নিউজ ডেস্ক , ঋজু রায় চৌধুরী : সামনে আসছে বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। যদিও এবছর করোনা আবহে পুজো কীভাবে হবে, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। তবু বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন। আর উৎসব অনুষ্ঠান, বিয়ে সবেতেই মহিলাদের শাড়ি কেনা টা চাই। আর শাড়ি কিনতে গিয়ে তাদের প্রথম পছন্দ সিল্ক ও হ্যান্ডলুম। নামী-দামি দোকান-বুটিক ঘুরে, কর্তাকে সঙ্গে করে, বিস্তর দরদাম করে, দুখানা শাড়ি বগলদাবা করে হাসিমুখে বাড়ি ফিরে শান্তি! কিন্তু সত্যিই কি আপনি খাঁটি সিল্ক বা হ্যান্ডলুম কিনছেন? সোনার গয়না কেনার সময় হলমার্ক দেখে কিনছেন, আর সিল্ক বা হ্যান্ডলুমের বেলায়? এভাবেই না জেনে বা অসচেতনতার কারণে দিনের পর দিন প্রতারিত হচ্ছেন বহু মানুষ। কিন্তু জানেন কী, ভারত সরকার বিশুদ্ধ রেশম বস্ত্রের জন্য ‘সিল্কমার্ক’ এবং হ্যান্ডলুম কাপড়ের জন্য ‘হ্যান্ডলুম মার্ক ‘ চালু করেছে!
২০০৪ সাল থেকে ভারত সরকারের রেশম ও বস্ত্র বয়ন দপ্তর এই দুটি চিহ্নের সরকারি ভাবে অবতরণ করেছে, যাতে দেশবাসী সিল্ক ও হ্যান্ডলুম কিনতে প্রতারিত না হন। সিল্ক বা রেশম হল বিশেষ এক গুটিপোকার বাইরের আবরণী থেকে নির্গত এক তন্তু। যা টোকলি ও চড়কায় সুতো কেটে তৈরি হয়। তারপর সেই সুতো থেকে তৈরি হয় রেশমি কাপড় বা সিল্ক শাড়ি। আমাদের রাজ্যে মালদা, মুর্শিদাবাদ, বিষ্ণুপুর সিল্কের জন্য বিখ্যাত। এই সিল্ক সুতোর কাউন্ট যে শাড়িতে যত বেশি হবে, তার দামও তত বাড়বে। পাশাপাশি আসাম, ওড়িশা, ছত্তিসগড়, ভাগলপুর, চেন্নাই, পছমপল্লী এসব জায়গা সিল্ক বস্ত্র উৎপাদন করে দেশের নাম উজ্জ্বল করছে। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। বিক্রেতা চাইছে বেশি বিক্রি, আর ক্রেতা চাইছে কম জলের দরে ফলের রস। ফলে দুইয়ের মেলবন্ধনে জন্ম নেয় ভেজাল। বিভিন্ন পলিমার, সিন্থেটিক সুতো ভেজাল দেওয়া হচ্ছে সিল্কে। যা একজন সাধারণ ক্রেতার পক্ষে বোঝা খুবই দুষ্কর। বড়বড় দোকান, মল, বুটিকে বিক্রি হচ্ছে মেশিনজাত এই সব নকল সিল্ক, যার ফলে আসল সিল্ক উৎপাদনকারী তাঁতীরা ক্ষতির মুখে পড়ছে। বাধ্য হচ্ছে নকল জিনিস তৈরি করতে। এ তো গেল সিল্ক, হ্যান্ডলুমের অবস্থাও শোচনীয়। বাজারে হ্যান্ডলুম শাড়ি বলতে আমরা যা দেখি, তার বেশিরভাগ প্রযুক্তিগত বা মেশিনজাত। আসল হ্যান্ডলুম শাড়ির সুতো কাটা থেকে শাড়ি তৈরি, পুরোটাই হাতের কাজ।
যা শ্রমসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ। কিন্তু মুনাফা লাভের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে মেশিনেই তৈরি হচ্ছে বাজারের হ্যান্ডলুম শাড়ি। ফলে এখানেও ব্রাত্য হচ্ছেন তাঁতীরাই। ভারত সরকারের উদ্যোগে হ্যান্ডলুম মার্ক এর কারণে সঠিক হ্যান্ডলুম শাড়ি কিনতে গিয়ে প্রতারিত হবার আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু এই চিহ্ন কী সবাই ব্যবহার করতে পারবে? একেবারেই না। ভারত সরকারের রেশম ও বস্ত্র বয়ন দপ্তর থেকে রেজিষ্ট্রেশন করিয়ে আনতে হয় বিক্রেতাকে। প্রতিটি শাড়ির মার্ক বা চিহ্ন এক হলেও কোড নম্বর আলাদা হবে। ঠিক যেমন সোনার গয়নাতে হলমার্কে থাকে।
তাই এখন থেকে সিল্ক/হ্যান্ডলুম শাড়ি কেনার সময়, সে যত বড় দোকান বা বুটিক হোক না কেন, সিল্কমার্ক ও হ্যান্ডলুম মার্ক দেখেই কিনুন। আপনার কষ্টার্জিত টাকায় জিনিস কিনবেন, আর যাচাই করবেন না?
আরও পড়ুন……….সুশান্তের মৃত্যুর রহস্য ভেদে বিশেষজ্ঞের বিশেষ দল