নিউজ ডেস্ক, ১৭ এপ্রিল : দেশজুড়ে পুনরায় আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এরই মাঝে ল্যানসেটের রিপোর্ট কপালে ভাঁজ ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের।
এতদিন দাবী করা হচ্ছিল কোভিড-১৯-এর জন্য দায়ী সার্স-কোভ-২ ভাইরাস বা করোনার জীবাণু বায়ুবাহিত নয়। তবে সেই দাবি নস্যাৎ করে দিলো আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘ল্যানসেট’। সম্প্রতি জার্নালটির প্রকাশিত এক গবেষণামূলক রিপোর্টে দাবি করা হয়, করোনার জীবাণু বায়ুবাহিত। তাই বাতাসেই ভেসে বেড়াতে পারে কোভ ২ সার্স ভাইরাস। আর এই রিপোর্ট বেরোতেই ঘুম ছুটেছে বিশেষজ্ঞ মহলের।এই দাবিকে আরও প্রকট করার জন্য ওই ৬ বৈজ্ঞানিক ১০টি বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তিও দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা অবিলম্বে কোভিড-১৯ রোগের সুরক্ষাবিধিতে পরিবর্তন আনার কথা জানিয়েছেন।বিভিন্ন ধরনের পরিবেশে কোভিডের সংক্রমণ পরীক্ষা করে তাঁদের সিদ্ধান্ত, করোনার জীবাণু ছড়ানোর জন্য শুধু বাতাসই যথেষ্ট। ভাসমান জলকণা বা ড্রপলেটস-এর মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পাননি তাঁরা।গবেষকরা তাঁদের রিপোর্টে আরও লিখেছেন, অন্তত ৩৩ থেকে ৫৯ শতাংশ ক্ষেত্রে হাঁচি বা কাশির মত উপসর্গ ছাড়াই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এ পর্যন্ত যত সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তার বেশিরভাগই বাড়িতে বসে থাকা মানুষদেরই হয়েছে। এমনকি হাসপাতালে পিপিই কিট পরে স্বাস্থ্য সহয়োগিতা দেওয়ার পরেও তাঁদের মধ্যে যে হারে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তা ভাইরাস বায়ুবাহিত না হলে সম্ভবই ছিল না বলে দাবি গবেষকদের।দেখে নেওয়া যাক সেই ১০টি কারণ, যার উপর ভিত্তি করে গবেষকরা এই ভাইরাসকে বায়ুবাহিত বলছেন-
১) গবেষকরা জানান ৩৩ শতাংশ থেকে ৫৯ শতাংশ কেসে উপসর্গহীন কিংবা প্রাথমিক উপসর্গ রয়েছে সেই সকল কোভিড আক্রান্তদের থেকেই সংক্রমণ হয়েছে। যাদের হাঁচি কিংবা কাশিও হয়নি। এক্ষেত্রে প্রমাণ অনেকটাই স্পষ্ট। ২) যেভাবে SARS-CoV-2 ‘সুপারস্প্রেডার’ হয়ে উঠছে তা থেকে এটা স্পষ্ট এই ভাইরাস মিউকাসবাহিত কেবল নয়। মানুষের আচরণ, কথা বলার মাধ্যম, বদ্ধ ঘর থেকে ভাইরাসের সংক্রমণের প্রাথমিক প্রমাণ। ৩) প্রকাশিত পেপারে বলা হয়েছে, এক ঘরে না থাকলেও কোয়ারেন্টাইন হোটেলে পাশাপাশি ঘরে থেকেও করোনা সংক্রমিত হয়েছে। অর্থাৎ লং-রেঞ্জ ট্রান্সমিশন হচ্ছে। যা কেবল বায়ুবাহিত হলেই সম্ভব। ৪) বাইরে যারা বেরোচ্ছেন তাদের থেকে বদ্ধ ঘরে যারা রয়েছে তাদের SARS-CoV-2 আক্রমণ বেশি করেছে। ৫। জার্নালে এও বলা হয় স্বাস্থ্যকর্মীরা পিপিই কিট পরে থাকলেও তারা আক্রান্ত হচ্ছে এই ভাইরাসের ‘নসোকমিকাল ইনফেকশনের’ মাধ্যমে। ৬) আরও দেখা গিয়েছে যে হাসপাতালে এয়ার ফিল্টার মেশিন কিংবা পাইপলাইনেও এর অস্তিত্ব মিলেছে। ৭) পরীক্ষাগারে দেখা গিয়েছে SARS-CoV-2 ভাইরাস বাতাসে ৩ ঘন্টা পর্যন্ত জীবিত থাকছে। ৮।খাঁচায় বন্দি এমন প্রাণীদের বায়ুথলিতে এই ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে, যা থেকে বায়ুবাহিত তথ্যর প্রমাণ পাওয়া যায়। ৯। SARS-CoV-2 ভাইরাস বায়ুবাহিত নয় এমন কোনও জোরালো প্রমাণ বৈজ্ঞানিকভাবে পাওয়া যায়নি ১০। এমনকী এই ভাইরাসের ফুসফুসে আক্রমণের পথ থেকেও এর বায়ুবাহিত তথ্যর যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।গবেষকরা আরও দাবি করেছেন, ল্যাবরেটরিতে করোনা ভাইরাস উড়তেও দেখা গিয়েছে। আর বায়ুবাহিত অবস্থায় তার সংক্রমণের ক্ষমতাও ছিল ঘণ্টা তিনেকের মত। এই অবস্থায় কোভিড প্রোটোকল পরিবর্তন করার কথাও বলা হয়েছে ল্য়ানসেটের এই নয়া রিপোর্টে। পরিস্থাতি এনও হতে পারে যে, বাড়িতেও মাস্ক পরে থাকার পরামর্ষ দিতে পারেন চিকিৎসকেরা।