ডের ল্যাম্পল্যান্ড প্রদেশের বলেও ব্যখ্যা করা হয়েছে। তিনি খুবই মহৎ ও দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। দান-দক্ষিণায় তাঁর বেশ সুনাম ছিল চারদিকে। তিনি তাঁর সম্পদ অসহায় গরিব মানুষের সাহায্যে ব্যয় করতেন। তাঁর এই মহানুভবতার জন্য তিনি মানুষের কাছে অতিপ্রিয় ছিলেন। ধারণা করা হয়, একবার দাসী হিসেবে বিক্রি হওয়া তিনটি মেয়েকে রক্ষা করে তাদের বিয়ে ও যৌতুক বাবদ সব খরচ তিনি বহন করেন। তাঁর এই মানবতার জন্য তিনি মানবরক্ষক হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। শুধু তাই নয়, প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী নিকোলাস ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ও মধ্যরাতে ছেলেমেয়েদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে উপহার দিতেন।
তবে, এখন আমরা রঙিন পোশাক পরা যে সান্তাক্লজকে দেখি, জানা যায়, সান্তাক্লজের পোশাকের রং প্রথমে লাল ছিল না। ১৯৩০ সালে একটি সফ্ট ড্রিঙ্কসের বিজ্ঞাপনের কাজে সান্তাক্লজের ছবি ব্যবহার করা হয়। তখনই সান্তাক্লজের পোশাকের রং লাল-সাদা করা হয়। অন্যদিকে, ১৮২৩ সালে ক্রিসমাস ডে উপলক্ষে আমেরিকার বিখ্যাত লেখক ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুরের লেখা ‘A visit from St. Nicholas’ কবিতায় এই পোশাকের উদ্ভাবন হয় বলেও জানা যায়।
আজকের সান্তা ক্লজের রঙিন পোশাকের সূচনা হয় এই কবিতা থেকেই, যা বিভিন্ন পরিক্রমায় আজকের এই রূপ লাভ করেছে। এক স্যান্টা আটটি হরিণটানা গাড়িতে করে উড়ে উড়ে বাচ্চাদের উপহার দিচ্ছেন—এমন চিত্রই ফুটে ওঠে এই কবিতায়। এভাবেই সারা বিশ্বে ক্রিসমাস ডের আগের রাতে বাচ্চাদের বাসায় বাসায় উপহার দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়। আর বাচ্চারা বিশ্বাস করে, স্যান্টা ক্লজ জাদু জানেন। জাদু দিয়ে উড়ে এসে তাদের নানা রকম উপহার দিয়ে যায়। ক্রিসমাসের জনপ্রিয় গান জিঙ্গেল বেল সকলেই জানে। কিন্তু জানেন কী, ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে বানানো হয়নি সেই গানটি। আসলে এই গানটি ছিল ‘ওয়ান হর্স ওপেন স্লেজ’। থ্যাংকস গিভিং-এর জন্য এটি গাওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই গানটিও খুবই জনপ্রিয় হয়ে যায়। তখনই এর কথা বদলে জিঙ্গেল বেল গানটির কথা বসানো হয়। এই গানটিকে ক্রিসমাসের আনুষ্ঠানিক গান হিসাবে বেছে নেওয়া হয় এরপরই।